
ঢাকার রাস্তায় এখন খুব পরিচিত একটি দৃশ্য টিসিবির ট্রাকের পেছনে মানুষের দীর্ঘ লাইন। প্রতিদিন বাড়ছে এ লাইনের দৈর্ঘ্য। আমি বহুবার এমনও দেখেছি, ট্রাক এসে পৌঁছেনি কিন্তু মানুষের লাইন তৈরি হয়ে গেছে। পত্রিকায় দেখেছি, দীর্ঘ সময় লাইনে থেকে যখন ট্রাকের কাছাকাছি মানুষ পৌঁছেছে, তখন ট্রাকের পণ্য শেষ হয়ে গেছে। অন্তত একটা জায়গায় পণ্য না পেয়ে হাঙ্গামা হওয়ার খবরও দেখেছি পত্রিকায়। হওয়ারই কথা। দেশে যেখানে প্রয়োজন কয়েক হাজার, সেখানে সারাদেশে এমন পণ্য বিক্রি করছে মাত্র ৪০০ ট্রাক।
প্রায় সব শীর্ষস্থানীয় পত্রিকায় এ সংবাদও এসেছে, এসব লাইনে এখন আর শুধু দরিদ্ররা দাঁড়াচ্ছে না- 'লজ্জার মাথা খেয়ে' দাঁড়াচ্ছে মধ্যবিত্তরাও। করোনার অভিঘাতে বহু মধ্যবিত্ত চলে গেছে দারিদ্র্যসীমার নিচে। সে প্রসঙ্গে পরে আসছি।
পুরো করোনার সময় মানুষের সংকট ক্রমাগত বেড়েছে। আর সেটা মানুষকে ঠেলে দিয়েছে এসব ট্রাকের পেছনে। গত বেশ কিছুদিন থেকে চাল, ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজসহ একের পর এক নিত্যপণ্যের দাম অবিশ্বাস্য রকম বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের সারি আরও দীর্ঘ হচ্ছিল। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর কিছু পণ্য যদি হাতে পাওয়া যায়, তাহলে অন্তত কিছু টাকা বাঁচে। এই আক্রার বাজারে এ টাকাটাও এখন অমূল্য অসংখ্য মানুষের কাছে।
নিত্যপণ্যের দাম ক্রমাগত বেড়েছে বহুদিন। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে আগে কম মূল্যে আমদানিকৃত হাতে থাকা পণ্যও বরাবরের মতো বেশি দামে বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যেই 'মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা' হয়ে এলো ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য পতন। এর ফলে সরাসরি ভোক্তার কাছে যাওয়া আমদানিকৃত পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটেই ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য বাড়ানো হলো ২৩ শতাংশ। শুধু সেটাই নয়, গত মাসে বড় অঙ্কের বৃদ্ধির পর আবারও বাড়ল এলপিজির দাম। বর্তমানে বাংলাদেশে কেরোসিন ব্যবহার করে সবচেয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। এদের এই অত্যাবশ্যকীয় পণ্যটিও মূল্যবৃদ্ধির কবল থেকে বাঁচেনি।
ডিজেলের দাম বৃদ্ধির ফল মানুষের ওপরে কীভাবে পড়ে, সচেতন মানুষ তা জানে। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধির কারণে যেমন নিজের দৈনন্দিন ভ্রমণের জন্য সরাসরি তাকে বেশি টাকা গুনতে হয়, তেমনি পণ্য পরিবহনের ব্যয় বৃদ্ধির কারণে দাম বেড়ে যায় সব পণ্যের। ওদিকে বাংলাদেশের বিদ্যুতের একটা বড় অংশ যেহেতু এখনও তরল জ্বালানিনির্ভর, তাই অচিরেই বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কথা নিশ্চয় আসবে। কিন্তু ইতিহাস বলে, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে পণ্যের মূল্য যতটুকু বাড়ার কথা, বেড়ে যায় তার কয়েক গুণ। আছে অন্যায্য দাবিও। যেমন শহর এলাকায় যেসব বাস সিএনজিতে চলে; ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিতে তারাও ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে ধর্মঘটে যোগ দিয়েছিল।
এটা সত্য, করোনার পরে পৃথিবীর প্রতিটি জ্বালানির দাম খুব দ্রুত বেড়ে গেছে। দীর্ঘদিন পৃথিবীর অর্থনীতি মন্দার মধ্যে থাকার ফলে জ্বালানি উৎপাদকরা তাদের উৎপাদন অনেক কমিয়ে এনেছিল। এখন পরিস্থিতি দ্রুতই অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ার কারণে হঠাৎ সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হওয়ার প্রেক্ষাপটে এই চরম বর্ধিত চাহিদা। চাহিদার তুলনায় জোগানের পরিমাণ কম হওয়ার কারণে দ্রুতই বেড়েছে জ্বালানির দাম। পরিস্থিতি এখন এমন, কিছু দেশ তাদের জ্বালানির অভাবে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না। ভারত, এমনকি চীনেরও নানা জায়গায় ব্ল্যাকআউটের খবর আমরা নিয়মিত পাচ্ছি।
বাংলাদেশের পরিকল্পনামন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন- এই মূল্যবৃদ্ধিই শেষ নয়। বিশ্ব প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে এই দাম আবারও বাড়তে পারে। সঙ্গত কারণেই একটা যুক্তি দেওয়া হচ্ছে, যেহেতু আমাদের দেশ এ পণ্যটি উৎপাদন করে না; পুরোপুরি আমদানি করতে হয়, তাহলে মূল্যবৃদ্ধি ছাড়া আমাদের কী করার ছিল?
