কোভিড-১৯ এ ভ্যাকসিন প্রাপ্তির তালিকায় অগ্রাধিকার প্রাপ্ত প্রবাসী কর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির এক পত্রে এ কথা জানানো হয়েছে।  এতে জানানো হয়েছে, সম্প্রতি চীন থেকে আসা সিনোফর্ম কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন অগ্রাধিকার প্রাপ্ত প্রবাসী কর্মীরা পাবেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

আগামী ১৯ জুন থেকে প্রবাসী কর্মীরা সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল ও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল থেকে সাইনফোর্ম ভ্যাকসিন নিতে পারবেন। 

বিদেশগামী কর্মীদের এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। 

গত ১৬ জুন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বিদেশগামী কর্মীদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ভ্যাকসিন প্রদানের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রবাসী কর্মীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন প্রদানের বিষয়ে আশ্বাস প্রদান করেন।

ক‌রোনার ভ্যাকসিন না নেওয়া থাকায়‌ বাংলা‌দে‌শি কর্মী‌দের বি‌দেশের কর্মস্থ‌লে গি‌য়ে প্রা‌তিষ্ঠা‌নিক কোয়া‌রেন্টাইনে থাক‌তে হ‌চ্ছে। এ‌তে কর্মী‌দের বিপুল খরচ হ‌চ্ছে। 

সৌ‌দি আর‌বে ৭দিন হো‌টে‌লে কোয়া‌রেন্টাইনে থাক‌তে ৬০ থে‌কে ৭০ হাজার টাকা গুণতে হচ্ছে কর্মীদের। এর ম‌ধ্যে ২৫ হাজার টাকা সরকার ভর্তু‌কি বাবদ দি‌চ্ছে। বা‌কিটা কর্মীর প‌কেট থে‌কে যা‌চ্ছে। 

মধ্যপ্রা‌চ্যের অন্যান্য দে‌শেও বাধ্যতামূলক কোয়া‌রেন্টাই‌নে থাকতে কর্মী‌দের প‌কেট খা‌লি হ‌চ্ছে। সেসব দে‌শের ক্ষে‌ত্রে সরকার ভর্তু‌কি দি‌চ্ছে না। পু‌রো টাকাই কর্মীর ব্যয় হ‌চ্ছে।

অথচ দুই ডোজ ক‌রোনা টিকা নেওয়া থাক‌লে সৌ‌দি আরবসহ অ‌নেক দে‌শেই প্রা‌তিষ্ঠা‌নিক কোয়ারেন্টাইনে থাকার বাধ্যবাধকতা নেই। অর্থাৎ টিকা নেওয়া থাক‌লে কো‌য়া‌রেন্টাইনে বাড়‌তি খরচ হ‌বে না।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণাল‌য়ের হিসা‌বে ১৩ জুন পর্যন্ত চল‌তি বছ‌রে ২ লাখ ১৩ হাজার কর্মী বি‌দেশ গি‌য়ে‌ছেন। লকডাউনের পর ২০ মে থে‌কে ১৩ জুন ১৬ হাজার ৭২ জন কর্মী সৌ‌দি আরব গি‌য়ে‌ছেন। তা‌দের জনপ্রতি ৭০ হাজার টাকা খরচ হ‌লে, শুধু সৌ‌দি আর‌বে কো‌য়া‌রেন্টাইন বাবদ শত কো‌টি টাকা চ‌লে গে‌ছে। অন্যান্য দে‌শেও বিপুল টাকা চ‌লে গে‌ছে। গত বু্ধবার সমকা‌লে এ সংক্রান্ত খবর প্রকা‌শিত হয়।

স্বাস্থ্য অ‌ধিদপ্ত‌রের প‌রিপ‌ত্রে বলা হ‌য়ে‌ছে, বি‌দেশ যে‌তে নিবন্ধন ক‌রে‌ছেন অর্থাৎ বিএমই‌টির স্মার্টকার্ড (ছাড়পত্র) পে‌য়ে‌ছেন এমন কর্মীরাই অগ্রা‌ধিকার ভি‌ত্তি‌তে টিকা পা‌বেন।

সিনোফর্ম ভ্যাকসিন গ্রহণের উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর তালিকায় আরও যাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে-

#সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী 

#পুলিশ সদস্য

#সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থী, 

#সরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি, সরকারি ম্যাটস ও সরকারি আইএইচটির শিক্ষার্থী

#সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা

#পদ্মা সেতু প্রকল্প, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প ও বিডার প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

#ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী 

#কোভিড-১৯ মৃতদেহ সৎকারে নিয়োজিত ওয়ার্ড ও পৌরসভার কর্মী

#বাংলাদেশে বসবাসরত চীনা নাগরিক

সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির পত্রে বলা হয়েছে, সাইনোফর্ম ভ্যাকসিন প্রদানের ক্ষেত্রে ঢাকা বাদে প্রতিটি জেলায় একটি করে ভ্যাকসিনেশন কেন্দ্র হবে এবং প্রতিটি কেন্দ্রে ২টি করে বুথ থাকবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রতিটিতে ১টি করে ভ্যাকসিনেশন কেন্দ্র হবে। প্রতিটি কেন্দ্রে ২টি বুথ থাকবে।

যেসব জেলায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নেই সেসব জেলায় সিভিল সার্জন জেলা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে জেলা সদর হাসপাতাল বা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে যেকোনো একটিকে নির্বাচিত করে জেলা ভ্যাকসিনেশন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা দেবেন এবং ঐ কেন্দ্রে ২টি বুথ থাকবে।