- মতামত
- বৈষম্যবিরোধী বিল: আলোচনা-সমালোচনা আমলে নিন
বৈষম্যবিরোধী বিল: আলোচনা-সমালোচনা আমলে নিন
দীর্ঘ অপেক্ষার পর গত ৫ এপ্রিল জাতীয় সংসদে 'বৈষম্যবিরোধী বিল-২০২২' উপস্থাপন করা হয়েছে। সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে বাংলাদেশের সব নাগরিক আইনের চোখে সমান এবং আইনি সুরক্ষা পাওয়ার সমান অধিকার রাখে। সংবিধানের ২৮(১) অনুচ্ছেদ মতে, রাষ্ট্র ধর্ম, জাতি, বর্ণ বা জন্মস্থানের ভিত্তিতে কোনো নাগরিকের বিরুদ্ধে কোনো বৈষম্য করতে পারবে না। কিন্তু সংবিধানের এসব বিধানকে বাস্তবে প্রয়োগ করতে হলে যে-আইনের প্রয়োজন ছিল তা এতদিন ছিল না। বৈষম্যবিরোধ বিলটি সংসদে পাস হলে ওই ঘাটতি পূরণ হবে। এ জন্য আমরা সরকারকে সাধুবাদ জানাই। বিলটিতে বলা হয়েছে, এ আইনবলে একজন নাগরিক কোনো সরকারি বা বেসরকারি অফিস, জনসমাগম হয় এমন কোনো স্থান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে-কোনো রকম বৈষম্যের শিকার হলে প্রতিকার চাইতে পারবেন। উল্লেখ্য, এ আইনটির জন্য নাগরিক সমাজের বিভিন্ন অংশ- বিশেষ করে যারা সমাজের অধিকারবঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করেন- দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার ছিলেন। এমনকি ২০১৩ সালে জনমত জরিপের মাধ্যমে রচিত এ আইনের একটি খসড়া তাদের পক্ষ থেকে জাতীয় আইন কমিশনে জমা দেওয়া হয়। ২০১৭ সালেও এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ এক সম্মেলনের মাধ্যমে এ রকম একটি আইন তৈরির আহ্বান জানায়। সেদিক থেকে সংসদে বিলটির উপস্থাপন রাষ্ট্র ও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা বৈষম্যের শিকার নাগরিকদের প্রতিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্তত এক ধাপ অগ্রগতি- এ কথা নির্দি্বধায় বলা যায়।
প্রস্তাবিত আইনটির একটা উল্লেখযোগ্য দিক হলো, জীবন-যাপন করতে গিয়ে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সদস্যরা যেসব বৈষম্যমূলক ঘটনার শিকার হন তার প্রায় সবই এর আওতায় রাখা হয়েছে। যেমন এখনও বহু জায়গায় একটু সচ্ছল মানুষেরা যে-রেস্তোরাঁয় খাবার খান সেখানে দলিত শ্রেণির মানুষকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। অনেক বাড়িওয়ালা স্বধর্মের না হলে কারও কাছে বাসা ভাড়া দেয় না। প্রস্তাবিত আইনটি পাস হলে এসব বৈষম্যমূলক কর্মকাণ্ডের শিকার মানুষ রাষ্ট্রের কাছে প্রতিকার চাইতে পারবেন। বিলটির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, সেখানে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যে মনিটরিং কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে বৈষম্য নিরোধকল্পে কর্মরত সংগঠনগুলোর মধ্য থেকে প্রতিনিধি রাখার পাশাপাশি নিম্নবর্গের মানুষদের প্রতিনিধিদেরও রাখা হয়েছে। তবে বিলটি সম্পর্কে নাগরিক সমাজের মধ্য থেকে বেশ কিছু সমালোচনাও এসেছে। যেমন, বৈষম্যের প্রতিকার কীভাবে হবে তা বিলটিতে স্পষ্ট করা হয়নি। আবার মনিটরিং কমিটির ক্ষমতা, এখতিয়ার ও স্বাতন্ত্র্য নিয়েও প্রশ্ন আছে। প্রতিকারের প্রক্রিয়াটিও অনেক লম্বা বলে মনে হচ্ছে। যেমন, প্রথমে প্রতিকারপ্রার্থীকে প্রথমে যেতে হবে জেলা মনিটরিং কমিটিতে। ৩০ দিনের মধ্যে তারা সমাধান দিতে না পারলে যেতে হবে বিভাগীয় কমিটিতে। তারাও ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিকার না দিলে ভুক্তভোগীকে জাতীয় মনিটরিং কমিটির দ্বারস্থ হতে হবে। এখানেও ব্যর্থ হলে আদালতে মামলা করা যাবে, যারা ৯০ দিনের মধ্যে বিষয়টির সুরাহা দেবেন। মনে রাখতে হবে, খুব স্বাভাবিক কারণেই বৈষম্যের প্রতিকারপ্রার্থীর বেশিরভাগ হবে নিম্নআয়ের মানুষ। তাদের পক্ষে এ দীর্ঘ প্রক্রিয়াটি অনুসরণের খরচ বহন করা সম্ভব? তা ছাড়া মনিটরিং কমিটিগুলোর নেতৃত্বে থাকবেন সরকারি আমলারা। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা বলে একটা কথা আমাদের এখানে চালু আছে। প্রস্তাবিত আইনের মনিটরিং কমিটিগুলো কি তা থেকে মুক্ত থাকবে?
