- মতামত
- সুনীতির চর্চা বাড়ূক
সুনীতির চর্চা বাড়ূক

পাকিস্তান আমলে রাষ্ট্র ছিল প্রতিক্রিয়াশীল, কিন্তু পূর্ববাংলার সাধারণ মানুষ ছিল প্রগতিশীল। এই প্রগতিশীল জনগণই রাষ্ট্রের চক্রান্তের বিরুদ্ধে দাঁডিয়ে রক্ত দিয়ে মাতৃভাষার দাবি আদায় করেছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং পহেলা বৈশাখ নিষিদ্ধকরণ তারা রুখে দিয়েছিল। ব্রিটিশ আমলে বৈরী পরিবেশেও প্রগতিবাদী লেখার জন্য বেগম রোকেয়া কিংবা বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে হত্যা কিংবা দেশত্যাগের হুমকি দেওয়া হয়নি। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে প্রগতির চেয়ে প্রতিক্রিয়াশীলতা, ধর্মনিরপেক্ষতার চেয়ে সাম্প্রদায়িকতা এবং মুক্তবুদ্ধির চেয়ে মৌলবাদের চর্চা ও প্রভাব বেশি পরিলক্ষিত হয়।
কয়েকদিন আগে ধর্ম অবমাননার ধুয়া তুলে বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে জেলে যেতে হয়েছিল। ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ও স্বার্থের কারণে হিজাব-বিতর্কে একজন নারী শিক্ষক হয়রানির শিকার হয়েছেন। কপালে টিপ পরায় খোদ রাজধানী শহরে প্রকাশ্য দিবালোকে একজন নারীকে হেনস্তা করে এক পুলিশ সদস্য। কৃষিজমিতে পানি না পেয়ে দু'জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। এসব ঘটনা কি শুধুই 'বিচ্ছিন্ন', না উদ্দেশ্যপ্রণোদিত? বাংলাদেশে এ অবস্থা এক দিনে তৈরি হয়নি। আমাদের গৌরবময় ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে সুপরিকল্পিতভাবে তরুণ সমাজের দূরত্ব তৈরি করা হয়েছে। আমাদের লোকসংস্কৃতিকে ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে। ফলে গ্রাম থেকে যাত্রাপালা, জারি-সারি, পালাগান, কবিগান, লোকজ মেলা প্রায় উঠেই গেছে। অনেক ক্ষেত্রেই এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে গেলে একদিকে যেমন প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী 'জীবন দিয়ে হলেও' ঠেকানোর ঘোষণা দেয়; অন্যদিকে প্রশাসনও সহযোগিতার বদলে এমন অনুষ্ঠান করতে নিরুৎসাহিত করে- এই অভিযোগ আছে। যাত্রা-জারি-পালাগানের বিরুদ্ধে অনেকে অশ্নীলতার অভিযোগ তোলেন। ১৬ এপ্রিল সমকালের প্রথম পাতায় একটি খবরে দেখলাম, বৈশাখ উদযাপন করলে দাঁতভাঙা জবাবের হুঙ্কার ছাত্রলীগ নেতার। ওই ছাত্রনেতা তার কলেজে বৈশাখ উদযাপন করলে 'দাঁতভাঙা' জবাবের হুমকি দিয়েছেন, অথচ তিনি ছাত্রলীগ করেন। ছাত্রলীগের মূলমন্ত্র- শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতি। ছাত্রলীগের প্রাক্তন ও বর্তমান অনেক নেতাকর্মীকে জানি, যাদের পড়ালেখা, জ্ঞানের গভীরতা, কাজের প্রতি একাগ্রতা প্রশংসনীয়। কিন্তু এ কথাও অস্বীকার করা যাবে না- কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্ষমতার রাজনীতি নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশকে জ্ঞানচর্চা ও পড়ালেখাবিমুখ করেছে। আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্রে দৈন্য প্রতিক্রিয়াশীলতা ও সাম্প্রদায়িকতার আগুনে ঘি ঢালছে।
সহযোগী অধ্যাপক, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
কয়েকদিন আগে ধর্ম অবমাননার ধুয়া তুলে বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে জেলে যেতে হয়েছিল। ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ও স্বার্থের কারণে হিজাব-বিতর্কে একজন নারী শিক্ষক হয়রানির শিকার হয়েছেন। কপালে টিপ পরায় খোদ রাজধানী শহরে প্রকাশ্য দিবালোকে একজন নারীকে হেনস্তা করে এক পুলিশ সদস্য। কৃষিজমিতে পানি না পেয়ে দু'জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। এসব ঘটনা কি শুধুই 'বিচ্ছিন্ন', না উদ্দেশ্যপ্রণোদিত? বাংলাদেশে এ অবস্থা এক দিনে তৈরি হয়নি। আমাদের গৌরবময় ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে সুপরিকল্পিতভাবে তরুণ সমাজের দূরত্ব তৈরি করা হয়েছে। আমাদের লোকসংস্কৃতিকে ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে। ফলে গ্রাম থেকে যাত্রাপালা, জারি-সারি, পালাগান, কবিগান, লোকজ মেলা প্রায় উঠেই গেছে। অনেক ক্ষেত্রেই এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে গেলে একদিকে যেমন প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী 'জীবন দিয়ে হলেও' ঠেকানোর ঘোষণা দেয়; অন্যদিকে প্রশাসনও সহযোগিতার বদলে এমন অনুষ্ঠান করতে নিরুৎসাহিত করে- এই অভিযোগ আছে। যাত্রা-জারি-পালাগানের বিরুদ্ধে অনেকে অশ্নীলতার অভিযোগ তোলেন। ১৬ এপ্রিল সমকালের প্রথম পাতায় একটি খবরে দেখলাম, বৈশাখ উদযাপন করলে দাঁতভাঙা জবাবের হুঙ্কার ছাত্রলীগ নেতার। ওই ছাত্রনেতা তার কলেজে বৈশাখ উদযাপন করলে 'দাঁতভাঙা' জবাবের হুমকি দিয়েছেন, অথচ তিনি ছাত্রলীগ করেন। ছাত্রলীগের মূলমন্ত্র- শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতি। ছাত্রলীগের প্রাক্তন ও বর্তমান অনেক নেতাকর্মীকে জানি, যাদের পড়ালেখা, জ্ঞানের গভীরতা, কাজের প্রতি একাগ্রতা প্রশংসনীয়। কিন্তু এ কথাও অস্বীকার করা যাবে না- কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্ষমতার রাজনীতি নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশকে জ্ঞানচর্চা ও পড়ালেখাবিমুখ করেছে। আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্রে দৈন্য প্রতিক্রিয়াশীলতা ও সাম্প্রদায়িকতার আগুনে ঘি ঢালছে।
সহযোগী অধ্যাপক, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
মন্তব্য করুন