দিবস
প্রতিবন্ধিতায় কুষ্ঠের দায়
.
মো. সাজেদুল ইসলাম
প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ | ২২:৪৪
বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে ৩ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এটি জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত একটি দিবস, যা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ১৯৯২ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্মিলিত অংশগ্রহণ, নিশ্চিত করবে এসডিজি অর্জন’।
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮ থেকে ১০ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে প্রতিবন্ধিতার শিকার। প্রতিবন্ধী হওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। তবে বাংলাদেশে কুষ্ঠ রোগ প্রতিবন্ধী হওয়ার অন্যতম একটি বড় কারণ। সময়মতো চিকিৎসায় যদিও কুষ্ঠ রোগ ভালো হয়, চিকিৎসা নিতে বিলম্ব এবং উপযুক্ত চিকিৎসা নিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে এ রোগে অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করছে।
কুষ্ঠ একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ; জন্মগত, বংশগত বা অভিশাপের ফল নয়। চিকিৎসকদের মতে, কুষ্ঠ রোগ একটি মৃদু সংক্রামক রোগ। দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতার অধিকারী মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। এ রোগের কারণে পঙ্গু হলে হাত-পায়ের কার্যক্রম অচল হয়ে যায়, যন্ত্রণাপূর্ণ ঘা ও ইনফেকশন দেখা দেয়, এমনকি অন্ধত্বও দেখা দেয়। কুষ্ঠ সাধারণত আক্রান্ত রোগীর প্রান্তিক স্নায়ুর কার্যকারিতা নষ্ট করে। ফলে আঙুল বাঁকা হওয়া, মুখের প্যারালাইসিস, বেদনাহীন ঘা ইত্যাদি বিকলাঙ্গতা দেখা দেয় এবং রোগীর শারীরিক সমস্যার চেয়ে মানসিক-সামাজিক সমস্যা ও বৈষম্য প্রকটরূপে দেখা দেয়।
আমাদের দেশে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩’ রয়েছে। দুঃখজনক হলো, এখানে কুষ্ঠজনিত প্রতিবন্ধিতার কোনো বিষয়ের উল্লেখ নেই। যে কারণে কুষ্ঠজনিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্ধারিত সরকারি সাহায্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
আমাদের জাতীয় স্বার্থে কুষ্ঠ বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া দরকার। কেননা কুষ্ঠজনিত প্রতিবন্ধিতার কারণে মানবিক, স্বাস্থ্যগত, সামাজিক ও আর্থিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
এই রোগ চিকিৎসাযোগ্য। এর চিকিৎসা ও পরীক্ষা সারাদেশে বিনামূল্যে পাওয়া যায়। আক্রান্ত ব্যক্তিদের সময়মতো চিকিৎসার আওতায় আনার জন্য গণমাধ্যমের সহযোগিতায় এ বিষয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা দরকার।
কুষ্ঠজনিত সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও কুসংস্কারের বিষয়টি সুরাহা করার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা, সমান কর্মসংস্থানের সুযোগ, ব্যক্তিগত ক্ষমতায়ন এবং সেলফ-অ্যাডভোকেসিসহ সামাজিক ও অর্থনৈতিক পুনর্বাসনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। আমাদের দেশের চিকিৎসকদের কুষ্ঠ বিষয়ে দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের আয়োজন করা যেতে পারে; যাতে তারা রোগীদের ভালো মানের চিকিৎসাসেবা দিতে পারে। দেশের জেলা পর্যায়ের হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জটিল কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসা, যেমন– রিকন্সট্রাকটিভ সার্জারির ব্যবস্থা থাকা দরকার।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইনকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করে কুষ্ঠজনিত প্রতিবন্ধিতার বিষয়টি উল্লেখ করা দরকার, যাতে কুষ্ঠজনিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যাবতীয় সরকারি সাহায্য পাওয়ার অধিকারী হন।
বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে কুষ্ঠমুক্ত দেশ গড়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সরকারের সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবে রূপদানের জন্য এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনাসহ জাতীয় বাজেটে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রাখা একটি জরুরি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আসুন, আমরা সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে প্রতিবন্ধিতার অন্যতম কারণ কুষ্ঠকে পরাজিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করি এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় হই।
মো. সাজেদুল ইসলাম : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক