গত ৮ আগস্ট সাম্প্রতিক ঘটনাবলির প্রেক্ষাপটে বিশিষ্টজনের অভিমত নিয়ে 'নারী সম্পর্কে ভুল বার্তা যেতে পারে সমাজে' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন সমকালে প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বিশিষ্টজন অত্যন্ত মূল্যবান অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তাদের বক্তব্যের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, সবার বক্তব্যেই মুদ্রার একটি পিঠের কথা উঠে এসেছে। মুদ্রার অপর পিঠটিও আলোচনা হওয়া উচিত।
ব্যক্তিজীবনে নিজেকে নারীবাদী হিসেবেই ভাবি। সব সময় নারী অধিকারের পক্ষে কলম ধরেছি, রাজপথে নেমেছি। কিন্তু আমাদের চারপাশে প্রতিদিন ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা সংশয় সৃষ্টি করেছে। আমরা জানি, আমাদের দেশের নারীরা অনেক এগিয়ে গেছেন। সমাজ-রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রেই নারীর সরব উপস্থিতি লক্ষণীয়। নারীর এই অগ্রগতি দেশের সার্বিক অগ্রগতির জন্য খুবই ইতিবাচক।
তবে নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে কিছু নারীর সম্পৃক্ততা আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না। আমাদের দেশে নারী নির্যাতন যেমন অনস্বীকার্য বাস্তবতা, তেমনি পুরুষ নির্যাতনও এ সময়ের বাস্তবতা। কিছুদিন আগে একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়, কেবল ঢাকা উত্তর সিটিতে প্রতিদিন ৩৯টি ও দক্ষিণ সিটিতে ৩৮টি ডিভোর্স হচ্ছে। প্রতিবছর ডিভোর্সের সংখ্যা আগের বছরের সংখ্যা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। গবেষণালব্ধ সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিভোর্সের কারণ হিসেবে বেশির ভাগ নারীই যৌতুকের কথা উল্লেখ করলেও অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবতা ভিন্ন। উচ্চাভিলাষ, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক কিংবা ঠুনকো কারণেও সংসার ভেঙে দিচ্ছেন কেউ কেউ। এতে মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে ওই সব পরিবারের শিশুরা।
আমাদের সমাজের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো নৈতিকতার অধঃপতন। নারী-পুরুষ উভয়ের অনেকেই মানবিক গুণাবলি হারিয়ে দিন দিন অমানবিক হয়ে পড়ছে। পুরুষশাসিত এই সমাজে পুরুষরা তো অভিযুক্ত আগে থেকেই। কিন্তু সময় যত যাচ্ছে, নারীরাও বিবিধ অপরাধ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে পড়ছেন আশঙ্কাজনক হারে। তাই প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনামসূত্রে শ্রদ্ধাভাজন বিশিষ্টজনকে বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, মুদ্রার অপর পিঠটিও দেখার চেষ্টা করুন। আমাদের নৈতিকতার পতন রুখতে জাতি আপনাদের কাছ থেকে বলিষ্ঠ ভূমিকা আশা করে। সাম্প্রতিককালে পাপিয়া, ডা. সাবরিনাদের ব্যাপারে যে তথ্যগুলো প্রকাশ হয়েছে, তা সমাজের ভঙ্গুর দশারই প্রতিফলন। তাদের এ জাতীয় কর্মকাণ্ডের ফলে নারী সম্পর্কে ভুল বার্তা সমাজে এমনিতেই ছড়িয়ে পড়ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
সংবাদকর্মী

বিষয় : সমাজের বিবর্ণ চিত্র রাসেল আদিত্য

মন্তব্য করুন