ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের আবাসন তথা ছাত্রী হলে বিবাহিতরা থাকতে পারবেন না- এমন পুরোনো 'নিয়ম' নতুন করে সামনে এসে স্বভাবতই আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। রোববার সমকালে প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্রীদের হলে আসন বণ্টন সম্পর্কিত নীতিমালার সংশ্নিষ্ট ধারাটির ওপর যে আলোকপাত করা হয়েছে, তা সময়োচিত। ওই ধারায় বলা হয়েছে- 'কোনো ছাত্রী বিবাহিত হলে অবিলম্বে কর্তৃপক্ষকে জানাবেন। অন্যথায় নিয়ম ভঙ্গের কারণে তার সিট বাতিল হবে। শুধু বিশেষ ক্ষেত্রে বিবাহিত ছাত্রীকে চলতি সেশনে হলে থেকে অধ্যয়নের সুযোগ দেওয়া হবে। অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রী হলে থাকতে পারবেন না।' সদ্য শতবর্ষ পালনকারী দেশের প্রাচীনতম ও নানা বিবেচনায় প্রধানতম বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের 'বিধান' একুশ শতকে এসে বহাল থাকা সত্যিই বিস্ময়কর। আমরা মনে করি, এই বিধান যেমন অমানবিক, তেমনই অবৈজ্ঞানিক। শুধু তাই নয়- অসাম্যমূলক এই ধারার মধ্য দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ছাত্র ও ছাত্রীদের মধ্যে কাঠামোগত বৈষম্যও উৎসাহিত করা হয়েছে। বিধানটি বাতিলের দাবি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরা যে আবেদন জানিয়েছেন, আমরা তা সমর্থন করি।
আমরা মনে করি, কথিত ওই নিয়মের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও প্রজ্ঞার বিকাশ ও উৎকর্ষ সাধনে সক্রিয় থাকা। এর সঙ্গে শিক্ষার্থীর বৈবাহিক পরিস্থিতির কী সম্পর্ক? এটা প্রাচীন সামন্তীয় ব্যবস্থা ও নারীবিরোধী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ছাড়া আর কী হতে পারে? বিবাহিত ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত আবাসনে থাকতে পারবেন না- এমন ব্যবস্থা বিশ্বের আর কোনো দেশের আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। যারা 'বিবাহিত' ছাত্রীদের হলে থাকা অনুচিত মনে করেন, তারা ক্রমে ছাত্রীদের হৃদয়ঘটিত সম্পর্কের ক্ষেত্রেও যে হস্তক্ষেপ করবেন না- এর নিশ্চয়তা কী? এই অবৈজ্ঞানিক, পশ্চাৎপদ ও প্রগতিবিরোধী ব্যবস্থা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে পারে না।
এও কম হতাশার বিষয় নয় যে, বর্তমান কর্তৃপক্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কেও সম্পূর্ণ উদাসীন। এক শতাব্দী আগে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে থাকা পূর্ববঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল এখানকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষা ও সংস্কৃতিগত উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে। যাতে কৃষিভিত্তিক পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন প্রজন্ম শিক্ষার আলো গ্রহণ করে সমাজ ও রাষ্ট্রে উপযুক্ত অবদান ও অবস্থান নিশ্চিত করতে পারে। যেহেতু বিপুল গ্রামাঞ্চল ও মফস্বলের শিক্ষার্থীদের ঢাকায় আবাসনের ব্যবস্থা নেই; কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোর বিপরীতে এতে ছাত্র ও ছাত্রী হলের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। গত এক শতাব্দীতে এই অঞ্চলের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রভূত পরিবর্তন সাধিত হয়েছে; কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিংহভাগ শিক্ষার্থী এখনও নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসে। তাদের মধ্যে ছাত্রীদের অবস্থা আরও নাজুক। তাদের যেমন সামাজিক বাধা পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত আসতে হয়, তেমনই চালিয়ে যেতে হয় অর্থনৈতিক সংগ্রাম। এর মধ্যে বিবাহপর্ব সম্পন্ন করার সামাজিক বাস্তবতাও প্রকট। ছাত্রীদের সেই সংগ্রাম ও বাস্তবতায় সহায়ক ভূমিকার বদলে বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে অমূলক নিয়মের বেড়াজাল সৃষ্টি করছে, তা নেহাত অমানবিক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সম্ভবত এও ভুলে গেছে- আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এই উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাকি বাংলাদেশকে পথ দেখায়। এর ইতিবাচক দিক যেমন, তেমনই নেতিবাচক উদাহরণও তেমন দ্রুত অন্যান্য উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সম্প্রসারিত হয়। আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে দেখছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলও একই ঘোষণা দিয়েছে। দেশের আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় একই অবিমৃষ্যকারিতা প্রদর্শনের আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নিয়ম বাতিল করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে নিয়মটি আগে থেকেই থাকার যে অজুহাত কর্তৃপক্ষ প্রদর্শন করছে, তা নেহাত খোঁড়া। এই বিশ্ববিদ্যালয় অতীতের অনেক অগ্রহণযোগ্য নিয়মই বাতিল করেছে; এটাও যত দ্রুত ছুড়ে ফেলা যায়, ততই মঙ্গল। আর কে না স্বীকার করে- পুরোনো ও জীর্ণ নিয়ম-নীতিকে ছুড়ে ফেলে নতুনের আবাহনই বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক দায়িত্ব।
আমরা মনে করি, কথিত ওই নিয়মের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও প্রজ্ঞার বিকাশ ও উৎকর্ষ সাধনে সক্রিয় থাকা। এর সঙ্গে শিক্ষার্থীর বৈবাহিক পরিস্থিতির কী সম্পর্ক? এটা প্রাচীন সামন্তীয় ব্যবস্থা ও নারীবিরোধী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ছাড়া আর কী হতে পারে? বিবাহিত ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত আবাসনে থাকতে পারবেন না- এমন ব্যবস্থা বিশ্বের আর কোনো দেশের আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। যারা 'বিবাহিত' ছাত্রীদের হলে থাকা অনুচিত মনে করেন, তারা ক্রমে ছাত্রীদের হৃদয়ঘটিত সম্পর্কের ক্ষেত্রেও যে হস্তক্ষেপ করবেন না- এর নিশ্চয়তা কী? এই অবৈজ্ঞানিক, পশ্চাৎপদ ও প্রগতিবিরোধী ব্যবস্থা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে পারে না।
এও কম হতাশার বিষয় নয় যে, বর্তমান কর্তৃপক্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কেও সম্পূর্ণ উদাসীন। এক শতাব্দী আগে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে থাকা পূর্ববঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল এখানকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষা ও সংস্কৃতিগত উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে। যাতে কৃষিভিত্তিক পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন প্রজন্ম শিক্ষার আলো গ্রহণ করে সমাজ ও রাষ্ট্রে উপযুক্ত অবদান ও অবস্থান নিশ্চিত করতে পারে। যেহেতু বিপুল গ্রামাঞ্চল ও মফস্বলের শিক্ষার্থীদের ঢাকায় আবাসনের ব্যবস্থা নেই; কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোর বিপরীতে এতে ছাত্র ও ছাত্রী হলের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। গত এক শতাব্দীতে এই অঞ্চলের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রভূত পরিবর্তন সাধিত হয়েছে; কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিংহভাগ শিক্ষার্থী এখনও নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসে। তাদের মধ্যে ছাত্রীদের অবস্থা আরও নাজুক। তাদের যেমন সামাজিক বাধা পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত আসতে হয়, তেমনই চালিয়ে যেতে হয় অর্থনৈতিক সংগ্রাম। এর মধ্যে বিবাহপর্ব সম্পন্ন করার সামাজিক বাস্তবতাও প্রকট। ছাত্রীদের সেই সংগ্রাম ও বাস্তবতায় সহায়ক ভূমিকার বদলে বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে অমূলক নিয়মের বেড়াজাল সৃষ্টি করছে, তা নেহাত অমানবিক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সম্ভবত এও ভুলে গেছে- আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এই উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাকি বাংলাদেশকে পথ দেখায়। এর ইতিবাচক দিক যেমন, তেমনই নেতিবাচক উদাহরণও তেমন দ্রুত অন্যান্য উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সম্প্রসারিত হয়। আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে দেখছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলও একই ঘোষণা দিয়েছে। দেশের আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় একই অবিমৃষ্যকারিতা প্রদর্শনের আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নিয়ম বাতিল করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে নিয়মটি আগে থেকেই থাকার যে অজুহাত কর্তৃপক্ষ প্রদর্শন করছে, তা নেহাত খোঁড়া। এই বিশ্ববিদ্যালয় অতীতের অনেক অগ্রহণযোগ্য নিয়মই বাতিল করেছে; এটাও যত দ্রুত ছুড়ে ফেলা যায়, ততই মঙ্গল। আর কে না স্বীকার করে- পুরোনো ও জীর্ণ নিয়ম-নীতিকে ছুড়ে ফেলে নতুনের আবাহনই বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক দায়িত্ব।
মন্তব্য করুন