
যে বয়সে আমাদের সন্তানদের পড়ালেখায় মনোযোগী হওয়ার কথা, সে বয়সে ছেলেমেয়েদের অপরাধে জড়ানোর কারণ কী হতে পারে? বিশেষজ্ঞদের মতে, দুর্বল পারিবারিক বন্ধন, সন্তানকে যথেষ্ট সময় না দেওয়া, সামাজিক অবক্ষয়, অল্প বয়সে স্মার্টফোনসহ উন্নত প্রযুক্তি উপকরণের নাগাল পাওয়া, সঙ্গদোষ, যৌক্তিকতা বিচার না করেই সব আবদার পূরণ করা এবং সন্তান কী করছে সে বিষয়ে পর্যবেক্ষণের অভাব ইত্যাদি নানাবিধ কারণে কিশোরদের অপরাধে যুক্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। মানুষ অপরাধী হয়ে জন্মায় না ঠিক কিন্তু পারিপার্শ্বিক পরিবেশের প্রভাবে তারা ক্রমশ অপরাধী হয়ে উঠছে। অপরাধী হয়ে ওঠার কিছু বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা যাক।
প্রথম কারণ সামাজিক ব্যবস্থা। রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা থেকে আমাদের অনেকের মাঝে বিরাজ করছে হতাশা, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। সেই হতাশা থেকেই ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এই হতাশা ও ক্ষোভের কারণে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটে যায় বড় ধরনের অপরাধ, যার কারণে অনেক সময় খুনখারাবি পর্যন্ত হয়ে যায়। আমাদের কিশোর সমাজ এই কালচার দেখে বড় হচ্ছে। অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে এসব ঘটনার সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করে এবং বিপথগামী কিশোর সমাজ আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
কিশোর অপরাধের অন্যতম কারণ পরিবার। স্বামী-স্ত্রীর নিত্য ঝগড়া-কলহ আর বিয়ে বিচ্ছেদ সন্তানের ভরণ-পোষণের সঙ্গে পরিবারকর্তা বা অভিভাবকদের অসচেতনতার কারণে সন্তান বেপরোয়া হয়ে বিপথে চলে যায়। সন্ধ্যার পর কিশোররা যাতে বাড়ির বাইরে না থাকে, সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার দায়িত্ব অবশ্যই অভিভাবকদের নিতে হবে। পারিবারিক মূল্যবোধের শিক্ষায় যথেষ্ট ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্কের জায়গাটা দুর্বল হয়ে গেলে তা কিশোরদের খুব দ্রুত অপরাধের দিকে নিয়ে যেতে পারে। অর্থাভাব যেমন একটি কিশোরকে অপরাধ জগতের দিকে ধাবিত করে, তেমনি অর্থের প্রাচুর্যও কখনও অনর্থের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সেবন করছে নানা ধরনের ভয়াবহ মাদক দ্রব্য।
আমাদের সন্তানরা আকাশ সংস্কৃতির অবাধ প্রবাহ এবং টিভি মিডিয়ায় দেখানো নৃশংসতার সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। বর্তমান প্রযুক্তির যুগে টেলিভিশন, মোবাইল, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, যেমন- ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো শিশু-কিশোরদের প্রভাবিত করছে ব্যাপকভাবে। তাই ওই গণমাধ্যমগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে সমাজ-পরিবার যথেষ্ট সচেতন না হলে কোমলমতি শিশু-কিশোরদের বিপথগামী হয়ে অপরাধে লিপ্ত হয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক। সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ- ছোটবেলা থেকেই প্রবাদটি আমরা জেনে আসছি। আমার সন্তান আমার প্রতিবেশীর কেমন সন্তানের সঙ্গে মিশছে এটা আমার জানা একান্ত কর্তব্য। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে উত্তরায় ডিসকো এবং নাইন স্টার গ্রুপের বলি কিশোর আদনান হত্যার পর অনেকদিন কিশোর গ্যাং কালচার আড়ালে ছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থান ও তৎপরতার কারণে গ্যাং কালচার স্তিমিত ছিল। এটা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে গত বছর থেকে। এই গ্যাং কালচার সমাধানে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর ওপর জোর দেওয়া যেতে পারে।