আমরা এর মধ্যেই জেনে গেছি, গত কয়েক বছরে জ্বালানি তেলের মূল্যের নিম্নমুখী প্রবণতা আর করোনার সময়ে প্রায় শূন্যে নেমে যাওয়ায় সরকার এ বাবদ ৪০ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে। তাই সবাই যৌক্তিকভাবেই বলছে, এই সময়ে জনজীবনে কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার জন্য সরকার কি কয়েক হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে পারত না?
সাধারণ মানুষের জন্য এই ভয়ংকর পরিস্থিতিতেই দুটো পরিসংখ্যান এসেছে আমাদের সামনে। একটি হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় নাকি এখন ২ হাজার ৫০০ ডলার। মাত্র কিছুদিন আগের ২ হাজার ২০০ ডলারের তুলনায় এটা বেশ বড় উল্লল্ফম্ফন। 'জাদু'টা হয়েছে অবশ্য হিসাবের ভিত্তি বছর পরিবর্তনের মাধ্যমে। একটা দেশের মাথাপিছু আয় আর টিসিবির ট্রাকের পেছনের লাইন যখন একই সঙ্গে বাড়ে, তখন পরিসংখ্যানের ম্যানিপুলেশনকে সরিয়ে রেখেও খুব স্বাভাবিক কাণ্ডজ্ঞান দিয়ে বোঝা যায়, এ দেশের মানুষের আয়-বৈষম্য কোন জায়গায় পৌঁছেছে।
ব্র্যাক আর পিপিআরসি কোনো 'হেজিপেজি' প্রতিষ্ঠান নয়। কিন্তু যেহেতু তাদের কিছু যৌথ গবেষণা সরকারি বয়ানকে চ্যালেঞ্জ করে, তাই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরকারের মন্ত্রীদের ক্ষোভ-উষ্ফ্মা দেখা গিয়েছিল কিছুদিন আগেই। কয়েক মাস আগে তারা জানিয়েছিল, করোনার অভিঘাতে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। বলাবাহুল্য সরকারের পক্ষ থেকে তখন এ পরিসংখ্যানকে পত্রপাঠ বাতিল করা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠান দুটি তার সর্বসাম্প্রতিক গবেষণায় জানিয়েছে, এ সংখ্যাটি আরও বেড়েছে, যা এখন ৩ কোটি ২৪ লাখ।
করোনার আগে সরকারি হিসাবেই এ দেশে পৌনে চার কোটি মানুষ দরিদ্র ছিল। আর এই সংখ্যা যোগ করলে এই মুহূর্তে দেশে দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করা মানুষের সংখ্যা ৭ কোটি। অর্থাৎ দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষকে দারিদ্র্যসীমার নিচে রেখে চরম মূল্যবৃদ্ধির এক ভয়ংকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেওয়া হলো।
অর্থনীতিতে মন্দার সঙ্গে মূল্যস্টম্ফীতির সম্পর্ক সাধারণত উল্টো- মন্দায় মূল্যস্টম্ফীতি থাকে কমের দিকে। কিন্তু কিছু পরিস্থিতিতে ঘটে উল্টো- মন্দায়ও মূল্যস্টম্ফীতি বাড়ে। এটাই 'স্ট্যাগফ্লেশন' নামে পরিচিত। বাংলাদেশ এখন এই চক্রে পড়ে গেছে বলে আমার বিশ্বাস। এ পরিস্থিতিতে জরুরি হচ্ছে মূল্যস্টম্ফীতি আরও বাড়িয়ে দেয় এমন পদক্ষেপ না নেওয়া। কিন্তু নেওয়া হলো সেই পদক্ষেপই। টিসিবির ট্রাকের লাইন আরও বেশি দীর্ঘ হয়ে পড়া সরকারের জন্য কোনোভাবেই স্বস্তির বিষয় হবে না।
হশিক্ষক ও নাগরিক অধিকারকর্মী
প্রায় সব শীর্ষস্থানীয় পত্রিকায় এ সংবাদও এসেছে, এসব লাইনে এখন আর শুধু দরিদ্ররা দাঁড়াচ্ছে না- 'লজ্জার মাথা খেয়ে' দাঁড়াচ্ছে মধ্যবিত্তরাও। করোনার অভিঘাতে বহু মধ্যবিত্ত চলে গেছে দারিদ্র্যসীমার নিচে। সে প্রসঙ্গে পরে আসছি।
