ঢাকা বুধবার, ২১ মে ২০২৫

অন্যদৃষ্টি

রক্তদাতা নেটওয়ার্ক যে জন্য জরুরি

রক্তদাতা নেটওয়ার্ক যে জন্য জরুরি

প্রতীকী ছবি

শাহাদাত হোসাইন

প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১১:০১

যদি জিজ্ঞেস করা হয়, কোন গ্রুপের রক্ত দুর্লভ, তাহলে বেশির ভাগ মানুষ নিশ্চিতভাবে যে কোনো নেগেটিভ রক্তের গ্রুপের কথা বলবেন। কিন্তু এমন একটি রক্তের গ্রুপ আছে, যার নামই হয়তো অনেকের জানা নেই। আমি বোম্বে ব্লাড গ্রুপের কথা বলছি।

বোম্বে ব্লাড গ্রুপ আবিষ্কৃত হয় ১৯৫২ সালে। প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে মাত্র চারজনের রক্ত এই গ্রুপভুক্ত হয়ে থাকে। ‘দ্য ল্যান্সেট’ নামে চিকিৎসাবিজ্ঞান সম্পর্কিত বিখ্যাত ব্রিটিশ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে এই রক্তের গ্রুপ সম্পর্কে ধারণা দেন ভারতীয় ডাক্তার ওয়াই.এম. ভেন্ডে, ডাক্তার সি.কে. দেশপান্ডে, ডাক্তার এইচ.এম. ভাটিয়া। ভারতের বোম্বে শহরে প্রথম শনাক্ত হওয়ায় ডাক্তার ভেন্ডে এর নামকরণ করেন বোম্বে গ্রুপ। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে এইচএইচ রক্তের গ্রুপও বলা হয়।

সাধারণত আমরা ‘এবিও’ সিস্টেমে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করে থাকি। এ পদ্ধতিতে নির্ণীত গ্রুপের মধ্যে সবটাতেই ‘এইচ’ অ্যান্টিজেন বিদ্যমান। কিন্তু বোম্বে গ্রুপে ‘এইচ’ অ্যান্টিজেন থাকে না।

মূলত বোম্বে হলো ‘ও’ পজিটিভ বা ‘ও’ নেগেটিভের একটি বিরল রূপ। সাধারণ পদ্ধতিতে পরীক্ষা করলে বোম্বে গ্রুপ ‘ও’ গ্রুপের মতো আচরণ করে। ‘ও’ গ্রুপের রক্তের সঙ্গে বোম্বের মূল পার্থক্য হচ্ছে, এর মধ্যে ‘এইচ’ অ্যান্টিজেনের অনুপস্থিতি। অ্যান্টি-এইচ লেকটিন ব্যবহারের মাধ্যমে ‘এইচ’ অ্যান্টিজেনের উপস্থিতি নির্ণয় করা যায়। এইচ ফ্যাক্টর পজিটিভ বা নেগেটিভ হলে অন্যান্য রক্তের গ্রুপের মতো বোম্বে পজিটিভ বা বোম্বে নেগেটিভও হতে পারে।

বোম্বে গ্রুপধারী ব্যক্তি বোম্বে ব্যতীত অন্য কোনো গ্রুপের রক্ত গ্রহণ করতে পারবেন না। ভুলবশত ‘ও’ গ্রুপ মনে করে রক্ত দেওয়া হলে রক্তগ্রহীতা হিমোলাইটিক ট্রান্সফিউশন হয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারেন। এ কারণে ক্রস ম্যাচিংয়ের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন এবং সন্দেহ হলেই বোম্বে কিনা পরীক্ষা করে নেওয়া একান্ত প্রয়োজন।

রক্তের বোম্বে গ্রুপ নিয়ে এ আলোচনার অবতারণা সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার সূত্র ধরে। গত ১ ডিসেম্বর রাজধানীর এভারকেয়ার (সাবেক অ্যাপোলো) হাসপাতালে বোম্বে গ্রুপের এক রক্তদান সম্পন্ন হয়। রোগীর নাম তানিয়া সুলতানা, বয়স ৪৪, দীর্ঘদিন রক্তশূন্যতায় ভুগছেন। এভারকেয়ার হাসাপাতালের ডাক্তার জানিয়েছেন, তাঁর রক্তে  হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ৫.৫। জরুরি ভিত্তিতে তাঁকে রক্ত দিতে হবে। কিন্তু তাঁর রক্তের গ্রুপ এইচ/এইচ বা বোম্বে। রক্তের এই বিরল গ্রুপ নিয়ে রোগীর স্বজনরা স্বাভাবিকভাবেই দিশেহারা। এ বিষয়ে জানতে পারেন স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন বাঁধন-এর স্বেচ্ছাসেবক শাকিল আহাম্মেদ। তাঁর পরিচিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রক্তদাতাকে দিয়ে তিনি রক্তদান সম্পন্ন করেন। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন রোগীর আত্মীয়স্বজন।

বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ১৯৭৫ সালে এই রক্তের গ্রুপ শনাক্ত হয়। ২০২২ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৪০ জনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তবে ‘ও’ গ্রুপের ব্যক্তিদের পরীক্ষা করলে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

বিভিন্ন সময়ে এ রকম বিরল গ্রুপের রক্তদানের নজির থাকলেও এখন পর্যন্ত দেশে বোম্বে গ্রুপভিত্তিক কোনো উল্লেখযোগ্য সাংগঠনিক তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। তাই রক্তদানসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের এ বিষয়ে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রয়োজন। জরুরি মুহূর্তে রক্তদাতা খুঁজে পেতে মজবুত নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। 

শাহাদাত হোসাইন: সভাপতি, বাঁধন, ঢাকা কলেজ শাখা 

আরও পড়ুন

×