ঢাকা মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫

অন্যদৃষ্টি

কৃত্রিম সাধারণ বুদ্ধিমত্তা

কৃত্রিম সাধারণ বুদ্ধিমত্তা

.

জেমাম আহমদ

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৪ | ২৩:০১

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে ইদানীং যতটা আলোচনা হয়, কৃত্রিম সাধারণ বুদ্ধিমত্তা (এজিআই) নিয়ে ততটা হয় না। তবে আলোচনাটা দরকার।

কৃত্রিম সাধারণ বুদ্ধিমত্তা হলো এমন এআই, যা মানুষের মতো বুদ্ধিমত্তা অর্জনে সক্ষম। এর অর্থ হলো এজিআই যে কোনো সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম, এমনকি যেগুলো মানুষের জন্যও কঠিন। তবে আজ অবধি আবিষ্কৃত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক যন্ত্রগুলো কিছু নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদনে মানুষের মতো বুদ্ধিমত্তা প্রদর্শন করতে সক্ষম, তারা এখনও মানুষের মতো বুদ্ধিমত্তার পুরো পরিসর অর্জন করতে পারেনি। এজিআই হতে হলে তাদের মানুষের মতো বুদ্ধিমত্তা প্রয়োজন। স্বাভাবিক কারণেই এজিআইর সম্ভাবনা বিশাল। এর সাহায্যে আমরা এমন কাজ স্বয়ংক্রিয় করতে সক্ষম হবো, যা বর্তমানে মানুষ দিয়ে করা হয়। যেমন আমরা স্বয়ংক্রিয় গাড়ি তৈরি করতে পারি, যা রাস্তার নিয়ম মেনে এবং অন্যান্য গাড়ি ও পথচারীর সঙ্গে নিরাপদে চলাচল করতে পারে। এজিআইর সাহায্যে আমরা এমন এআইচালিত মেডিকেল ডিভাইস তৈরি করতে পারি, যা রোগ নির্ণয় করতে মানুষের চেয়ে অনেক বেশি পারঙ্গম। এজিআইর সাহায্যে আমরা এমন সিস্টেম তৈরি করতে পারি, যা বর্তমানে মানব নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতি থেকে অনেক বেশি কার্যকর।

মোদ্দা কথা, এজিআই আমাদের জীবনকে এখনকার তুলনায় সহজতর, আরও দক্ষ এবং সুন্দর করে তুলতে পারে। এর সাহায্যে আমরা এমন এআইচালিত শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করতে পারি, যা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য তার নিজস্ব চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষাদান করবে। আমরা ভাষা অনুবাদক তৈরি করতে পারি, যা মানুষের মতো সঠিক ও প্রাঞ্জল অনুবাদ করতে পারে। আমরা এমন এআইচালিত সফটওয়্যার তৈরি করতে পারি, যা কবিতা-গল্পের মতো সৃজনশীল বিষয়বস্তু তৈরি করতে পারে। তবে এজিআই বিকাশের পথে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর অপব্যবহার মানব সভ্যতার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, এর মাধ্যমে অনুমোদনহীন অস্ত্র তৈরি করা যেতে পারে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও এজিআই নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। এর বিকাশের ফলে অনেক মানুষের চাকরি হারানোর শঙ্কা রয়েছে। বিশেষত গাড়িচালক, নার্স, আইনজীবীর মতো পেশাজীবীরা চাকরি হারাতে পারেন।

এজিআইর অপব্যবহার রোধে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। যেমন এর গবেষণা ও উন্নয়নে নৈতিকতা ও নিরাপত্তানীতি প্রয়োগ করা যেতে পারে। এ ছাড়া এর ব্যবহারের ক্ষেত্রেও নিয়ন্ত্রণ ও আইন যুক্ত হতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখনও একটি উন্নয়নশীল ক্ষেত্র এবং এজিআই এখনও একটি লক্ষ্য। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক যন্ত্রগুলো বর্তমানে বাস্তব বিশ্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে, তবে এজিআইভিত্তিক যন্ত্রগুলো এখনও রয়েছে কল্পনায়। কৃত্রিম সাধারণ বুদ্ধিমত্তা অর্জন কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং কাজ। তবে এআই গবেষণা দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে এবং সেদিন হয়তো দূরে নয়, যেদিন এজিআই অর্জন সম্ভব হবে। কৃত্রিম সাধারণ বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় বিশ্বের প্রথিতযশা তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক কোম্পানিগুলো প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করছে। যদি এজিআই অর্জন সম্ভব হয়, তাহলে এটি মানব সভ্যতার জন্য একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে।

জেমাম আহমদ: সফটওয়্যার প্রকৌশলী ও তথ্যপ্রযুক্তি গবেষক

আরও পড়ুন

×