- মতামত
- তলাবিহীন ঝুড়ি নয়...
তলাবিহীন ঝুড়ি নয়...
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বৈদেশিক বিনিয়োগের গুরুত্ব অপরিসীম। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা ভাব থাকলেও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাও অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছি। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে প্রকাশিত '২০২১ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট স্টেটমেন্টস'-এ বলা হয়েছে, বাংলাদেশ গত এক দশক ধরে স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। এদেশে রয়েছে একটি বৃহৎ তরুণ ও কঠোর পরিশ্রমী শ্রমশক্তি। এখানকার বেসরকারি খাতও প্রাণবন্ত। দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও গত চার বছরে বাংলাদেশে এক হাজার ১০০ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের জিডিপিতে বৈদেশিক বিনিয়োগের অবদান প্রায় ১ শতাংশ। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের এফডিআই যদি ৫ থেকে ৬ শতাংশে উন্নীত করা যায়, তাহলে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ১০ শতাংশ।
চলতি বছর বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করছে। অতীতের দুর্ভিক্ষ আর প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ ভূখণ্ডটি আজ বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে এগিয়ে চলেছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিক্রমায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বাংলাদেশের প্রথম সরকার অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর সরকার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্বাসন ও নানান ধরনের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ব্যতিব্যস্ত থাকলেও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের একটি রূপরেখাও তৈরি করেছিল। যেটির প্রতিফলন প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দেখতে পাওয়া যায়। বিশেষ করে দুটি অগ্রাধিকার চিহ্নিত করা হয়েছিল; একটি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, আরেকটি খাদ্য নিরাপত্তা, যার সঙ্গে কৃষির উন্নয়ন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সে সরকারের সময়; পরবর্তী সরকারগুলো এ কাজ আরও এগিয়ে নিয়েছে। এ ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে। নীতিগত পদক্ষেপের ধারাটি পরবর্তী দশকগুলোয় অব্যাহত, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্রমাগত বৃদ্ধিতে সাহায্য করেছে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য বিরোধ এবং হংকংয়ের ওপর চীনের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণের কারণে এশিয়ার বাণিজ্যিক কেন্দ্র হংকং থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে শুরু করেছেন। অনেক বৈশ্বিক কোম্পানি তাদের প্রধান কার্যালয় সিঙ্গাপুরে সরিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু সিঙ্গাপুরের রয়েছে অনেক সীমাবদ্ধতা। তাই সিঙ্গাপুর বাংলাদেশের জন্য নতুন সম্ভাবনা হয়ে উঠেছে। দফায় দফায় বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহের কথাও জানিয়েছে সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। সিঙ্গাপুর বিজনেস ফেডারেশন (এসবিএফ) সম্প্রতি বাংলাদেশে পোশাক ও ওষুধ খাতে তিন হাজার ৪০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিডার পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত চার বছরে বাংলাদেশে সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগ ৩৫ শতাংশ বেড়েছে।
বাংলাদেশে মোটরগাড়ি শিল্প, জ্বালানি এবং অবকাঠামো নির্মাণ শিল্পে সম্পৃক্ত হতে চাইছে কোরিয়ার জায়ান্ট কোম্পানিগুলো। বিশ্বখ্যাত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হুন্দাই বাংলাদেশে গাড়ি নির্মাণ কারখানা স্থাপনে গত জানুয়ারিতে চুক্তি স্বাক্ষরের পর এবার আরও দুটি কোরীয় কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কোরীয় কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ বাংলাদেশে লাভজনক ও নির্বিঘ্ন হওয়ার কারণে এখন জায়ান্ট কোম্পানিগুলোও বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিয়ে আসতে চাইছে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান জিওনজি সিইএস বাংলাদেশে একটি এলপিজি প্লান্ট স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) ফরমও পূরণ করেছে। আরও একটি প্রতিষ্ঠান 'হানওয়া ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন করপোরেশন' বাংলাদেশে অবকাঠামো নির্মাণে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ দেখিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে বৈঠক করেছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা দেশটির সপ্তম বৃহত্তম কোম্পানি, যেটি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নির্মাণ খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
দেশের জিডিপিতে বেসরকারি খাতের অবদান এখন ২৩ শতাংশ। এটি মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনাম থেকে বেশি এবং ভারতের প্রায় সমান। ভারতে এটি ২৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। তাই বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের পাশাপাশি দেশীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধির ওপরেও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
সাংবাদিক
jsb.shuvo@gmail.com
মন্তব্য করুন