ঢাকা বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

কলেজে গ্রন্থাগার বিমুখতা

অন্যদৃষ্টি

কলেজে গ্রন্থাগার বিমুখতা

.

মুহাম্মদ ইয়াসীন ইবনে মাসুদ

প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৩ | ২২:৫১

বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা নেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কলেজ থেকে। মানের দিক দিয়ে এসব কলেজের স্নাতকরা বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের তুলনায় পিছিয়ে থাকে। এর জন্য যে কারণগুলো দায়ী, সেগুলোর মধ্যে একটি হলো কলেজের শিক্ষার্থীদের গ্রন্থাগার বিমুখতা। 

সাধারণত শ্রেণি কার্যক্রমে অংশগ্রহণের পর অর্জিত জ্ঞানকে পরিপূর্ণতা দিতে, বিভিন্ন অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করতে ও গবেষণাসংক্রান্ত পড়ালেখা করার জন্য গ্রন্থাগারের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু পৃথিবীর তাবৎ বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় যেভাবে গ্রন্থাগারগুলোর পরিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোয় এর সিকিভাগও হয় না। বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা গ্রন্থাগার খোলা থাকে। ফলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসের ফাঁকে তো বটেই, ক্লাসের পর বিকেলে বা রাতেও তাদের সুবিধাজনক সময়ে গ্রন্থাগারে গিয়ে পাঠ কার্যক্রম চালাতে পারে। আমাদের দেশের কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েও রাতের একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা গ্রন্থাগার ব্যবহারের সুযোগ পায়। উপরন্তু এ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতেও পাঠকক্ষ আছে, যা সারারাত ব্যবহার করা যায়। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি কলেজগুলোয় গ্রন্থাগারের ব্যবহার খুবই অপর্যাপ্ত। অনেক ক্ষেত্রে দৈনিক পত্রিকা পড়ার মধ্যেই তা সীমাবদ্ধ। 

ওই গ্রন্থাগারগুলোকে ফলদায়ক না করতে পারার প্রথম কারণ হলো, এসব কলেজে শিক্ষার্থীরা যতক্ষণ শ্রেণি কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকে ততক্ষণই গ্রন্থাগার খোলা থাকে। শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গ্রন্থাগারও বন্ধ হয়ে যায়। গ্রন্থাগারগুলোয় রিসোর্সেরও অভাব আছে। এসব গ্রন্থাগারে সাধারণত সর্বশেষ সংস্করণের পুস্তকাদি ও জার্নালগুলো পাওয়া যায় না। বাজেট ঘাটতির সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অদক্ষতা ও অযোগ্যতাও এর জন্য দায়ী। বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে ও অপ্রয়োজনীয় বই কিনে তাক ভরে রাখা হয়। অধিকাংশ গ্রন্থাগারে উপযুক্ত পরিবেশও অনুপস্থিত। বসার ব্যবস্থা পরিকল্পিত না হওয়ার কারণে একক পাঠের মতো গ্রুপ রিডিংও বাধাগ্রস্ত হয়; ফলে উভয়পক্ষই গ্রন্থাগারে যাওয়া বন্ধ করে দেয় শেষ পর্যন্ত। এ সমস্যা দূর করার জন্য গ্রন্থাগারগুলোয় কাচের দেয়াল দিয়ে আলাদা করে একটি নীরব একক পাঠ এলাকা এবং একটি দলবদ্ধ পাঠ এলাকা তৈরি করা যেতে পারে। পাঠকদের বসার জন্য আরামদায়ক আসবাবের ব্যবস্থা করাও জরুরি। পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবাহও নিশ্চিত করতে হবে। এভাবে উন্নত পরিবেশ নিশ্চিত হলে শিক্ষার্থীরা গ্রন্থাগারে আসতে অনুপ্রাণিত হবে।

গ্রন্থাগারে পড়ার গুরুত্ব এবং গ্রন্থাগারে প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে না জানার কারণেও শিক্ষার্থীরা গ্রন্থাগারমুখী হয় না। তাই শিক্ষার্থীদের গ্রন্থাগারমুখী হওয়ার অনুপ্রেরণা দিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ কিছু সেশন আয়োজন করতে পারে, যেখানে গ্রন্থাগারে প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে এবং পাঠের উপকারিতা সম্পর্কে জানানো হবে।

গ্রন্থাগারের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের অভাব, দায়িত্বে অবহেলা, অব্যবস্থাপনা ও অবন্ধুসুলভ আচরণও শিক্ষার্থীদের গ্রন্থাগার বিমুখ করতে ভূমিকা রাখে। এ সমস্যা রোধ করার জন্য গ্রন্থাগারে কর্মরত কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে।  
কলেজগুলোয় বিদ্যমান অন্য সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি গ্রন্থাগারে পাঠসংক্রান্ত সমস্যাগুলো সমাধানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত কলেজগুলো বিশ্বমানের স্নাতক তৈরি করে দেশের কর্মবাজারে সরবরাহ করতে পারবে। এটি আমাদের দেশকে তার দীর্ঘমেয়াদি উদ্দেশ্যগুলো অর্জনেও সহায়তা করবে। 

মুহাম্মদ ইয়াসীন ইবনে মাসুদ: শিক্ষক, সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ
easin.edu@gmail.com

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×