পুরো করোনার সময় মানুষের সংকট ক্রমাগত বেড়েছে। আর সেটা মানুষকে ঠেলে দিয়েছে এসব ট্রাকের পেছনে। গত বেশ কিছুদিন থেকে চাল, ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজসহ একের পর এক নিত্যপণ্যের দাম অবিশ্বাস্য রকম বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের সারি আরও দীর্ঘ হচ্ছিল। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর কিছু পণ্য যদি হাতে পাওয়া যায়, তাহলে অন্তত কিছু টাকা বাঁচে। এই আক্রার বাজারে এ টাকাটাও এখন অমূল্য অসংখ্য মানুষের কাছে।
নিত্যপণ্যের দাম ক্রমাগত বেড়েছে বহুদিন। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে আগে কম মূল্যে আমদানিকৃত হাতে থাকা পণ্যও বরাবরের মতো বেশি দামে বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যেই 'মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা' হয়ে এলো ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য পতন। এর ফলে সরাসরি ভোক্তার কাছে যাওয়া আমদানিকৃত পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটেই ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য বাড়ানো হলো ২৩ শতাংশ। শুধু সেটাই নয়, গত মাসে বড় অঙ্কের বৃদ্ধির পর আবারও বাড়ল এলপিজির দাম। বর্তমানে বাংলাদেশে কেরোসিন ব্যবহার করে সবচেয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। এদের এই অত্যাবশ্যকীয় পণ্যটিও মূল্যবৃদ্ধির কবল থেকে বাঁচেনি।
ডিজেলের দাম বৃদ্ধির ফল মানুষের ওপরে কীভাবে পড়ে, সচেতন মানুষ তা জানে। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধির কারণে যেমন নিজের দৈনন্দিন ভ্রমণের জন্য সরাসরি তাকে বেশি টাকা গুনতে হয়, তেমনি পণ্য পরিবহনের ব্যয় বৃদ্ধির কারণে দাম বেড়ে যায় সব পণ্যের। ওদিকে বাংলাদেশের বিদ্যুতের একটা বড় অংশ যেহেতু এখনও তরল জ্বালানিনির্ভর, তাই অচিরেই বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কথা নিশ্চয় আসবে। কিন্তু ইতিহাস বলে, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে পণ্যের মূল্য যতটুকু বাড়ার কথা, বেড়ে যায় তার কয়েক গুণ। আছে অন্যায্য দাবিও। যেমন শহর এলাকায় যেসব বাস সিএনজিতে চলে; ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিতে তারাও ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে ধর্মঘটে যোগ দিয়েছিল।
এটা সত্য, করোনার পরে পৃথিবীর প্রতিটি জ্বালানির দাম খুব দ্রুত বেড়ে গেছে। দীর্ঘদিন পৃথিবীর অর্থনীতি মন্দার মধ্যে থাকার ফলে জ্বালানি উৎপাদকরা তাদের উৎপাদন অনেক কমিয়ে এনেছিল। এখন পরিস্থিতি দ্রুতই অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ার কারণে হঠাৎ সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হওয়ার প্রেক্ষাপটে এই চরম বর্ধিত চাহিদা। চাহিদার তুলনায় জোগানের পরিমাণ কম হওয়ার কারণে দ্রুতই বেড়েছে জ্বালানির দাম। পরিস্থিতি এখন এমন, কিছু দেশ তাদের জ্বালানির অভাবে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না। ভারত, এমনকি চীনেরও নানা জায়গায় ব্ল্যাকআউটের খবর আমরা নিয়মিত পাচ্ছি।
বাংলাদেশের পরিকল্পনামন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন- এই মূল্যবৃদ্ধিই শেষ নয়। বিশ্ব প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে এই দাম আবারও বাড়তে পারে। সঙ্গত কারণেই একটা যুক্তি দেওয়া হচ্ছে, যেহেতু আমাদের দেশ এ পণ্যটি উৎপাদন করে না; পুরোপুরি আমদানি করতে হয়, তাহলে মূল্যবৃদ্ধি ছাড়া আমাদের কী করার ছিল?
আমরা এর মধ্যেই জেনে গেছি, গত কয়েক বছরে জ্বালানি তেলের মূল্যের নিম্নমুখী প্রবণতা আর করোনার সময়ে প্রায় শূন্যে নেমে যাওয়ায় সরকার এ বাবদ ৪০ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে। তাই সবাই যৌক্তিকভাবেই বলছে, এই সময়ে জনজীবনে কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার জন্য সরকার কি কয়েক হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে পারত না?
সাধারণ মানুষের জন্য এই ভয়ংকর পরিস্থিতিতেই দুটো পরিসংখ্যান এসেছে আমাদের সামনে। একটি হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় নাকি এখন ২ হাজার ৫০০ ডলার। মাত্র কিছুদিন আগের ২ হাজার ২০০ ডলারের তুলনায় এটা বেশ বড় উল্লল্ফম্ফন। 'জাদু'টা হয়েছে অবশ্য হিসাবের ভিত্তি বছর পরিবর্তনের মাধ্যমে। একটা দেশের মাথাপিছু আয় আর টিসিবির ট্রাকের পেছনের লাইন যখন একই সঙ্গে বাড়ে, তখন পরিসংখ্যানের ম্যানিপুলেশনকে সরিয়ে রেখেও খুব স্বাভাবিক কাণ্ডজ্ঞান দিয়ে বোঝা যায়, এ দেশের মানুষের আয়-বৈষম্য কোন জায়গায় পৌঁছেছে।
ব্র্যাক আর পিপিআরসি কোনো 'হেজিপেজি' প্রতিষ্ঠান নয়। কিন্তু যেহেতু তাদের কিছু যৌথ গবেষণা সরকারি বয়ানকে চ্যালেঞ্জ করে, তাই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরকারের মন্ত্রীদের ক্ষোভ-উষ্ফ্মা দেখা গিয়েছিল কিছুদিন আগেই। কয়েক মাস আগে তারা জানিয়েছিল, করোনার অভিঘাতে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। বলাবাহুল্য সরকারের পক্ষ থেকে তখন এ পরিসংখ্যানকে পত্রপাঠ বাতিল করা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠান দুটি তার সর্বসাম্প্রতিক গবেষণায় জানিয়েছে, এ সংখ্যাটি আরও বেড়েছে, যা এখন ৩ কোটি ২৪ লাখ।
করোনার আগে সরকারি হিসাবেই এ দেশে পৌনে চার কোটি মানুষ দরিদ্র ছিল। আর এই সংখ্যা যোগ করলে এই মুহূর্তে দেশে দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করা মানুষের সংখ্যা ৭ কোটি। অর্থাৎ দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষকে দারিদ্র্যসীমার নিচে রেখে চরম মূল্যবৃদ্ধির এক ভয়ংকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেওয়া হলো।
অর্থনীতিতে মন্দার সঙ্গে মূল্যস্টম্ফীতির সম্পর্ক সাধারণত উল্টো- মন্দায় মূল্যস্টম্ফীতি থাকে কমের দিকে। কিন্তু কিছু পরিস্থিতিতে ঘটে উল্টো- মন্দায়ও মূল্যস্টম্ফীতি বাড়ে। এটাই 'স্ট্যাগফ্লেশন' নামে পরিচিত। বাংলাদেশ এখন এই চক্রে পড়ে গেছে বলে আমার বিশ্বাস। এ পরিস্থিতিতে জরুরি হচ্ছে মূল্যস্টম্ফীতি আরও বাড়িয়ে দেয় এমন পদক্ষেপ না নেওয়া। কিন্তু নেওয়া হলো সেই পদক্ষেপই। টিসিবির ট্রাকের লাইন আরও বেশি দীর্ঘ হয়ে পড়া সরকারের জন্য কোনোভাবেই স্বস্তির বিষয় হবে না।
হশিক্ষক ও নাগরিক অধিকারকর্মী
মন্তব্য করুন