- মতামত
- সবাইকে যুক্ত করে বাজার খুলে দেওয়া উচিত
মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি বিতর্ক
সবাইকে যুক্ত করে বাজার খুলে দেওয়া উচিত

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশিদের জন্য খুলে দেওয়ার লক্ষ্যে গত বছরের ডিসেম্বরে দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ইতোমধ্যে প্রায় চার মাস চলে গেলেও বাংলাদেশ থেকে কোনো কর্মী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে যেতে পারছে না। জানা যায়, প্রধানত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের কারণে সরকার মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে অনুমতি দিতে পারছে না। এক গ্রুপ বলছে, এখানকার ২৫টা রিক্রুটিং এজেন্সি জোট বেঁধে মালয়েশিয়ার সরকারের মাধ্যমে আমাদের সরকারের ওপর চাপ তৈরি করছে। এতে ওই ২৫ এজেন্সিই সুযোগ পাবে কাজটি করার। এর বিপরীতে অন্য গ্রুপের বক্তব্য হলো, সিন্ডিকেটের বিষয়টি কতিপয় এজেন্সি মালিকের মনগড়া। তারাই বরং সরকারকে চাপ দিয়ে বাজারটি বন্ধ রাখছে। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি সমকালের কথা হয় দু'জন নেতৃস্থানীয় রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকের সঙ্গে। এদের একজন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ-বায়রার সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপন। আরেকজন হলেন জনশক্তি রপ্তানি খাতে সিন্ডিকিটের বিরোধিতাকারী কোম্পানিগুলোর সমন্বয়ে গঠিত রিক্রুটিং এজেন্সিজ ঐক্য পরিষদের মহাসচিব। সাক্ষাৎকার দুটো গ্রহণ করেছেন সাইফুর রহমান তপন।
সমকাল: বাংলাদেশে জনশক্তি রপ্তানি খাতের বর্তমান পরিস্থিতি একটু সংক্ষেপে বলবেন?
আরিফ: জনশক্তি রপ্তানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাত হলেও রাষ্ট্রের পরিচালকদের কাছ থেকে গুরুত্ব পাচ্ছে না। যেসব দেশে বাংলাদেশ থেকে কর্মী যায়, সেখানে আমাদের দূতাবাস সংগঠিত না। যেমন, যেসব কোম্পানি আমাদের কর্মী নিচ্ছে তাদের কোনো তালিকা সংশ্নিষ্ট বাংলাদেশ দূতাবাসে পাবেন না। কর্মীরাও ওইসব দূতাবাসে তেমন সেবা পায় না। আবার এখান থেকেও যে পদ্ধতিতে কর্মী পাঠানো হচ্ছে, তা ব্যবসায় বা কর্মীবান্ধব না। অর্থাৎ পুরো সেক্টরই একটা অগোছালো অবস্থায় আছে। ভিসা সংগ্রহ বা প্রসেস করার ক্ষেত্রে রিসিভিং এন্ডে একটা বিপুল খরচ হচ্ছে। আবার আমাদের এখানে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো যেভাবে কর্মী সংগ্রহ করে, সেখানেও অনেক অযৌক্তিক খরচ বহন করতে হচ্ছে।
সমকাল: এসব সমস্যা সমাধানে আপনারা সরকারকে কোনো পরামর্শ দেননি?
আরিফ: প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ মেনে পুরো সেক্টরকে ডিজিটালাইজ করে একটা সমাধান বের করা যায়। এ ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে আমাদের এজেন্সির সঙ্গে কর্মী গ্রহণকারী দেশের কোম্পানির একটা জীবন্ত ও স্বচ্ছ যোগাযোগ তৈরি হতে পারে, যার সঙ্গে কর্মীদেরও একটা সেতুবন্ধ তৈরি সম্ভব। এটা হলে আমি যেমন জানব, কোন দেশে কোন কোম্পানি কত কর্মী নিতে চায়। আবার অভিবাসনপ্রত্যাশী কর্মীরাও আমাদের সঙ্গে স্বচ্ছ একটা প্রক্রিয়ায় যোগাযোগ রাখতে পারবে।
সমকাল: এর ফলে কি অভিবাসন খরচ কমে আসবে?
আরিফ: একেবারে শূন্যে নিয়ে আসা সম্ভব। কারণ এর ফলে ভিসা বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাবে। মধ্যস্বত্বভোগীরাও দূর হবে। নিয়োগকারী কোম্পানিগুলো চাহিদামাফিক যোগ্য কর্মীর সন্ধান পাবে; আমরাও সঠিক কর্মী বাছাই এবং তাদেরকে গড়ে তোলার কাজে মনোযোগী হবো। আমরা যে এখন নারী কর্মী পাঠাই; এর জন্য নিয়োগকারী কোম্পানিগুলো আমাদেরকে সার্ভিস চার্জ দেয়। আমরাও নারী কর্মীদের কোনো ফি ছাড়াই সেখানে পাঠাই।
সমকাল: আচ্ছা, আপনি ভিসা বাণিজ্যসহ যেসব সমস্যার কথা বললেন, সেগুলো বজায় রেখে ৩৭ হাজার বা ৪০ হাজার টাকায় মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো সম্ভব?
