- মতামত
- পবিত্র শবেবরাত: শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রত্যাশা
পবিত্র শবেবরাত: শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রত্যাশা
পবিত্র শবেবরাত বা মহিমান্বিত রাত উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের মুসলিম সম্প্র্রদায়ের প্রতি সমকাল পরিবারের শুভেচ্ছা। সৌভাগ্যের এ রজনি গত দুই বছরের মহামারি কাটিয়ে এবার এসেছে এক সুন্দর পরিবেশে। বিশ্ব যেভাবে করোনা মহামারি কাটিয়ে উঠছে; যেভাবে আমাদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হচ্ছে এবং শঙ্কার মেঘ কাটিয়ে স্বস্তিদায়ক যে ইবাদতের পরিবেশ তৈরি হয়েছে, এ রজনিতে আমরা তা উপলব্ধি করতে চাই। আমরা আশা করি, শবেবরাতের আনুষ্ঠানিকতা যথাযোগ্য ভাবগাম্ভীর্য ও শান্তি-শৃঙ্খলার সঙ্গে পালিত হবে এবং মহামারি থেকে চিরমুক্তি প্রার্থনার উপলক্ষ হবে।
বস্তুত শবেবরাত আসে রমজানের আগমনী বার্তা নিয়ে। মুসলমানরা শবেবরাত পালনের মধ্য দিয়ে রমজান মাসেরও প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। আমরা জানি, রমজানের রোজা পালনে বিশেষ কিছু পণ্যের অতিরিক্ত চাহিদা তৈরি হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, প্রতিবছর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ভোক্তার নাগালের বাইরে থাকে। এ বছর ইতোমধ্যে বাজার চড়া। দীর্ঘদিন ধরে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে অনেকেরই নাভিশ্বাস উঠেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাজার অস্থিতিশীলতার পেছনে একটি ব্যবসায়ী চক্রেরও হাত রয়েছে। আমরা মনে করি, অধিক মুনাফার জন্য নিত্যপণ্য মজুদ করে বেশি দামে বিক্রি ধর্মকে অবমাননার শামিল। এটা স্বস্তির, প্রধানমন্ত্রী কম দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে এক কোটি মানুষকে বিশেষ কার্ড প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন। শবেবরাতে আমাদের প্রত্যশা, সরকার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং অচিরেই বাজারে এর সুফল আমরা দেখতে পাব।
ইসলাম ধর্মমতে, আল্লাহতায়ালা শবেবরাতে বান্দাদের রোগ-শোক, অভাব-অনটন, বিপদ-আপদসহ সব সংকট সমাধান করেন এবং এক বছরের জন্য মানুষের জীবন-মৃত্যু, ধন-সম্পদ ইত্যাদির ফয়সালা করে থাকেন। তাই আমরা বিশ্বাস করি, জীবনে চলার পথে জমা হওয়া জ্ঞাত-অজ্ঞাত পাপ-তাপ ও কলুষ থেকে মুক্তির যে আকুতি ধর্মপ্রাণ মানুষ এই রাতে জানাবে, এর ইতিবাচক প্রভাব সমাজেও পড়বে। বস্তুত আল্লাহর দরবারে নিজের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার মধ্য দিয়ে বিশ্ববাসীর মধ্যে স্খলন ও অপরাধ সম্পর্কে সচেতনতা জাগ্রত হয়। ভবিষ্যৎ জীবনে চলার পথে নেতিবাচক চিন্তা ও তৎপরতার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা কমে যায়।
আমরা আশা করি, মুসলিমপ্রধান এই দেশে কোটি কোটি মানুষের ব্যক্তিগত পবিত্রতার আবহ সামষ্টিক সম্পর্কে সম্প্রীতির বাতায়ন খুলে দেবে। সমাজে তৈরি হবে শান্তির বাতাবরণ। আমরা চাই ধর্মপ্রাণ মুসলিম সম্প্রদায় এই পবিত্র রাতে ব্যক্তিগত বিশুদ্ধতা অর্জনের পাশাপাশি সামাজিক সাম্য ও সামষ্টিক কল্যাণের জন্যও প্রার্থনা করবেন। প্রার্থনা করবেন একটি সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ তথা শান্তিপূর্ণ বিশ্বের জন্য। আমরা জানি, শবেবরাতে মহান আল্লাহতায়ালা যখন সব বান্দাকে ক্ষমা করে দেওয়ার অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি করেছেন, তখন এই রজনিতে মুসলমানরাও ক্ষমা ও সৌহার্দ্যের প্রার্থী হবেন। নিজস্ব সমাজ, সম্প্রদায়ের বাইরেও বিশ্বমানবতার কল্যাণ কামনা ও বাস্তবায়নে উদ্যোগী হবে।
শবেবরাতের এ রাতে অনেকে পটকা ও আতশবাজি পোড়ানোর চেষ্টা করে। আমরা মনে করি, এর মাধ্যমে একদিকে যেমন রাতটির পবিত্রতা ও ভাবগাম্ভীর্য ক্ষুণ্ণ হয়, তেমনি এ ধরনের কাজ ইবাদত-বন্দেগিতে ব্যাঘাত ঘটায়। কেউ যাতে এ ধরনের কাজ করতে না পারে, সে ব্যাপারে অভিভাবক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সজাগ থাকা প্রয়োজন। আমরা দেখেছি, পবিত্র শবেবরাতের পবিত্রতা রক্ষার্থে এবং সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন নিশ্চিত করতে রাজধানীতে ডিএমপি কমিশনার শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত বিস্ম্ফোরক দ্রব্য, আতশবাজি, পটকাবাজি, অন্যান্য ক্ষতিকারক ও দূষণীয় দ্রব্য বহন এবং ফোটানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন।
বস্তুত শুধু পালনের মধ্য দিয়ে নয়; উপলব্ধির মধ্য দিয়ে এ রাতের শিক্ষাকে অন্তরে ধারণ করা প্রয়োজন। সব রকম ধর্মান্ধতা ও কূপমণ্ডূকতা পরিহার করে শান্তির ধর্ম ইসলামের চেতনা ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত হোক। শবেবরাতের মহিমায় শান্তি ও কল্যাণ আসুক সবার জীবনে। সমৃদ্ধি ও মঙ্গলময় হোক ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় জীবন।
মন্তব্য করুন