‘ত্রিবেণী তীর্থ পথে’র লেখক
সুধাংশু নাথ মণ্ডল
কঙ্কন সরকার
প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৩ | ০০:২৩ | আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৩ | ১৫:৪৬
‘ত্রিবেণী তীর্থ পথে’ একটি ভ্রমণবিষয়ক বই। বইটি প্রথম প্রকাশ হয়েছিল সুন্দরগঞ্জের আইডিয়াল লাইব্রেরি থেকে। বেশ কিছুদিন পর পাঠসূত্র প্রকাশনী থেকে নতুন আঙ্গিকে বইটি বের হয়। প্রথম প্রকাশে বের হওয়া বইটিও পড়ি। সে সময় বইটিতে ভ্রমণ স্থানের (ভারতের বিভিন্ন তীর্থস্থান) বর্ণনাই মনের কোণে জায়গা করে নিয়েছিল।
লেখকের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগ তখনও হয়ে ওঠেনি। তবে তাঁকে চিনতাম ও জানতাম। তাঁর শিক্ষকতা, আদর্শ, জানার সমৃদ্ধি সম্পর্কে শুনি ও কৌতূহলী হয়ে উঠি। এক পর্যায়ে লেখকের সঙ্গে যোগাযোগ ও সম্পর্ক হয়ে উঠলে কাকু বলে ডাকি। সাক্ষাতে নানা কথা হয়, গল্প হয়। তখন তাঁর জানা, প্রজ্ঞা মনের মধ্যে দাগ কাটতে থাকে। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা, ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে।
বিশেষভাবে যে বিষয়টি আমাকে নাড়া দেয় তা তাঁর হিন্দুধর্মীয় কুসংস্কার ও ভুল ব্যাখ্যা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা। দেশাচার-লোকাচারকে ধর্মমত হিসেবে সমাজে স্থান করে দেওয়ার বিরুদ্ধে যুক্তি ও তথ্য দিয়ে বুঝিয়ে দিতেন– এসব অপব্যাখ্যা, কুসংস্কার, ভ্রান্ত ধারণা। আমার সঙ্গে তাঁর সে যোগাযোগ ছিল আমৃত্যু।
নতুন আঙ্গিকে বইটি বের হলে আমার কাছে তা আসে তাঁর দেওয়া উপহার হিসেবে। লেখা একই থাকলেও আমার বোঝার আকাশে উদীয়মান সূর্যের মতো প্রকাশ পেতে থাকে আগের পড়ার অবস্থা থেকে একেবারে বিবর্তনীয় ধারায়। ভ্রমণের স্থান নয়; মন ছুঁয়ে যায় ভ্রমণরত দলটির সদস্যদের কথোপকথনে। যুক্তি প্রয়োগ ও খণ্ডন, পাল্টা যুক্তি, তথ্য উপস্থাপন, অবস্থান নির্ণয়– কত কী!
বইটি লেখকের তীর্থ ভ্রমণকে লেখার পাতায় স্মরণীয় করে রাখার প্রয়াস। স্থান বর্ণনার সঙ্গে যুক্ত করেছেন হিন্দুধর্মীয় সমাজের নানাবিধ বীক্ষণ বা নিরীক্ষণ। তা নির্ণয় করেছেন আপন বোধের নিরিখে; নিজস্ব অনুভূতি দিয়ে, যা পাঠকের কাছে জানার কৌতূহল ও নতুন করে চিন্তার ভাবনা উপস্থাপিত।
বইটি পড়ে ফেলে রাখার মতো লাগেনি আমার কাছে। খুব কাছেই রাখি। মাঝেমধ্যে পরখ করে নিই প্রয়োজনে কিংবা মনের ক্ষুধা মেটাতে কিংবা অস্পষ্টতাকে পুনরায় ঝালাই করে নিতে। কিংবা কোনো উপস্থাপনায় ব্যবহারে।
লেখক বই হিসেবে এটি প্রকাশ ছাড়াও হিন্দুধর্মীয় সমাজ ব্যবস্থার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আরও লিখেছেন। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ করেছেন। সুযোগ পেলে বলেছেন, উপস্থাপন করেছেন। যা হোক, ‘ত্রিবেণী তীর্থ পথে’ ভ্রমণকাহিনির সঙ্গে জীবনের বহু পথ ঘুরে আহরিত অর্জন মধুর মতো জমা করে পাঠকের স্বাদ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন ওষুধের গুণমান পায়, তা-ও করে গেছেন। আবিষ্কার করে দিয়েছেন মুক্তপথের যাত্রী একজন বিজয়া বসাককে।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে জন্ম নেওয়া ঋজু দেহী উজ্জ্বল বর্ণের এই মানুষটি প্রয়াত হয়েছেন ২০১৯ সালের ২১ নভেম্বর। শিক্ষকতার পাশাপাশি সামাজিক কাজে যুক্ত থাকতেন দায়িত্ববোধে।
আজ তাঁর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাভরে প্রার্থনা– স্বর্গ পেরিয়ে তাঁর মোক্ষপ্রাপ্তি ঘটুক। তাঁর রেখে যাওয়া কর্ম, কথা, পথ ও ‘ত্রিবেণী তীর্থ পথে’ আমাদের পাথেয় হোক।
কঙ্কন সরকার: লেখক; সম্পাদক– বৈশাখী