'ই... য়ে, বাঁইচ্চা গেলাম। ফরজ কাজ শুরু করলাম।' না, না ভাই, 'আর তাড়ি খামু না চাচা, সময় বয়ে যায়, তাড়ি গাছে উঠলে চাচা জীবন বোঝা যায়।'
'জীবনরে তোরে কোন জীবনে থুই।' কথাটা যেন কার মনে পড়ছে না। তবে কোথায় যেন পড়েছিলাম।
'জীবনরে তোরে কোন জীবনে থুই।'
জীবন তোর আর কোনো চিন্তা নাই, তুই এখন খাবি-দাবি ডগ্‌ডগাবি, আর কোনো চিন্তাই নাই।
তোর জীবন এখন বিশ্বমানব কনফুসিয়াসের জীবন। তোর জীবন সক্রেটিসের জীবন।
তোর জীবন আর প্রতিদিনের টানাপোড়েনের জীবন নয়। চালের দাম নিয়ে, গরুর গোশতের দাম, লাইনে টাকা তোলার ঘামের দাম কোনো কিছুই আর তোকে চিন্তা করতে হবে না। তুই মহা সুখে
খাবি-দাবি ডগ্‌ডগাবি, আর কোনো চিন্তা নাই।
পাবলিকে ভাইব্বা মরুক, কে কোথায় খুন হলো? কে কোথায় সাগরে গেল, কোন পাবলিকে আমেরিকান স্যাংশান খাইলো, কোথাকার কোন পি কে হালদার ৩০০০ কোটি ট্যাকা লয়া পলায়া গেল। কারা কারা তাইনরে সাহায্য করল। কোন হালায় পাঁচ হাজার টাকায় বালিশ কিনল, কোন মন্ত্রী কোন বৈজ্ঞানিকরে, 'তোকে লাথ্‌ মেরে বের করে দিবো' বললো, এসব নিয়া তোমারে আর মাততে হইবো না। কারণ তুমি পাবলিক, এখন সকল কিছুর ঊর্ধ্বে।
তুমি বুঝে গেছো সুন্দর সুস্থ জীবনযাপনের পদ্ধতি। কীসের ক্রসফায়ার, কীসের গুম-খুন, কীসের বনের রাজা ওসমান, কে হলমার্ক, কীসের হেলমেট পার্টি, নিরাপদ সড়ক! এসব ফালতু কথার কোনো বেইল নাই। তুমি বুঝে গেছ জীবনের মূল্য। তোমার কাছে জীবনের রহস্য ফাঁস। তুমি জানো সোনার বাংলায়, সোনালি বর্ণের জীবনযাপনের আনন্দ আজ তোমার পদতলে সারমেয়র ন্যায় গড়াগড়ি দিচ্ছে।
এই যে সেদিন চাকরি বাণিজ্য করতে যেয়ে কল্যাণ বিভাগের অফিসে ক্যাশ তিন কোটি টাকা পাওয়া গেল। পরে পোরশাসন আইস্‌সা যখন গুনতে গেল, ও মা তখন দেখে টাকা মাত্র সাতান্ন লাখ।
বুঝলা, এ যেন মুকুন্দরাম 'সৈন্য মরে লক্ষ লক্ষ কাতারে কাতার, শুমার করিয়া দেখি চল্লিশ হাজার।'
অ্যালা বুজেলিন। বাকি টাকা গেল কার পেটে।
এখন এই সব দুঃশ্চিন্তা আর তোমায় করতে হবে না।
কী যেন সুরমা ভ্যালি, না ইভ্যালি, কার যেন ভল্ট ভেঙে পাওয়া গেল মাত্র আড়াই হাজার টাকা।
বুজলি না ওই একই কথা মুকুন্দরাম 'সৈন্য মরে লক্ষ লক্ষ কাতারে কাতার, শুমার করিয়া দেখি চল্লিশ হাজার।'
ভল্টে কিছুই নাই, খালি কিছু চেক বইয়ের পাতা। গ্রহকের শতকোটি টাকা লোপাটের পর ভল্টে পেল আড়াই হাজার টাকা মাত্র।
মুকুন্দরাম ভাই মুকুন্দরাম।
পোকা-মাকড়ের সাথে ঘরবসতি করতে করতে শ্রদ্ধেয় কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন ঠিকই বলেছেন, 'গ্রন্থাগারকে নানাভাবে গড়ে তোলার জন্য যা কিছু দরকার, তা সঠিকভাবে দিতে হবে। এটা রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় দর্শনের জায়গা।' তাই গ্রন্থাগারের বরাদ্দ বাড়াতে হবে। কারণ আজকাল প্রকাশকরা গ্রন্থাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে উৎকোচ প্রদান করে, তাদের প্রকাশিত সব রদ্দি বই গছিয়ে দেয়। অতএব, ভালো রদ্দি বইয়ের পাশাপাশি ভালো বই কেনার জন্য টাকা বাড়ানো উচিত।
সেদিন জার্নি-মানব নাকি, ভ্রমণ-ম্যানের মালিককে বললাম, 'ভাই আপনে তো বই প্রকাশ করেন, তাহলে গ্রন্থাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে উৎকোচ প্রদান করে, চলেন বই বেচি? ভালো পরফিট পামু।' আমার প্রস্তাব শুনে পামরটা কী বলল জানেন? বলে কি-
তাই বলি এমনিভাবে সমাজের সকল কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে আমজনতা কেবল চুপ থাকবে। কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করবে না। যেটা যে বিভাগের কাজ সেই বিভাগ তাই নিয়ে সে কাজ করবে। হসপিটালের বিল মেটাতে নিজের পেটের সন্তান বিক্রি তাদের ব্যাপার, আমরা শুধু চুপচাপ দেখে যাব, শুনে যাব, কোনো কিছু বলব না। মৌনং ব্রতং পালনে কালাতিপাত করিব।
বিশ্বচরাচর তার নিজের গতিতে চলিবে, আমি কেবল কালের সাক্ষীরূপে ঈশ্বরের বন্দনা করিব।
মৌনং ব্রতং, বুঝলেন না?
আরে, ভাই মৌনং ব্রতং মানে চুপ থাকবেন, কোনো কিছু নিয়া কোনো কথা বলবেন না। কারণ বিশ্বমানব কনফুসিয়াস বলেছেন,
'বোবার কোনো শত্রু নাই।'
ভাই সব চলুন মৌনং ব্রতং পালন করি আর শত্রুমুক্ত জীবনটা উপভোগ করি।
কারণ 'বোবার কোনো শত্রু নাই।'
জাঁ-নেসার ওসমান: লেখক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা