শিক্ষা
কলেজ স্নাতকেরা যেখানে পিছিয়ে
.
মুহাম্মদ ইয়াসীন ইবনে মাসুদ
প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ | ২২:৪৫
সরকারি বা বেসরকারি যে কোনো চাকরিতে আমাদের দেশের কলেজগুলোর স্নাতকরা অবস্থা যে পাবলিক বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের চেয়ে অনেক দুর্বল, তা বলাই বাহুল্য। এর মূলে যে কারণটি কাজ করে তা হলো প্রথমোক্তদের এমপ্লয়েবিলিটি স্কিল বা নিয়োগযোগ্য দক্ষতার অভাব। পাঠ্যপুস্তক থেকে এ গুণাবলি অর্জন সম্ভব নয়। এই দক্ষতাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়– ১, সফ্ট স্কিল: যোগাযোগ দক্ষতা, দলীয় কাজ করার সক্ষমতা, জটিল সমস্যার সমাধানযোগ্যতা, খাপ খাওয়ানোর যোগ্যতা, সময় ব্যবস্থাপনা, নেতৃত্ব এবং আবেগীয় দক্ষতা; ২, হার্ড/টেকনিক্যাল স্কিল: কম্পিউটার ব্যবহার, তথ্যপ্রযুক্তির জ্ঞান, বিভিন্ন সফ্টওয়্যার ব্যবহারে দক্ষতা ইত্যাদি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জনবল নিয়োগদানের সময় নিয়োগকর্তারা প্রার্থীদের কাছে এই উভয় প্রকার গুণাবলি আশা করেন। তাই এসব গুণ প্রার্থীদের প্রার্থিতাকে শক্তিশালী করে।
অশেষ গুরুত্বের কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অপর্যাপ্ত হলেও এই স্কিলগুলো অর্জনে সহায়ক কিছু সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান। উপরন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের মাঝে এসব স্কিল অর্জনের যথেষ্ট চেষ্টাও পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু কলেজগুলোতে এর কিছুই নেই বললে ভুল হবে না। শিক্ষকরাও সীমিত সামর্থ্যের কারণে তাদের পাঠ্যপুস্তকের বাইরে গিয়ে এসব যোগ্যতা অর্জন বিষয়ে সহায়তা করতে পারেন না। ফলে বাজারের চাহিদার সঙ্গে এদের যোগ্যতার একটি বড় ফারাক তৈরি হয়। এ কারণে চাকরির বাজারে নিয়োগকারীদের পছন্দের তালিকার শেষের দিকে থাকে কলেজ স্নাতকদের অবস্থান। কিছু ক্ষেত্রে আমাদের দেশের কলেজ স্নাতকরা চাকরি পেয়ে গেলেও খুব বেশি উন্নতি করতে পারে না সফ্ট স্কিল না থাকার কারণে।
বাংলাদেশের কলেজগুলোর প্রথম সীমাবদ্ধতা হলো সেকেলে কারিকুলাম। আবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও তার কারিকুলাম যুগোপযোগীকরণে খুব ধীর বা একেবারেই অনাগ্রহী। ফলে এখানকার শিক্ষার্থীরা বরাবরই সমসাময়িক চাহিদা থেকে যোগ্যতার দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকে। দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ে কলেজগুলোর উদ্যোগ ও প্রয়োজনীয় সম্পদের অভাবও বিশেষভাবে পরিলক্ষিত। দিন দিন এ পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। হাজার হাজার কলেজ গ্র্যাজুয়েট শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করার পর চার-পাঁচ বছর বিভিন্ন চাকরির চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে বেকার ঘুরতে থাকে।
সমস্যা সমাধানে তাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কারিকুলাম যুগোপযোগী করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবিড় যোগাযোগ নিশ্চিত করতে হবে। এতে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী যোগ্যতা অর্জনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাদি কারিকুলামের অন্তর্ভুক্তি সম্ভব হবে। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ছাত্রদের চাকরির বাজারের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন যোগ্যতা অর্জনে সহায়তা করার জন্য যোগাযোগ দক্ষতা উন্নয়ন, নেতৃত্বের বিকাশ, ডিজিটাল শিক্ষাবিষয়ক বিভিন্ন কর্মশালা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে ছাত্রদের জন্য ইন্টার্নশিপ এবং খণ্ডকালীন কাজের ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদের নিয়োগযোগ্যতার দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করতে পারে। উপরন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে কার্যকরী ক্যারিয়ার ক্লাব প্রতিষ্ঠা করে এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যারিয়ার পছন্দ চূড়ান্তকরণ, সিভি লিখন, ইন্টারভিউ প্রস্তুতি ইত্যাদি বিষয়ে সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন করা যায়। জামালপুরের সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজসহ কিছু বড় কলেজ ইতোমধ্যে এ উদ্যোগের মাধ্যমে তাদের শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ, প্রশিক্ষণ এবং বিস্তারিত তথ্য দান করে তাদের কর্মসংস্থানের উপযোগী হয়ে উঠতে সহায়তা করছে। অন্য কলেজগুলোও এ উদ্যোগ অনুসরণ করলে সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটবে বলে আশা করা যায়।
মুহাম্মদ ইয়াসীন ইবনে মাসুদ: শিক্ষক, বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা)
easin.edu@gmail.com