
জগন্নাথ পাঁড়ে ও সোহেল আহমেদ
১৪ নভেম্বর। বিচার বিভাগের দুই উজ্জ্বল নক্ষত্রকে হারানো গভীর দুঃখে ভরা দিন এটি। ২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর দু'জন সিনিয়র সহকারী জজ জগন্নাথ পাঁড়ে ও সোহেল আহমেদ ঝালকাঠি জেলায় উগ্র জঙ্গিবাদীদের বোমা হামলায় নিহত হন। এই দিনে আমি ভোলা জেলায় কর্মরত। জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে সবে যোগদান করেছি। এই ভোলা জেলাতেই শহীদ সোহেল আহমেদের নিবাস। স্বর্গীয় জগন্নাথ পাঁড়ের নিবাস বরগুনা জেলায়।
ভোলা জেলা সদরের কালীবাড়ি এলাকায় শহীদ সোহেল আহমেদের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। ভোলা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ছিলেন শহীদ সোহেল আহমেদ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলবি (অনার্স), এলএলএম পরীক্ষা শেষে ১৮তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শহীদ সোহেল আহমেদ সহকারী জজ পদে নিয়োগ পান। চাকরির প্রথম কর্মস্থল চট্টগ্রাম। এর পর পটুয়াখালী হয়ে ঝালকাঠি। কে জানত, এই ঝালকাঠিই হবে তার শেষ কর্মস্থল!
ভোলা জেলায় চাকরি করতে এসে দেখতে পেলাম, এই এলাকার বেশিরভাগ মানুষই প্রচণ্ড সংগ্রামী। একদিকে নদীভাঙন, অন্যদিকে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিত্য মোকাবিলা করতে হয় তাদের। এর মধ্য দিয়েও ভোলা তথা সারাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ঠিক তেমনিভাবে 'বাংলাদেশ' এখন সুযোগ্য নেতৃত্বে সঠিক পথে দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলেছে। এই গতি রোধ করতে নানামুখী চক্রান্ত অব্যাহত ছিল, রয়েছে এবং থাকবে। সব চক্রান্ত রোধ করতে হলে কয়েকটি বিষয়ে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ের কিছু ঘটনা নিয়ে আমাদের গভীরভাবে ভাবতে হবে। এসব ঘটনাকে তুচ্ছ ভেবে উড়িয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। এখন আমাদের যে কাজ করতে হবে তা হলো, বাংলাদেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে টিকে থাকতে হবে।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশের সংবিধানের মূল লক্ষ্য ছিল অসাম্প্রদায়িক চেতনার 'রাষ্ট্র' হবে বাংলাদেশ। ফলে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হলে জঙ্গিবাদ-নিপীড়নবাদের বিরুদ্ধে জাগরণ গড়ে তুলে সব সময় এটিকে চলমান রাখতে হবে। শুধু জঙ্গিবাদীরা নয়; তাদের সমর্থক নিপীড়নবাদীরাও বাংলাদেশকে পেছনে নিয়ে যেতে চায়। তাদের কোনো দল নেই। তারা হিংসা, নিপীড়ন বা দখলবাজির মাধ্যমে যে সমাজ গড়ে তুলতে চায়, সেটি অব্যাহত থাকলে আমাদের মানবিক বোধ বিপন্ন হতে বাধ্য। বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী, প্রগতিশীল, সুকুমারবৃত্তিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে হলে জ্ঞানবিজ্ঞানের চিন্তা-চর্চার প্রচার এবং প্রসার ঘটিয়ে জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আলোকিত করতে হবে। নিপীড়নবাদ-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জয়ী হতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মানবিক সমাজ গড়ে তুলতে হবে। তা না পারলে আমরা নিরাপদ থাকব- এটি ভাবার কোনো কারণ দেখা যায় না।
১৪ নভেম্বর 'জগন্নাথ-সোহেল'-এর শহীদ দিবসে আমরা প্রত্যাশা করি- ৩০ লাখ শহীদ আর দুই লাখ মা-বোনের সল্ফ্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের আগামীর বাংলাদেশ হবে সব ধরনের নিপীড়নমুক্ত আধুনিক প্রগতিশীল মানবিক বাংলাদেশ।
জেলা ও দায়রা জজ, ভোলা
মন্তব্য করুন