অভিভাবককে তাদের সন্তানের ব্যাপারে কঠোর হওয়া প্রয়োজন। তাদের চলাফেরায় সার্বক্ষণিক নজর রাখা দরকার। সন্তানের সঙ্গে অভিভাবককে বন্ধুর মতো আচরণ করতে হবে। যদি সন্তানের সঙ্গে পিতা বন্ধুসুলভ আচরণ করে তাহলে এ সন্তান কিছুটা হলেও বিপথগামিতা থেকে দূরে থাকবে বলে আশা করা যায়। পারিবারিক বন্ধন করতে হবে দৃঢ়। অভিভাবকরা প্রয়োজন ছাড়া টাকা-পয়সা তাদের কিশোর সন্তানের হাতে তুলে দিয়ে তাদের আরও বিপথগামী করছে। একটি শিশু জন্মের পর পারিবারিক পরিবেশে প্রথম মাতা-পিতার সংস্পর্শে আসে। শিশুর সামাজিক জীবনের ভিত্তি, তার প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারেই রচিত হয়। তাই তাদের আচরণ ও ব্যক্তিত্ব গঠনে পরিবার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। কিশোর-অপরাধ প্রতিরোধের উত্তম স্থান হলো এই পরিবার। পরিবার ও সমাজের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের ইতিবাচক পদক্ষেপ ও স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর উদ্যোগ ছাড়া গ্যাং কালচার রোধ করা সম্ভব নয়। কিশোর অপরাধ দমনে শুধু আইন প্রয়োগই নয়, সামাজিক সচেতনতাও জরুরি।
উপযুক্ত শিক্ষার অভাবে কিশোরদের মধ্যে বখাটেপনা এবং নিত্যনতুন অপরাধপ্রবণতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে ক্রমেই। করোনায় দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় অনলাইনের প্রতি আসক্তি বেড়েছে কয়েকগুণ। স্কুল-কলেজ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এই গ্যাং আগের চেয়ে বেশি সক্রিয় হয়েছে। এর পেছনে আরও কাজ করছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। শিশুদের প্রতিভা ও মেধা বিকাশে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। যেমন- স্কাউটিং, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গণিত অলিম্পিয়াড, রোবোটিং, বই পড়া, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ইত্যাদি আয়োজন করা যেতে পারে নিয়মিত। আক্ষরিক অর্থে এই কিশোর-তরুণরাই দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের বিপথগামী হওয়ার আগেই সামাজিক আন্দোলন জরুরি।
সামাজিক যোগাযোগের দোহাইয়ে যারা অসামাজিক কার্যক্রমে জড়িত, তাদের ওপর কঠোর নজরদারি এখন সময়ের দাবি। বিশেষ করে ফেসবুকের অপব্যবহার করে এসব চক্র যেসব অপরাধ ঘটিয়ে চলেছে তা ঠেকাতে হলে কঠোর প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ দরকার।
আরেকটি বিষয়ে আমাদের নজর দিতে হবে, আর তা হচ্ছে কিশোর সংশোধন কেন্দ্র। প্রচলিত আইনে ১৮ বছরের নিচে অপ্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় তাদের বড় কোনো শাস্তির পরিবর্তে পাঠানো হচ্ছে গাজীপুরে অবস্থিত কিশোর সংশোধনাগারে। যে কিশোরদের সংশোধনাগারে নেওয়া হচ্ছে, তাদের জন্য সঠিক ব্যবস্থাপনা আছে কি? একজন কিশোর সংশোধনাগার থেকে বেরিয়ে এসে যদি আবার খারাপ অপরাধে জড়িয়েই পড়ে, তবে তা আমাদের জন্য চরম ব্যর্থতা। প্রয়োজনে আইন সংস্কার এবং কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা এ দুই বিষয় নিয়েও আমাদের ভাবার অবকাশ থেকে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি অভিভাবক, শিক্ষকসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। পুরো কমিউনিটিকে এগিয়ে আসতে হবে। কিশোর গ্যাং কালচার এখন নিছকই এক সমস্যা নয়, এটা এখন মহাসংকটে পরিণত হয়েছে। এই সংকট নানাভাবে, নানা মাত্রিকতায় প্রকাশিত হচ্ছে। কিশোর গ্যাংয়ের আধিপত্য কমানো ও তাদের অপরাধ প্রতিরোধে প্রয়োজন পরিবার, সমাজের নেতা, শিক্ষক-শিক্ষিকা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, মিডিয়াসহ প্রত্যেকের আন্তরিক সচেতনতা ও সক্রিয় ভূমিকা।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল ও পরিচালক (লজিস্টিক্স), রিজিয়ন সদর দপ্তর, কক্সবাজার, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ
প্রথম কারণ সামাজিক ব্যবস্থা। রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা থেকে আমাদের অনেকের মাঝে বিরাজ করছে হতাশা, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। সেই হতাশা থেকেই ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এই হতাশা ও ক্ষোভের কারণে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটে যায় বড় ধরনের অপরাধ, যার কারণে অনেক সময় খুনখারাবি পর্যন্ত হয়ে যায়। আমাদের কিশোর সমাজ এই কালচার দেখে বড় হচ্ছে। অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে এসব ঘটনার সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করে এবং বিপথগামী কিশোর সমাজ আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
কিশোর অপরাধের অন্যতম কারণ পরিবার। স্বামী-স্ত্রীর নিত্য ঝগড়া-কলহ আর বিয়ে বিচ্ছেদ সন্তানের ভরণ-পোষণের সঙ্গে পরিবারকর্তা বা অভিভাবকদের অসচেতনতার কারণে সন্তান বেপরোয়া হয়ে বিপথে চলে যায়। সন্ধ্যার পর কিশোররা যাতে বাড়ির বাইরে না থাকে, সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার দায়িত্ব অবশ্যই অভিভাবকদের নিতে হবে। পারিবারিক মূল্যবোধের শিক্ষায় যথেষ্ট ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্কের জায়গাটা দুর্বল হয়ে গেলে তা কিশোরদের খুব দ্রুত অপরাধের দিকে নিয়ে যেতে পারে। অর্থাভাব যেমন একটি কিশোরকে অপরাধ জগতের দিকে ধাবিত করে, তেমনি অর্থের প্রাচুর্যও কখনও অনর্থের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সেবন করছে নানা ধরনের ভয়াবহ মাদক দ্রব্য।
আমাদের সন্তানরা আকাশ সংস্কৃতির অবাধ প্রবাহ এবং টিভি মিডিয়ায় দেখানো নৃশংসতার সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। বর্তমান প্রযুক্তির যুগে টেলিভিশন, মোবাইল, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, যেমন- ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো শিশু-কিশোরদের প্রভাবিত করছে ব্যাপকভাবে। তাই ওই গণমাধ্যমগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে সমাজ-পরিবার যথেষ্ট সচেতন না হলে কোমলমতি শিশু-কিশোরদের বিপথগামী হয়ে অপরাধে লিপ্ত হয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক। সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ- ছোটবেলা থেকেই প্রবাদটি আমরা জেনে আসছি। আমার সন্তান আমার প্রতিবেশীর কেমন সন্তানের সঙ্গে মিশছে এটা আমার জানা একান্ত কর্তব্য। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে উত্তরায় ডিসকো এবং নাইন স্টার গ্রুপের বলি কিশোর আদনান হত্যার পর অনেকদিন কিশোর গ্যাং কালচার আড়ালে ছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থান ও তৎপরতার কারণে গ্যাং কালচার স্তিমিত ছিল। এটা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে গত বছর থেকে। এই গ্যাং কালচার সমাধানে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর ওপর জোর দেওয়া যেতে পারে।
