ঢাকা সিটি করপোরেশনের বর্জ্যবাহী গাড়িসৃষ্ট দুর্ঘটনা কি অপ্রতিরোধ্য? শুরুতেই আমরা এ প্রশ্ন রাখছি, কারণ মঙ্গলবার একদিকে প্রধানমন্ত্রী যখন বর্জ্যবাহী গাড়িতে দুর্ঘটনা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন, তখন এমন দুর্ঘটনায় ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে পা-বিচ্ছিন্ন যুবক আর্তনাদ করছিলেন। ঢাকায় বর্জ্যবাহী গাড়ির দুর্ঘটনা যেভাবে মহামারি আকার ধারণ করছে, তাতে আমরা উদ্বিগ্ন না হয়ে পারি না। সমকালের প্রতিবেদন অনুসারে গত আড়াই মাসে বর্জ্যবাহী গাড়ির ধাক্কা ও চাপায় অন্তত পাঁচটি দুর্ঘটনায় চারজন ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। রাজধানীর বর্জ্যবাহী গাড়ির দুর্ঘটনার পাশাপাশি সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনাও থেমে নেই। মঙ্গলবারই কক্সবাজারের চকরিয়ায় ট্রাকচাপায় একসঙ্গে পাঁচ ভাইয়ের মৃত্যুর বেদনা একটি পরিবারকে সইতে হয়েছে। একই দিন রাজধানীর গুলশানের শাহজাদপুরে হন্তারক বাস যেভাবে সন্তানের সামনে মায়ের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে; সন্তান সে ব্যথা সইবে কীভাবে? বস্তুত প্রতিনিয়ত সড়ক এমনি বেদনাদায়ক কাব্য রচনা করে চলেছে।
সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে এ সম্পাদকীয় স্তম্ভে আমরা বারবার উদ্বেগ জানিয়ে এলেও বাস্তবে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে না কোনোভাবেই। প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনায় নিরীহ প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না; এ দুর্ঘটনার পেছনে বহুলাংশে চালকদের দায় রয়েছে। তার ওপর পরিবহন শ্রমিক, অদক্ষ চালক কিংবা অন্য কারও দ্বারা পরিবহন চালানোর ভয়ংকর প্রবণতা স্পষ্ট। কয়েক মাস আগে নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী কলেজে যাওয়ার পথে রাস্তা অতিক্রমের সময় গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িচাপায় প্রাণ হারান। ওই গাড়িটি চালাচ্ছিল একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী! বস্তুত এর মাধ্যমেই রাজধানীর বর্জ্যবাহী গাড়ি পরিচালনায় সংশ্নিষ্টদের দায়িত্বহীনতার চিত্র ফুটে ওঠে। আবার বাসের কাগজপত্রে ত্রুটি পাওয়ায় পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যেতে সার্জেন্ট যখন চালকের আসনে, তখন দুর্ঘটনায় দু'জনের প্রাণহানির ঘটনা রাজধানীতে ঘটেছে। এর মাধ্যমে সড়কে নৈরাজ্যের ভয়াবহতাই আমরা দেখছি।
দুর্ঘটনা কমিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা আনয়নে আমাদের আইন কিংবা নিয়মের অভাব না থাকলেও বাস্তবায়ন ও তদারকিতে ঘাটতি স্পষ্ট। সড়ক-মহাসড়কে বাসের সর্বোচ্চ গতিসীমা ৮০ কিলোমিটার নির্ধারণ করে দিলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। 'সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮' কার্যকর হলেও তার সুফল আমরা দেখছি না। জেল-জরিমানা বাড়িয়ে সড়ক পরিবহন আইন করা হলেও বাস্তবায়নে সরকারের জোর না থাকা দুঃখজনক। আমরা দেখেছি, প্রায় আট বছর ঝুলে থাকা ওই আইনটি ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর পাস হলেও পরিবহন নেতাদের দাবি মেনে সেটি শিথিল করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আমরা মনে করি, উপযুক্ত অবকাঠামোগত ব্যবস্থা, আইন মান্য করে চলতে বাধ্য করা, দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা, সতর্ক ও কঠোর নজরদারির মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনা দুরূহ বিষয় নয়। আমাদের দেশে যে হারে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে, তা জাতীয় দুর্যোগ বললেও অত্যুক্তি হয় না। ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, ভুয়া লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালক, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো বন্ধসহ আইন ও নিয়মকানুন মেনে চলতে সরকারের উদ্যোগ পর্যাপ্ত নয়।
আমরা মনে করি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা বিশেষ তাৎপর্যবহ। সিটি করপোরেশনের বর্জ্য লোকালয় থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়া এবং এ কাজে যাবতীয় ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর প্রধানমন্ত্রী যে গুরুত্ব প্রদান করেছেন; সেটি আমলে নেওয়া জরুরি। গাড়ির চালক নিয়োগে দক্ষতাকে প্রাধান্য দিয়ে বর্তমান চালকদের প্রশিক্ষণ অব্যাহত রাখতেই হবে।
সড়কে নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে নাগরিক আন্দোলন গড়ে উঠলেও প্রশাসনিক তৎপরতা অনেক ক্ষেত্র আশ্বাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। নিরাপদ সড়ক গড়ার লক্ষ্যে শিক্ষার্থীরা বারবার রাস্তায় নেমে আমাদের ব্যর্থতাই তুলে ধরছে। এটা স্বতঃসিদ্ধ- সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বিশৃঙ্খলা। আর শৃঙ্খলা ফেরাতেই শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি আমলে নেওয়া দরকার। আমরা প্রত্যাশা করি, প্রকৃত অর্থেই সড়ককে নিরাপদ করতে প্রশাসনের সদিচ্ছা জরুরি। বিশেষ করে রাজধানীর বর্জ্যবাহী গাড়িসৃষ্ট দুর্ঘটনা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরও যেমন চলতে পারে না; তেমনি সড়কও এভাবে মৃত্যুফাঁদ হয়ে থাকতে পারে না।
সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে এ সম্পাদকীয় স্তম্ভে আমরা বারবার উদ্বেগ জানিয়ে এলেও বাস্তবে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে না কোনোভাবেই। প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনায় নিরীহ প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না; এ দুর্ঘটনার পেছনে বহুলাংশে চালকদের দায় রয়েছে। তার ওপর পরিবহন শ্রমিক, অদক্ষ চালক কিংবা অন্য কারও দ্বারা পরিবহন চালানোর ভয়ংকর প্রবণতা স্পষ্ট। কয়েক মাস আগে নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী কলেজে যাওয়ার পথে রাস্তা অতিক্রমের সময় গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িচাপায় প্রাণ হারান। ওই গাড়িটি চালাচ্ছিল একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী! বস্তুত এর মাধ্যমেই রাজধানীর বর্জ্যবাহী গাড়ি পরিচালনায় সংশ্নিষ্টদের দায়িত্বহীনতার চিত্র ফুটে ওঠে। আবার বাসের কাগজপত্রে ত্রুটি পাওয়ায় পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যেতে সার্জেন্ট যখন চালকের আসনে, তখন দুর্ঘটনায় দু'জনের প্রাণহানির ঘটনা রাজধানীতে ঘটেছে। এর মাধ্যমে সড়কে নৈরাজ্যের ভয়াবহতাই আমরা দেখছি।
দুর্ঘটনা কমিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা আনয়নে আমাদের আইন কিংবা নিয়মের অভাব না থাকলেও বাস্তবায়ন ও তদারকিতে ঘাটতি স্পষ্ট। সড়ক-মহাসড়কে বাসের সর্বোচ্চ গতিসীমা ৮০ কিলোমিটার নির্ধারণ করে দিলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। 'সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮' কার্যকর হলেও তার সুফল আমরা দেখছি না। জেল-জরিমানা বাড়িয়ে সড়ক পরিবহন আইন করা হলেও বাস্তবায়নে সরকারের জোর না থাকা দুঃখজনক। আমরা দেখেছি, প্রায় আট বছর ঝুলে থাকা ওই আইনটি ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর পাস হলেও পরিবহন নেতাদের দাবি মেনে সেটি শিথিল করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আমরা মনে করি, উপযুক্ত অবকাঠামোগত ব্যবস্থা, আইন মান্য করে চলতে বাধ্য করা, দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা, সতর্ক ও কঠোর নজরদারির মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনা দুরূহ বিষয় নয়। আমাদের দেশে যে হারে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে, তা জাতীয় দুর্যোগ বললেও অত্যুক্তি হয় না। ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, ভুয়া লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালক, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো বন্ধসহ আইন ও নিয়মকানুন মেনে চলতে সরকারের উদ্যোগ পর্যাপ্ত নয়।
আমরা মনে করি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা বিশেষ তাৎপর্যবহ। সিটি করপোরেশনের বর্জ্য লোকালয় থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়া এবং এ কাজে যাবতীয় ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর প্রধানমন্ত্রী যে গুরুত্ব প্রদান করেছেন; সেটি আমলে নেওয়া জরুরি। গাড়ির চালক নিয়োগে দক্ষতাকে প্রাধান্য দিয়ে বর্তমান চালকদের প্রশিক্ষণ অব্যাহত রাখতেই হবে।
সড়কে নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে নাগরিক আন্দোলন গড়ে উঠলেও প্রশাসনিক তৎপরতা অনেক ক্ষেত্র আশ্বাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। নিরাপদ সড়ক গড়ার লক্ষ্যে শিক্ষার্থীরা বারবার রাস্তায় নেমে আমাদের ব্যর্থতাই তুলে ধরছে। এটা স্বতঃসিদ্ধ- সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বিশৃঙ্খলা। আর শৃঙ্খলা ফেরাতেই শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি আমলে নেওয়া দরকার। আমরা প্রত্যাশা করি, প্রকৃত অর্থেই সড়ককে নিরাপদ করতে প্রশাসনের সদিচ্ছা জরুরি। বিশেষ করে রাজধানীর বর্জ্যবাহী গাড়িসৃষ্ট দুর্ঘটনা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরও যেমন চলতে পারে না; তেমনি সড়কও এভাবে মৃত্যুফাঁদ হয়ে থাকতে পারে না।
বিষয় : সম্পাদকীয় ঢাকা সিটি করপোরেশন
মন্তব্য করুন