বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ৭৬তম সাধারণ অধিবেশনে ছয় দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন। তার মধ্যে দুটি দফা বাংলাদেশের স্বার্থের পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষভাবে উল্লেখের দাবি রাখে- জলবায়ু সমস্যা এবং রোহিঙ্গা সংকট। তিনি ধনী ও শিল্পোন্নত দেশের কার্বন নিঃসরণ হ্রাস, ক্ষতিপূরণ ও টেকসই অভিযোজনে অর্থায়ন এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী জোরালো প্রস্তাব পেশ করেন। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বিশ্ববাসীর জোরালো ভূমিকা ও সহযোগিতারও দাবি তোলেন। তিনি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, রোহিঙ্গা সংকট এবার পঞ্চম বছরে পদার্পণ করল। কিন্তু এখন পর্যন্ত বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের একজনকেও ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। এরপর বিশেষ জোর দিয়ে তিনি দাবি তোলেন, মিয়ানমারকে অবশ্যই তার নাগরিকদের প্রত্যাবর্তনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সহযোগিতা করতে সদা প্রস্তুত।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী নিষ্ফ্ক্রিয় আন্তর্জাতিক মঞ্চকে ক্ষোভের সঙ্গে মনে করিয়ে দিলেন তাদের বিশেষ দায়িত্বের বিষয়টি। সাধারণ অধিবেশনে ভাষণের আগেই বাংলাদেশের পৃষ্ঠপোষকতায় 'হাই লেভেল সাইড ইভেন্ট অন ফরসিবলি ডিসপ্লেস মিয়ানমার ন্যাশনালস (রোহিঙ্গা) ক্রাইসিস :ইম্পারেটিভ ফর এ সাসটেইনেবল সলিউশন' শীর্ষক ভার্চুয়াল বৈঠকে রোহিঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশের ক্ষোভ ঝরে পড়ে আন্তর্জাতিক মহলে।
আত্মনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্টম্ন ধীরে ধীরে পথ খুঁজে নিচ্ছে। এ পথ খুঁজতে যার অবদান সবচেয়ে বেশি, তার নামই শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের স্বপ্টেম্নর উন্নয়নের পথ গলিয়ে আজ শেখ হাসিনার নিজ পরিচয় অনেক বড় হয়ে ধরা দিয়েছে বিশ্ব মানুষের কাছে। যেসব দেশ বাংলাদেশকে নিয়ে পাশ-তাকানো মন্ত্রে বিশ্বাস করত, তারা আজ শেখ হাসিনার বাংলাদেশকে মনোযোগ দিয়েই দেখতে শুরু করেছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনার জাতিসংঘের ভাষণটি বিশেষ মর্যাদার দাবি রাখে বৈকি!
'পদ্মা সেতু নিজের টাকায় করা হবে' এমন একটি ঘোষণা যখন দিয়ে বসলেন শেখ হাসিনা, তখন বিশ্ব নেতারাই নন, বাংলাদেশের অনেক চিন্তাবিদও মুখ লুকিয়ে হেসেছিলেন। গরিবের ঘোড়া রোগ! কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি। বরং তাতে তার জেদ আরও শক্ত হয়েছে। পদ্মা সেতুর পর আরও কিছু মেগা প্রকল্প চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়- বাংলাদেশ কচ্ছপের মতো ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়েও শেষ দৌড়ে অনেকের চেয়ে এগিয়ে থাকছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিশেষ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন এশিয়ার দুই পরাশক্তি চীন এবং ভারতের সঙ্গে তার দেশের সম্পর্কের সেতুবন্ধনের রসায়নে। তিনি পাশে রেখেছেন চীনকে, পাশে রেখেছেন ভারতকে। প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দেশের দৃষ্টি তার দিক থেকে সরে যেতে দেননি। বিদেশনীতির এক বিশেষ ভূমিকার জোরে বাংলাদেশ ধরে রেখেছে প্রতিবেশী ভারত এবং চীনের সঙ্গে সমান বন্ধুত্বের সম্পর্ক।
বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল পাঁচটি অর্থনীতির মধ্যে অন্যতম। জিডিপিতে বাংলাদেশ বিশ্বের ৪১তম স্থানে পৌঁছে গেছে। দারিদ্র্যের হার গত এক দশকে ৩১ দশমিক ৫ থেকে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে তিনগুণ। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বর্তমানে ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। জাতিসংঘের অধিবেশনে শেখ হাসিনার মুখ থেকে এ হিসাবগুলো শোনার পর বিশ্বনেতারা কি চঞ্চল হয়ে উঠেছিলেন? আমার ধারণা, তারা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে ছিলেন বাংলাদেশের প্রতি।
বাংলাদেশের মানুষ এক সময় যখন বিদেশে গিয়ে বলত- তাদের দেশ বাংলাদেশ, তখন বিদেশিরা 'বাংলাদেশ কোথায়' বলে ভ্রু কুঁচকাত। কিন্তু আজ তারাই বিস্ময়ে দেখছে, ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলেও প্রতিযোগিতার শেষ দাগে সাফল্যের মালা পরে বাংলাদেশ তার দৌড় শেষ করতে পেরেছে। শেখ হাসিনা ঠিকই বলেছেন, বাংলাদেশকে পিছিয়ে নেওয়ার সুযোগ আর কারও নেই। শুরুটা যেমনই হোক- যার শেষ ভালো, তার সব ভালো। এ মন্ত্রেই এগিয়ে যাক বাংলাদেশ। এ মন্ত্রেই এগিয়ে যান বাংলাদেশের নন্দিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা; কলাম লেখক
ceo@ilcb.net

বিষয় : অন্যদৃষ্টি সুধীর সাহা

মন্তব্য করুন