অভিভাবককে তাদের সন্তানের ব্যাপারে কঠোর হওয়া প্রয়োজন। তাদের চলাফেরায় সার্বক্ষণিক নজর রাখা দরকার। সন্তানের সঙ্গে অভিভাবককে বন্ধুর মতো আচরণ করতে হবে। যদি সন্তানের সঙ্গে পিতা বন্ধুসুলভ আচরণ করে তাহলে এ সন্তান কিছুটা হলেও বিপথগামিতা থেকে দূরে থাকবে বলে আশা করা যায়। পারিবারিক বন্ধন করতে হবে দৃঢ়। অভিভাবকরা প্রয়োজন ছাড়া টাকা-পয়সা তাদের কিশোর সন্তানের হাতে তুলে দিয়ে তাদের আরও বিপথগামী করছে। একটি শিশু জন্মের পর পারিবারিক পরিবেশে প্রথম মাতা-পিতার সংস্পর্শে আসে। শিশুর সামাজিক জীবনের ভিত্তি, তার প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারেই রচিত হয়। তাই তাদের আচরণ ও ব্যক্তিত্ব গঠনে পরিবার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। কিশোর-অপরাধ প্রতিরোধের উত্তম স্থান হলো এই পরিবার। পরিবার ও সমাজের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের ইতিবাচক পদক্ষেপ ও স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর উদ্যোগ ছাড়া গ্যাং কালচার রোধ করা সম্ভব নয়। কিশোর অপরাধ দমনে শুধু আইন প্রয়োগই নয়, সামাজিক সচেতনতাও জরুরি।
উপযুক্ত শিক্ষার অভাবে কিশোরদের মধ্যে বখাটেপনা এবং নিত্যনতুন অপরাধপ্রবণতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে ক্রমেই। করোনায় দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় অনলাইনের প্রতি আসক্তি বেড়েছে কয়েকগুণ। স্কুল-কলেজ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এই গ্যাং আগের চেয়ে বেশি সক্রিয় হয়েছে। এর পেছনে আরও কাজ করছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। শিশুদের প্রতিভা ও মেধা বিকাশে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। যেমন- স্কাউটিং, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গণিত অলিম্পিয়াড, রোবোটিং, বই পড়া, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ইত্যাদি আয়োজন করা যেতে পারে নিয়মিত। আক্ষরিক অর্থে এই কিশোর-তরুণরাই দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের বিপথগামী হওয়ার আগেই সামাজিক আন্দোলন জরুরি।
সামাজিক যোগাযোগের দোহাইয়ে যারা অসামাজিক কার্যক্রমে জড়িত, তাদের ওপর কঠোর নজরদারি এখন সময়ের দাবি। বিশেষ করে ফেসবুকের অপব্যবহার করে এসব চক্র যেসব অপরাধ ঘটিয়ে চলেছে তা ঠেকাতে হলে কঠোর প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ দরকার।
আরেকটি বিষয়ে আমাদের নজর দিতে হবে, আর তা হচ্ছে কিশোর সংশোধন কেন্দ্র। প্রচলিত আইনে ১৮ বছরের নিচে অপ্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় তাদের বড় কোনো শাস্তির পরিবর্তে পাঠানো হচ্ছে গাজীপুরে অবস্থিত কিশোর সংশোধনাগারে। যে কিশোরদের সংশোধনাগারে নেওয়া হচ্ছে, তাদের জন্য সঠিক ব্যবস্থাপনা আছে কি? একজন কিশোর সংশোধনাগার থেকে বেরিয়ে এসে যদি আবার খারাপ অপরাধে জড়িয়েই পড়ে, তবে তা আমাদের জন্য চরম ব্যর্থতা। প্রয়োজনে আইন সংস্কার এবং কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা এ দুই বিষয় নিয়েও আমাদের ভাবার অবকাশ থেকে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি অভিভাবক, শিক্ষকসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। পুরো কমিউনিটিকে এগিয়ে আসতে হবে। কিশোর গ্যাং কালচার এখন নিছকই এক সমস্যা নয়, এটা এখন মহাসংকটে পরিণত হয়েছে। এই সংকট নানাভাবে, নানা মাত্রিকতায় প্রকাশিত হচ্ছে। কিশোর গ্যাংয়ের আধিপত্য কমানো ও তাদের অপরাধ প্রতিরোধে প্রয়োজন পরিবার, সমাজের নেতা, শিক্ষক-শিক্ষিকা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, মিডিয়াসহ প্রত্যেকের আন্তরিক সচেতনতা ও সক্রিয় ভূমিকা।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল ও পরিচালক (লজিস্টিক্স), রিজিয়ন সদর দপ্তর, কক্সবাজার, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন