আজ কমরেড আইউব রেজা চৌধুরীর দশম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন তিনি। আইউব রেজা চৌধুরী বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের একজন তাত্ত্বিক, বুদ্ধিজীবী ও সংগঠক। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। ঘটনা প্রবাহ দেখেছেন খুব কাছে থেকে। নানা অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়েছেন। কমিউনিস্ট আন্দোলনে তিনি প্রথমে রুশপন্থি ধারার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সে সময় তার নেতা ছিলেন মণি সিংহ, খোকা রায়, অনিল মুখার্জি, বারিণ দত্ত প্রমুখ। সে সময় তার গুরুত্বপূর্ণ সহকর্মী ছিলেন আবদুল হালিম, মহিউদ্দিন আহমেদ, আবদুর রহিম আজাদ, হায়দার আকবর খান রনো, রাশেদ খান মেনন, সাইফুদ্দিন আহমেদ খান মানিক, রেজা আলী, আনিসুর রহমান, মর্তুজা খান, শ্যামাপ্রাসাদ রায় ও ওয়ালিউল ইসলাম।
এর পর পার্টি বিভক্ত হওয়ার পর তিনি চীনপন্থি কমিউনিস্ট রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। সে সময় এই অংশে তার নেতা ছিলেন সুখেন্দু দস্তিদার, মোহাম্মদ তোয়াহা, আব্দুল হক ও অজয় ভট্টাচার্য। তখন তার গুরুত্বপূর্ণ সক্রিয় সহকর্মী ছিলেন হায়দার আকবর খান রনো, রাশেদ খান মেনন, আবুল কাসেম ফজলুল হক, শামসুজ্জোহা মানিক, বদিউজ্জামান বড় লস্কর, আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া, আমজাদ হোসেন, আনিসুর রহমান, আব্দুল মতিন, নূর মোহাম্মাদ, মোফাখখর চৌধুরী, অহিদুর রহমান, খালেদুর রহমান টিটো, টিপু বিশ্বাস, মোজাম্মেল হক, গোলাম মোস্তফা, মাহবুবউল্লাহ প্রমুখ।
তিনি কমিউনিস্ট আন্দোলনের অগ্রগতি ও ঐতিহ্য ধারণ করতেন; একই সঙ্গে তার সব বিচ্যুতি ও ভুলভ্রান্তি স্বীকার করতেন। তিনি বলতেন, 'পন্থি রাজনীতি মূলত বাইরে থেকে আরোপিত এবং কমিউনিস্ট আন্দোলনের বিকাশের অন্তরায়।' তিনি আরও বলেছেন, 'পাকিস্তান আমলের শেষ পর্যায়ে আমি আরও অনেকের মতো চীনপন্থি কমিউনিস্ট রাজনীতি থেকে মুক্ত হই। বিশেষত আমি পাকিস্তান বুর্জোয়া রাষ্ট্রের জাতিগত নিপীড়নবিরোধী অগ্রসর রাজনীতি এবং পূর্ববাংলার বাঙালি জাতির জনসাধারণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার অগ্রসর রাজনীতির সঙ্গে অবস্থান গ্রহণ করি। আমি পাকিস্তান আমলে স্বাধীনতা যুদ্ধের সবচেয়ে প্রগতিশীল ধারার সঙ্গে দাঁড়াই।'
১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষা আন্দোলনের প্রথম সারির অন্যতম ছাত্রনেতা ছিলেন কমরেড আইউব রেজা চৌধুরী। ওই আন্দোলনে শহীদ হন ছাত্রনেতা বাবুল ও ওয়াজিউল্লাহ। এর পরই স্বৈরশাসক আইউব খানের রোষানলে পড়েন ছাত্র-যুবনেতারা। ১৯৬৪ সালে হুলিয়া জারি হয় ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের ৯ ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে। তারা হলেন- সিরাজুল আলম খান, রাশেদ খান মেনন, হায়দার আকবর খান রনো, কেএম ওবায়দুর রহমান, বদরুল হায়দার চৌধুরী, শাহ মোয়াজ্জেম, রেজা আলী, গিয়াস কামাল চৌধুরী এবং আইউব রেজা চৌধুরী। ভাঙনের আগে সর্বশেষ অবিভক্ত ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
১৯৭০ সালের ১০ মে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে ন্যাপের জনসভায় স্বাধীনতার জন্য সরাসরি লড়াই শুরু করার আহ্বান জানিয়ে সেই সময়ের ইয়াহিয়ার সামরিক সরকারের রোষানলে পড়েন। সভা শেষে ওই দিনই রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন তিনি। দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত কারাগারেই থাকতে হয় তাকে। তিনি কোনো চিন্তার দাসত্ব করতেন না। ভোগবিলাসের কাছে আত্মসমর্পণ করেননি।
অতি সাধারণ জীবনই যাপন করে গেছেন। শোষক-লুটেরা
শ্রেণির কেউ তার নিকটাত্মীয় হলেও তাদের সঙ্গ সচেতনভাবে পরিত্যাগ করতেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিজের বুঝের ওপর দাঁড়িয়ে থেকেছেন।
বিত্তবৈভব আর জনপ্রিয় হওয়ার খায়েশে আত্মসমর্পিত হননি। দাঁড়িয়ে থেকেছেন শত প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে। নিজের স্বপ্ন ও প্রতিশ্রুতি চোখের মণির মতো রক্ষা করে গেছেন। তাদের অর্জনকে বিবেচনার বাইরে রেখে বাংলাদেশে আরেকটি উত্থান কখনোই সম্ভব নয়। তার অবদান জাতি যুগ যুগ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। আজ আইউব রেজা চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে জানাচ্ছি গভীর শ্রদ্ধা।
ইমাম গাজ্জালী :সাংবাদিক

বিষয় : জনপ্রিয়তায় আত্মসমর্পণ করেননি

মন্তব্য করুন