- মতামত
- সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির শিক্ষা
সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির শিক্ষা

ইসলাম বল প্রয়োগে নয় বরং সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির দ্বারা মানুষের হৃদয় জয় করার শিক্ষাই দেয়। বল প্রয়োগ করলে অন্যের অধিকার যেমন দেওয়া যায় না, তেমনি আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভও এর দ্বারা সম্ভব নয়। ধর্মে বল প্রয়োগ না করতে পবিত্র কোরআন সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ করে। পবিত্র কোরআন সুস্পষ্ট করে নির্দেশ দিয়েছে যে, ধর্ম বিশ্বাসের বিস্তার ঘটাতে তরবারি ধারণ করো না, বরং ধর্ম বিশ্বাসের অনুপম বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত সুন্দর শিক্ষা প্রত্যেকেরই উপস্থাপন করা উচিত, যাতে তার অনুকরণীয় উত্তম আদর্শে আকৃষ্ট হয়ে অন্যরাও তা গ্রহণ করে নেয়। এমনকি, বিশ্বনবী (সা.) মদিনায় হিজরত করার পরও শত্রুরা তার ও তার সঙ্গীদের ওপর চড়াও হলে সম্পূর্ণ অসজ্জিত অবস্থায় থেকেও তাদের ফিরতি যুদ্ধ করতে হয়েছে।
ইতিহাস এই সাক্ষ্যই বহন করছে যে, মুসলমানরা কোনো যুদ্ধে জড়িয়ে গেলেও কোনো একজনকেও মুসলমান হতে কখনও বাধ্য করা হয়নি। প্রত্যেক ব্যক্তিরই ইবাদতের স্বাধীনতা আছে। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মহানবী (সা.) সুনির্দিষ্ট করে বলে দিতেন, 'বয়োবৃদ্ধদের, নারীদের এবং শিশুদের অনিষ্ট করবে না আর উপাসনালয়ের ক্ষতি সাধন করবে না।' এমনকি বৃক্ষরাজি পর্যন্ত তিনি কর্তন করতে নিষেধ করেছেন।
মুসলমান দেশগুলোতে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মাবলম্বীরা যাতে তাদের অধিকার সঠিকভাবে ভোগ করতে পারে, সেজন্য অমুসলমানদের থেকে 'জিজিয়া' 'নিরাপত্তা ঝুঁকি কর' নেওয়া হতো। আর কারও যদি তা দেওয়ার সামর্থ্য না থাকত, তবে তা আদায় করা থেকে তাকে অব্যাহতিও দেওয়া হতো। মহানবীর (সা.) দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.)-এর যুগে অজ্ঞাত এক খুনি, ইহুদি এক ব্যক্তিকে হত্যা করলে হজরত ওমর (রা.) খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন। তাই, তিনি (রা.) সবাইকে মসজিদে নববীতে ডেকে একত্র করলেন এবং খোদাভীতির কথা স্মরণ করিয়ে খুনির ব্যাপারে অনুসন্ধান করলেন। এতে উপস্থিত মুসলমানদের একজন সেই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে নিল। অবশেষে সেই ইহুদি পরিবারের সম্মতিতে খুনের মুক্তিপণ আদায় করে সেই খুনি অব্যাহতি পায়।
ইসলাম শত্রুদের সঙ্গেও দয়ার্দ্র আচরণ করে, তা শান্তিকালীন সময়েই হোক বা যুদ্ধাবস্থায়ই হোক। সর্বাবস্থায় ইসলাম অমুসলমানদের অধিকার মর্যাদার সঙ্গে সংরক্ষণ করে। ইসলামে বল প্রয়োগ করা হলে, মহানবী (সা.) বা তার (সা.) খলিফাগণের যুগে সংঘটিত এমন দৃষ্টান্তমূলক ঘটনা ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যেত না। আসলে ইসলাম একটি যুদ্ধংদেহী ধর্ম (নাউযুবিল্লাহ) এটি অপবাদ ও সর্বৈব-মিথ্যা। বাস্তবতা হলো, কী পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছিল, যখন সর্বশক্তিমান আল্লাহ মুসলমানদের যুদ্ধের অনুমতি দিলেন? আসুন, আমরা দেখে নিই। আল্লাহ বলেন, 'আর যারা তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে তোমরা আল্লাহর পথে তাদের সঙ্গে যুদ্ধ কর এবং সীমা লঙ্ঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।' (সুরা বাকারা, আয়াত ১৯০) চড়াও হওয়া বা আক্রমণ করার অধিকার ইসলামে নেই। ইসলামের বাস্তব শিক্ষা হলো, কেবল আক্রান্ত হলেই তুমি যুদ্ধ করতে পার। অধিকন্তু, এখানে এ নির্দেশও রয়েছে যে, আক্রমণকারী বা আগ্রাসী হয়ো না, চুক্তি ভঙ্গকারী হয়ো না।
ইসলাম এমন এক শান্তিপ্রিয় ধর্ম যেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবহারের শিক্ষা দেয়। আল্লাহপাক সবাইকে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী জীবন পরিচালনার তৌফিক দান করুন।
ইসলামে সমাজে ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দেয়। সমাজে ভাই ভাই হিসেবে একে অপরের হিতাকাঙ্ক্ষী হিসেবে চলার নির্দেশনা দিয়েছেন রাসুল (সা.)। এমনকি হাদিসে বলা হয়েছে, প্রকৃত মুসলিম সেই, যার হাত ও মুখ থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ। এমনকি অন্য ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গেও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের তাগিদ দিয়েছে ইসলাম। এমনকি কাউকে কষ্ট না দেওয়া ইমানের শর্ত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন :আল্লাহর শপথ, মুমিন নয়, আল্লাহর শপথ! মুমিন নয়, আল্লাহর শপথ! মুমিন নয়। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! সে কে? তিনি বললেন, যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদে থাকে না। এ হাদিসে প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়াকে ইমানের পরিপন্থি বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এখানে প্রতিবেশী মুসলিম হতে পারে, আবার অমুসলিমও হতে পারে। সুতরাং একজন অমুসলিম প্রতিবেশীকে কষ্ট দিলেও সেটা ইমানের পরিপন্থি বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
ইসলামী গবেষক
masumon83@yahoo.com
মন্তব্য করুন