আরিফ: না, সম্ভব না।
সমকাল: তাহলে সরকার কেন মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণকারী এজেন্সিগুলোকে শর্ত দিল- এত টাকার ওপরে নেওয়া যাবে না?
আরিফ: বিষয়টা হলো, প্রথমে সরকারই কর্মী প্রেরণের কাজটা করতে চাচ্ছিল। তখন ওই ৪০ হাজার টাকার বিষয়টি ঠিক হয়েছিল। কিন্তু সরকার ব্যর্থ হওয়ার পর বেসরকারি কোম্পানিকে যুক্ত করা হলো, যেটাকে বলা হচ্ছে জি-টু-জি প্লাস। কিন্তু এ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আনুষঙ্গিক কাজ করার দরকার ছিল। সরকার তা না করায় গোটা প্রক্রিয়াই ভেস্তে গেল।
সমকাল: জি-টু-জি প্লাস চালু হওয়ার পর ১০ কোম্পানিকে মালয়েশিয়ায় লোক পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হলো। সেটা বন্ধ হলো কেন?
আরিফ: দেখুন, জি-টু-জি প্লাস চালুর পর খরচটা হয়তো একটু বাড়ত। কিন্তু এত বাড়ত না যদি ১০ কোম্পানিকে না দিয়ে বিষয়টা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকত। তখন মালয়েশিয়ায় কর্মীর চাহিদা ছিল ১৫ লাখ, আর গেছে তিন লাখেরও কম। ১০ কোম্পানিকে দেওয়ার কারণেই এমনটা হলো। যদি সব কোম্পানিকে যুক্ত করা হতো তাহলে সারাদেশে একটা জাগরণ ঘটত; পরিবেশ তৈরি হতো। তখন কর্মী যেমন বেশি যেত, খরচও কম হতো। প্রতিযোগিতার কারণে আমরা খরচ কমাতে বাধ্য হতাম।
সমকাল: তাহলে আপনি বলতে চাচ্ছেন, যদি এখন ২৫ কোম্পানিকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাহলে একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হবে?
আরিফ: আমাদের কথা হলো, যে ২৫টা রিক্রুটিং এজেন্সিকে দায়িত্ব দেওয়া হবে, তারা কীসের ভিত্তিতে নির্বাচিত হবে? এমন কোনো বিশেষ যোগ্যতা কি তাদের আছে, যা অন্য রিক্রুটিং এজেন্সির নেই? সরকার যদি বলত, যারা মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে চায়, তাদের বিশেষ কিছু ক্রাইটেরিয়া থাকতে হবে, তাহলে একটা কথা ছিল। কিন্তু এ রকম কিছুই নেই। বলা হলো, নির্দিষ্ট ২৫ কোম্পানির মাধ্যমেই মালয়েশিয়ায় লোক পাঠাতে হবে। এ জন্য আমরা এটা মানছি না; সরকারও তা মানছে না। আমরা চাই, যাদেরই বৈধ লাইসেন্স আছে তাদেরই মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সুযোগ দিতে হবে। আর মালয়েশিয়ার যে চাহিদা, তা শুধু ২৫ কোম্পানির পক্ষে পূরণ করা সম্ভব না।
সমকাল: যাদেরকে সিন্ডিকেট বলে অভিযুক্ত করা হচ্ছে, তারা তো বলছেন, ২৫ জন পাঠাক বা সবাই পাঠাক; অবিলম্বে মালয়েশিয়ার বাজার খুলে দেওয়া হোক। কিন্তু আপনারা এখানে বাধা সৃষ্টি করছেন।
আরিফ: বাজার তারাই বন্ধ করে রাখছে, তাদের শর্তে সরকার মালয়েশিয়ায় লোক প্রেরণের অনুমতি দিচ্ছে না বলে। এরা সৌদি আরবের ক্ষেত্রেও মনোপলি তৈরির চেষ্টা করেছে; সফল হয়নি। সরকার আমাদেরকে জনশক্তি রপ্তানির লাইসেন্স দিয়েছে সব ক্রাইটেরিয়া পূরণের পরই। অতএব সবাইকে যুক্ত করেই মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার দ্রুত খুলে দেওয়া উচিত।
মন্তব্য করুন