বিলটি এখন সংশ্নিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পর্যালোচনার জন্য আছে। কমিটিকে ৩০ দিনের মধ্যে বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আমরা মনে করি, এখানে সুযোগ আছে বিলটি সম্পর্কে যেসব সমালোচনা আছে সেগুলো বিবেচনা করার। এর পরিপ্রেক্ষিতে আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির উচিত হবে যেসব সংস্থা এবং ব্যক্তির তরফ থেকে বিলটির বিভিন্ন ধারা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা হয়েছে; তাদের সঙ্গে কমিটির মতবিনিময়ের আয়োজন এবং যৌক্তিক ও অপরিহার্য সংশোধনীগুলো গ্রহণ করা। এটা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই যে, আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজকে বৈষম্যমুক্ত করতে হলে বিলটি যাদের কল্যাণার্থে পেশ করা হয়েছে তাদের উদ্বেগকে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার।
প্রস্তাবিত আইনটির একটা উল্লেখযোগ্য দিক হলো, জীবন-যাপন করতে গিয়ে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সদস্যরা যেসব বৈষম্যমূলক ঘটনার শিকার হন তার প্রায় সবই এর আওতায় রাখা হয়েছে। যেমন এখনও বহু জায়গায় একটু সচ্ছল মানুষেরা যে-রেস্তোরাঁয় খাবার খান সেখানে দলিত শ্রেণির মানুষকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। অনেক বাড়িওয়ালা স্বধর্মের না হলে কারও কাছে বাসা ভাড়া দেয় না। প্রস্তাবিত আইনটি পাস হলে এসব বৈষম্যমূলক কর্মকাণ্ডের শিকার মানুষ রাষ্ট্রের কাছে প্রতিকার চাইতে পারবেন। বিলটির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, সেখানে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যে মনিটরিং কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে বৈষম্য নিরোধকল্পে কর্মরত সংগঠনগুলোর মধ্য থেকে প্রতিনিধি রাখার পাশাপাশি নিম্নবর্গের মানুষদের প্রতিনিধিদেরও রাখা হয়েছে। তবে বিলটি সম্পর্কে নাগরিক সমাজের মধ্য থেকে বেশ কিছু সমালোচনাও এসেছে। যেমন, বৈষম্যের প্রতিকার কীভাবে হবে তা বিলটিতে স্পষ্ট করা হয়নি। আবার মনিটরিং কমিটির ক্ষমতা, এখতিয়ার ও স্বাতন্ত্র্য নিয়েও প্রশ্ন আছে। প্রতিকারের প্রক্রিয়াটিও অনেক লম্বা বলে মনে হচ্ছে। যেমন, প্রথমে প্রতিকারপ্রার্থীকে প্রথমে যেতে হবে জেলা মনিটরিং কমিটিতে। ৩০ দিনের মধ্যে তারা সমাধান দিতে না পারলে যেতে হবে বিভাগীয় কমিটিতে। তারাও ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিকার না দিলে ভুক্তভোগীকে জাতীয় মনিটরিং কমিটির দ্বারস্থ হতে হবে। এখানেও ব্যর্থ হলে আদালতে মামলা করা যাবে, যারা ৯০ দিনের মধ্যে বিষয়টির সুরাহা দেবেন। মনে রাখতে হবে, খুব স্বাভাবিক কারণেই বৈষম্যের প্রতিকারপ্রার্থীর বেশিরভাগ হবে নিম্নআয়ের মানুষ। তাদের পক্ষে এ দীর্ঘ প্রক্রিয়াটি অনুসরণের খরচ বহন করা সম্ভব? তা ছাড়া মনিটরিং কমিটিগুলোর নেতৃত্বে থাকবেন সরকারি আমলারা। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা বলে একটা কথা আমাদের এখানে চালু আছে। প্রস্তাবিত আইনের মনিটরিং কমিটিগুলো কি তা থেকে মুক্ত থাকবে?
বিলটি এখন সংশ্নিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পর্যালোচনার জন্য আছে। কমিটিকে ৩০ দিনের মধ্যে বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আমরা মনে করি, এখানে সুযোগ আছে বিলটি সম্পর্কে যেসব সমালোচনা আছে সেগুলো বিবেচনা করার। এর পরিপ্রেক্ষিতে আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির উচিত হবে যেসব সংস্থা এবং ব্যক্তির তরফ থেকে বিলটির বিভিন্ন ধারা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা হয়েছে; তাদের সঙ্গে কমিটির মতবিনিময়ের আয়োজন এবং যৌক্তিক ও অপরিহার্য সংশোধনীগুলো গ্রহণ করা। এটা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই যে, আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজকে বৈষম্যমুক্ত করতে হলে বিলটি যাদের কল্যাণার্থে পেশ করা হয়েছে তাদের উদ্বেগকে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার।
বিষয় : বৈষম্যবিরোধী বিল সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন