ঢাকা রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

অন্যদৃষ্টি

মাতৃভাষায় উচ্চশিক্ষা কেন জরুরি

মাতৃভাষায় উচ্চশিক্ষা কেন জরুরি

.

নাজমুল ইসলাম

প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ | ২৩:০৬

মানুষের অবচেতন মনের চিন্তার মাধ্যম হলো মাতৃভাষা। মাতৃভাষার সঙ্গে মানুষের আত্মিক সম্পর্ক। তাই মাতৃভাষায় বিজ্ঞানবিষয়ক শিক্ষা ও গবেষণা অতি দ্রুত কোনো জাতিকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি শিল্পনির্ভর হয়ে পড়েছে। শিল্পের বিকাশই কোনো জাতির উন্নয়নের মানদণ্ড। যে জাতি শিল্পে যত উন্নত এবং যাদের উৎপাদিত পণ্য বিশ্ববাজারে যত সমাদৃত, তারাই তত সমৃদ্ধ জাতি। জ্ঞানচর্চার এই যুগে যারা মাতৃভাষাকে আঁকড়ে ধরেছে, তারা দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ চীনের কথা বলা যেতে পারে। প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষায় জ্ঞানচর্চার মাধ্যম হিসেবে চীনারা মাতৃভাষাকে ব্যবহার করছে। এর সুফল তারা হাতে হাতে পাচ্ছে। মাতৃভাষায় জ্ঞানচর্চার কারণে চীনের ১৫০ কোটি মানুষ তাদের চিন্তা, সৃজনশীলতা, আবিষ্কার সব কিছুতেই সর্বোচ্চ সক্ষমতা সহজভাবে উপস্থাপন করার সুযোগ পাচ্ছে। ফলে চীন আজ পৃথিবীর জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির এক অপ্রতিরোধ্য শক্তি। কারণ ১৫০ কোটি লোকের শতভাগ মেধাশক্তি জ্ঞাননির্ভর অর্থনীতির উন্নয়নে অবদান রাখতে পারছে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৯৭৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত চীনের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১৬ গুণ। একই পথ অবলম্বন করে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে।

এ ছাড়াও উন্নত বিশ্বের অন্য দেশগুলোর দিকে আলোকপাত করলে দেখা যায়, যে জাতিগুলো উন্নত হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে, সবাই নিজেদের মাতৃভাষায় জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চা সমুন্নত রেখেছে। ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়ার মতো বিশ্বের শক্তিধর ও উন্নত দেশ তাদের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম মাতৃভাষায় পরিচালিত করে। প্রসঙ্গক্রমে বলা যায়, রসায়নের পর্যায় সারণির উদ্ভাবক রাশিয়ান নাগরিক দিমিত্রি মেনডেলিফ তাঁর গবেষণার নিবন্ধগুলো কখনোই ইংরেজিতে প্রকাশ করেননি। সব সময় তিনি তাঁর প্রকাশনাগুলো রুশ ভাষায় প্রকাশ করতেন। বিশ্বের অন্যান্য জাতি নিজ নিজ প্রয়োজনেই মেনডেলিফের গবেষণালব্ধ প্রকাশনাগুলো নিজেদের ভাষায় অনুবাদ করে নিয়েছে। যদি মেনডেলিফের ক্ষেত্রে এমন শর্ত থাকত– ইংরেজিতে গবেষণাপত্র প্রকাশ করা ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় নেই, তাহলে হয়তো পর্যায় সারণির মতো জটিল একটি বিষয় নিয়ে এমন সুন্দর উদ্ভাবন পৃথিবীর মানুষ দেখতেই পেত না।

আমাদের বাংলায় সমৃদ্ধ সাহিত্য বা বইয়ের অভাব নেই বটে। কিন্তু এর বাইরে অনেক প্রকাশনা রয়েছে, যা আমরা বাংলায় অনুবাদ করতে পারিনি। পৃথিবী যত দ্রুত এগোচ্ছে, সব জ্ঞানভাণ্ডারকে বাংলায় অনুবাদ করে মাতৃভাষায় শিক্ষাদান সম্ভব নয়। উচ্চশিক্ষায় কৃষির কথা বলি, যারা দেশের মাটি, ফসল, খাদ্য নিয়ে গবেষণা করছেন, তাদের ইংরেজিতে রচিত বই পড়তে হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষায় বাংলায় কয়টা বই আছে? প্রকৌশলে কিংবা অন্যান্য বিষয়ে বাংলার কয়টা বই আমরা পাব?

মাতৃভাষায় উচ্চশিক্ষা জরুরি। সেটা হলে ভালোও হতো; নিজেদের ভাষায় পড়ে দ্রুত উন্নতি করতে পারতাম। এখনও সম্ভব যদি পরিকল্পিতভাবে এগোনো যায়। পৃথিবীকে যারা নতুন কিছু দিতে চায় তাদের জন্য ভাষা যেন বাধা না হয়ে দাঁড়ায়। উন্নত জাতি গঠনে বিষয়টি নিয়ে ভাবনা ও পদক্ষেপ গ্রহণের প্রকৃত সময় এখনই। 

নাজমুল ইসলাম: শিক্ষার্থী,
ফার্মাসি বিভাগ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন

×