কভিড-১৯ টেস্ট কয় ধরনের ও কী কী?

কভিড-১৯ টেস্ট দুই ধরনের হয়ে থাকে:
১. কভিড-১৯ ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্তকরণের জন্য টেস্ট
২. ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি উৎপন্ন হয়েছে কিনা তা জানার জন্য টেস্ট

একটি ভাইরাল টেস্টের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন, বর্তমানে আপনি সংক্রমিত কিনা। দুই ধরনের ভাইরাল টেস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে: নিউক্লিক অ্যাসিড অ্যামপ্লিফিকেশন টেস্ট (এনএএটি) এবং অ্যান্টিজেন টেস্ট।

অন্যদিকে, একটি অ্যান্টিবডি টেস্ট (যেটি সেরোলজি টেস্ট হিসেবেও পরিচিত) আপনাকে বলতে পারে যে আপনি অতীতে ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়েছিলেন কিনা। তবে বর্তমানে আপনি সংক্রমিত কিনা তা নির্ণয়ের জন্য অ্যান্টিবডি টেস্ট ব্যবহার করা উচিত নয়।

আমার কখন কভিড-১৯ টেস্ট করা উচিত?

ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) সুপারিশ করে, কোনো ব্যক্তির কভিড-১৯ এর যে  কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিলে তাকে টেস্ট করানো উচিত, এমনকি সে যদি টিকা গ্রহণ করে থাকে বা পূর্বে সংক্রমণ হয়েছে এমন হলেও। একইভাবে কেউ যদি কভিড-১৯ রোগীর সাথে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসেন, তাহলেও তার টেস্ট করা উচিত।

টিকা গ্রহণ করেননি এমন ব্যক্তি যারা বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন, যেমন- ভ্রমণ, বড় সামাজিক বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া অথবা জনবহুল বা কম বায়ু চলাচলযুক্ত স্থানে অবস্থান করেছেন তারা কভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে নিজেদের বেশি ঝুঁকিতে ফেলেছেন। তাদেরও কভিড টেস্ট করানো উচিত।

'মলিকুলার' টেস্ট এবং 'অ্যান্টিজেন' টেস্টের মধ্যে পার্থক্য কী?

মলিকুলার টেস্ট রোগীর ওপরের বা নিচের শ্বাসনালিতে ভাইরাসের উপস্থিতি যেন শনাক্ত করতে পারে, সেভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর) নামে একটি প্রক্রিয়া ব্যবহার করে ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়।

অন্যদিকে অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে নমুনায় সার্স-কভ-২ (SARS-CoV-2) প্রোটিনের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয় এবং দেখা হয় যে বর্তমানে আপনার মধ্যে ভাইরাস সক্রিয় আছে কিনা। অ্যান্টিজেন টেস্ট দ্রুত হয়, কিন্তু মলিকুলার টেস্টের চেয়ে কম সংবেদনশীল এবং ফলস নেগেটিভ ফলাফল দিতে পারে।

আরেকটি হলো সেরোলজি টেস্ট, যা সংক্রমণের পরে রোগীর রক্তের প্লাজমা বা সেরাম উপাদানের মধ্যে সার্স-কভ-২ (SARS-CoV-2) এর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি শনাক্ত করে। এটি কমপক্ষে ১ থেকে ৩ সপ্তাহ আগে সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে অতীতের সার্স-কভ-২ (SARS-CoV-2) সংক্রমণ শনাক্ত করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। বর্তমান সংক্রমণ শনাক্ত করতে এই টেস্ট ব্যবহার করা উচিত নয়।

কভিড আরটি-পিসিআর (RT-PCR) টেস্টের জন্য কীভাবে একটি নমুনা প্রক্রিয়াজাত করা হয়?

একটি বিশেষ সোয়াব ব্যবহার করে রোগীর নাক বা গলা থেকে নমুনা নেওয়া হয়। সেই সোয়াবটি একটি টিউবের ভেতরে রাখা হয়, যাতে এক ধরনের স্থিতিশীল নিউক্লিক অ্যাসিড রিএজেন্ট নামক পদার্থ থাকে। পরে নমুনাটি যত্নসহকারে বিশেষ রাসায়নিকের সঙ্গে মিশ্রিত করা হয় এবং পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর) নামে একটি প্রক্রিয়া ব্যবহার করে বিশ্লেষণের জন্য একটি মেশিনে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। যা কভিডের জন্য নমুনাটি পজিটিভ না নেগেটিভ, তা শনাক্ত করতে পারে। এই টেস্টটি করতে ৮ ঘণ্টা থেকে বেশ কয়েক দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

কভিড-১৯ টেস্টের পজিটিভ রিপোর্টের অর্থ কী?

টেস্টের ফলাফল ‘পজিটিভ’ এর অর্থ হল বর্তমানে আপনি কভিড-১৯ দ্বারা সংক্রমিত হয়েছেন এবং ভাইরাসটি আপনার শরীরের সক্রিয় রয়েছে, যা আপনার মাধ্যমে অন্যদের মধ্যেও ছড়াতে পারে। ভাইরাসটি উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও রোগীর মেডিকেল হিস্ট্রি এবং অন্যান্য ডায়াগনস্টিক তথ্য ছাড়া রোগীর সংক্রমণের অবস্থা নিরূপন করা যায় না। পজিটিভ রেজাল্ট ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ বা অন্যান্য ভাইরাসের সঙ্গে সহ-সংক্রমণ হেওয়ার আশঙ্কাকে একেবারে নাকচ করে দেয় না।

পজিটিভ ফলাফলের অর্থ হলো নিজেকে বাড়িতে আইসোলেট বা বিচ্ছিন্ন করা উচিত অন্ততপক্ষে:
১. লক্ষণহীন রোগীদের ক্ষেত্রে- নমুনা সংগ্রহের দিন থেকে ১০ দিন পর্যন্ত
২. উপসর্গ বা লক্ষণ আছে এমন রোগীর ক্ষেত্রে- ১৪ দিন পর্যন্ত আইসোলেশনে থাকা উচিদ। এরপর ৩ দিন যদি রোগীর কোনো জ্বর বা শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা না দেখা দেয়, তবে রোগী আইসোলেশন থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।

আইসোলেশনের সময় একটি নির্দিষ্ট ঘরে এবং অন্য লোকদের থেকে দূরে থাকা উচিত।

কভিড-১৯ টেস্টের নেগেটিভ রিপোর্টের অর্থ কী?

টেস্টের ফলাফল ‘নেগেটিভ’ এর অর্থ হলো টেস্ট করা নমুনায় সার্স-কভ-২ (SARS-CoV-2) আরএনএ (RNA) শনাক্তকরণের সীমার ওপরে উপস্থিত ছিল না। ফলাফল নেগেটিভ এলেও কভিড-১৯ হওয়ার আশঙ্কাকে একেবারে উড়িয়ে দেয় না এবং এটিকে রোগীর চিকিৎসাসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে একমাত্র ভিত্তি হিসেবে ধরে নেওয়া উচিত নয়।

ল্যাবরেটরিতে করা টেস্টের ফলাফল সর্বদা ক্লিনিক্যাল পর্যবেক্ষণ এবং এপিডেমিওলজিক্যাল তথ্য উপাত্তের প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করা উচিত এবং রোগ নির্ণয় ও রোগীর জন্য ব্যবস্থাপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা উচিত। চূড়ান্ত ডায়াগনসিস এবং রোগীর চিকিৎসাপত্রের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়, ল্যাবরেটরিতে করা টেস্টের রেজাল্টগুলো সব সময় ক্লিনিক্যাল পর্যবেক্ষণ এবং এপিডেমিওলজিক্যাল ডেটার প্রেক্ষাপটে পর্যালোচনা করা উচিত।

কভিড টেস্টের রেজাল্ট কতটা সঠিক?

কোনো ডায়াগনস্টিক টেস্ট ১০০% সঠিক হয় না। তারপরেও এখন পর্যন্ত পিসিআর টেস্টই সবচেয়ে সঠিক ফলাফল দেয়।

কভিড টেস্টের রিপোর্টকে প্রভাবিত করে এমন উপাদানগুলো কী কী?

যে কারণগুলো একটি কোভিড টেস্টের রিপোর্টকে প্রভাবিত করে সেগুলো হলো:
১. যদি নমুনা নিখুঁতভাবে সংগ্রহ না করা হয়ে থাকে
২. আপনি যদি সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে থাকেন বা ইতোমধ্যে আংশিকভাবে সুস্থ হয়ে ওঠেন, তবে আপনার নাক থেকে নেওয়া সোয়াব নমুনায় পজিটিভ ফলাফল পাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত ভাইরাল উপাদান নাও থাকতে পারে
৩. নমুনাগুলো খুব দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষণ করা হলে তা ভুল ফলাফল দিতে পারে, কারণ রোগীদের কাছ থেকে নেওয়া নমুনাগুলোর স্থিতিশীলতা সময়ের সঙ্গে হ্রাস পায়।

কেউ কি ভুল করে পজিটিভ রেজাল্ট পেতে পারে?

পজিটিভ টেস্টগুলো বেশিরভাগই সঠিক হয়। তারপরেও নিম্নোক্ত পরিস্থিতিতে ফলস পজিটিভ ফলাফলের আশঙ্কা থাকতে পারে:
১. অশুদ্ধ নমুনা বা দূষিত নমুনা।
২. নমুনা সংগ্রহের সময় (সংক্রমণের খুব তাড়াতাড়ি বা দেরিতে- ভাইরাল লোড ক্রমশ হ্রাস পায় এবং একজনের ক্ষেত্রে ৪.৩ দিনের মধ্যে ভাইরাস চলেও যেতে পারে। ভাইরাল লোড সুস্থ হওয়ার সময় হ্রাস পায় এবং ঘণ্টা বা দিনের মধ্যে পুনরায় টেস্টের সময় বিভিন্ন রেজাল্ট দেখাতে পারে)।
৩. অনুপযুক্ত ব্যাখ্যা; কারণ করোনাভাইরাসের জেনেটিক উপাদান সংক্রমণ থেকে সুস্থ হওয়ার অনেক পরে পর্যন্ত শরীরে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।

পজিটিভ হওয়ার অর্থ এই নয় যে রোগীর উপসর্গ থাকবে, কারণ ভাইরাস পজিটিভ রোগীদের মধ্যে অনেকেই লক্ষণহীনও  হতে পারেন।

কেউ কি নেগেটিভ রেজাল্ট পাওয়ার পরে আবার টেস্ট করে পজিটিভ রেজাল্ট পেতে পারেন?

এটি হতে পারে এবং বেশ কয়েকটি কারণে এটি ঘটতে পারে:
১. ভাইরাস লোড, শনাক্তকরণের সীমার নিচে থাকা অবস্থায় টেস্ট করা হলে।
২.  ফলস নেগেটিভ ফলাফল বেশ সাধারণ (যেদিন প্রথম উপসর্গ দেখা দেয় সেদিনের পজিটিভিটি ৩৮% থেকে কমে ৮১তম দিনে এসে ২০% হয়)।
৩. ভাইরাল মিউটেশন ঘটলে তা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তকরণে প্রভাব ফেলে।

বিষয় : কভিড-১৯ টেস্ট ডা. জাহিদ হুসেন

মন্তব্য করুন