- মতামত
- জাফর ইকবাল হত্যাচেষ্টা মামলার রায়: ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলতার বার্তা
জাফর ইকবাল হত্যাচেষ্টা মামলার রায়: ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলতার বার্তা
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রিয় লেখক জাফর ইকবালকে হত্যার লক্ষ্যে হামলা করার দায়ে একজনকে যাবজ্জীবন, আরেকজনকে চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বুধবার সমকালের এক প্রতিবেদনে যেমনটা বলা হয়েছে, সিলেট বিভাগীয় সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মঙ্গলবার এ রায় ঘোষণা করেন। ২০১৮ সালের ৩ মার্চ শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চে একটি অনুষ্ঠানে জাফর ইকবালের ওপর ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি হামলা চালায় মাদ্রাসাছাত্র ফয়েজ। উপস্থিত শিক্ষার্থীরা ফয়েজকে হাতেনাতে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেন। তার বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়। ওই বছরেই ১৬ জুলাই পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র পেশ করে। আর ৪ অক্টোবর ফয়েজসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে মামলাটির বিচার শুরু হয়। অর্থাৎ মামলাটি করার মোটামুটি চার বছরের মধ্যেই এর বিচার শেষ হলো। আমরা দেখেছি, প্রায় একই ধরনের মামলা হওয়া সত্ত্বেও প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলায় রায় পেতে লেগেছে ১৮ বছরেরও বেশি সময়। মুক্তমনা লেখক অভিজিৎ ও অনন্ত বিজয় হত্যা মামলার বিচার শেষ হতে লেগেছে ছয় বছরেরও বেশি সময়। তা ছাড়া অভিজিৎ হত্যার আগে-পরে অনেকটা কাছাকাছি সময়ে আরও কয়েকজন প্রগতিমনা ও যুক্তিবাদী ব্লগার খুন হন। তাদের মামলাগুলো এখনও রায়ের মুখ দেখেনি। এ সবকিছু বিবেচনায় এটা বলা যায় যে, জাফর ইকবাল হত্যাচেষ্টা মামলাটি তুলনামূলক কম সময়ে ফয়সালা হয়েছে। এ জন্য বিশেষ করে তদন্ত ও মামলা পরিচালনার কাজে যুক্ত সবাই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।
বিচারিক আদালতে জাফর ইকবাল হত্যাচেষ্টা মামলার রায়টি এমন এক সময়ে দেওয়া হয়েছে, যখন এ ধরনের জঙ্গিবাদী হামলার শিকার মানুষদের অনেকেরই পরিবার ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছিল। তাদের মাঝে এমনও ধারণা গড়ে উঠেছে যে, শুধু বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে তারা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিতই হচ্ছেন না; আমাদের সমাজে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যে উগ্রবাদী ধ্যান-ধারণার প্রসার ঘটেছে, তার সঙ্গে সরকারের এক ধরনের আপসও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। এ ধারণা যে একেবারে অমূলক, তা বলা যাবে না। আমাদের মনে আছে, ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের ব্যানারে তরুণ-যুবাদের তুমুল উত্থান ঘটেছিল এবং প্রায় একই সময়ে এর বিপরীতে ধর্মীয় উগ্রবাদীরাও সংগঠিত হওয়া চেষ্টা করছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, প্রথমদিকে সরকার গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে একাত্ম হলেও এক পর্যায়ে প্রায় প্রকাশ্যেই ওই উগ্রবাদীদের সঙ্গে সমঝোতার নীতি গ্রহণ করে। সম্ভবত এরই অংশ হিসেবে ওই সময়ে যখন একের পর এক জঙ্গি হামলায় প্রগতিমনা মানুষেরা নিহত ও আহত হচ্ছিলেন, তখন সরকারের মন্ত্রী-এমপি এমনকি উচ্চ মহল থেকে আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে প্রায় কিছুই না বলে আক্রান্তদেরকে লেখা ও বলার বিষয়ে নানা নসিহত করা শুরু হয়। আর এ পরিস্থিতিতে প্রশাসনের লোকেরা, বিশেষ করে মামলা পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা জঙ্গি হামলার শিকার মানুষদের মামলাগুলোর ব্যাপারে এক ধরনের ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করেন। তবে গত এক বছরে ব্লগার অভিজিৎ ও অনন্ত হত্যা মামলার রায়, লেখক হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলার রায় এবং সর্বশেষ জাফর ইকবাল হত্যাচেষ্টা মামলার রায় প্রকাশিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এটা বলা যায়, অন্তত এ ধরনের মামলায় বিচারহীনতার সংস্কৃতির সম্ভবত অবসান ঘটতে চলেছে। এর পাশাপাশি এ বার্তাটাও হয়তো আমরা পাচ্ছি- স্রেফ ভিন্নমত প্রকাশের কারণে কাউকে খুন বা খুনের চেষ্টা করা হলে অপরাধীরা পার পাবে না।
আমাদের প্রত্যাশা, জাফর ইকবাল হত্যাচেষ্টা মামলায় নিম্ন আদালত মূল অপরাধীকে যে দণ্ড দিয়েছেন, তা উচ্চ আদালতেও বহাল থাকবে এবং দ্রুত তা কার্যকর হবে। আমাদের বিবেচনায় রায় ঘোষণা করতে গিয়ে আদালত যথার্থই মন্তব্য করেছেন- শুধু ভিন্নমত প্রকাশ এবং ভিন্ন মতাবলম্বী হওয়ায় এ দেশে হত্যার শিকার ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ানোর কারণে জাফর ইকবালের ওপর এমন হামলা 'কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়'। আমরা এও মনে করি যে, আদালতের পরামর্শ মেনে 'উগ্রবাদী ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে উৎসাহ প্রদানকারী বিভিন্ন সাইট ও গ্রুপকে চিহ্নিত করে' তাদের বিরুদ্ধে 'জোরালো ও কার্যকর' ব্যবস্থা গ্রহণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত তৎপর হওয়া উচিত।
বিচারিক আদালতে জাফর ইকবাল হত্যাচেষ্টা মামলার রায়টি এমন এক সময়ে দেওয়া হয়েছে, যখন এ ধরনের জঙ্গিবাদী হামলার শিকার মানুষদের অনেকেরই পরিবার ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছিল। তাদের মাঝে এমনও ধারণা গড়ে উঠেছে যে, শুধু বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে তারা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিতই হচ্ছেন না; আমাদের সমাজে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যে উগ্রবাদী ধ্যান-ধারণার প্রসার ঘটেছে, তার সঙ্গে সরকারের এক ধরনের আপসও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। এ ধারণা যে একেবারে অমূলক, তা বলা যাবে না। আমাদের মনে আছে, ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের ব্যানারে তরুণ-যুবাদের তুমুল উত্থান ঘটেছিল এবং প্রায় একই সময়ে এর বিপরীতে ধর্মীয় উগ্রবাদীরাও সংগঠিত হওয়া চেষ্টা করছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, প্রথমদিকে সরকার গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে একাত্ম হলেও এক পর্যায়ে প্রায় প্রকাশ্যেই ওই উগ্রবাদীদের সঙ্গে সমঝোতার নীতি গ্রহণ করে। সম্ভবত এরই অংশ হিসেবে ওই সময়ে যখন একের পর এক জঙ্গি হামলায় প্রগতিমনা মানুষেরা নিহত ও আহত হচ্ছিলেন, তখন সরকারের মন্ত্রী-এমপি এমনকি উচ্চ মহল থেকে আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে প্রায় কিছুই না বলে আক্রান্তদেরকে লেখা ও বলার বিষয়ে নানা নসিহত করা শুরু হয়। আর এ পরিস্থিতিতে প্রশাসনের লোকেরা, বিশেষ করে মামলা পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা জঙ্গি হামলার শিকার মানুষদের মামলাগুলোর ব্যাপারে এক ধরনের ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করেন। তবে গত এক বছরে ব্লগার অভিজিৎ ও অনন্ত হত্যা মামলার রায়, লেখক হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলার রায় এবং সর্বশেষ জাফর ইকবাল হত্যাচেষ্টা মামলার রায় প্রকাশিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এটা বলা যায়, অন্তত এ ধরনের মামলায় বিচারহীনতার সংস্কৃতির সম্ভবত অবসান ঘটতে চলেছে। এর পাশাপাশি এ বার্তাটাও হয়তো আমরা পাচ্ছি- স্রেফ ভিন্নমত প্রকাশের কারণে কাউকে খুন বা খুনের চেষ্টা করা হলে অপরাধীরা পার পাবে না।
আমাদের প্রত্যাশা, জাফর ইকবাল হত্যাচেষ্টা মামলায় নিম্ন আদালত মূল অপরাধীকে যে দণ্ড দিয়েছেন, তা উচ্চ আদালতেও বহাল থাকবে এবং দ্রুত তা কার্যকর হবে। আমাদের বিবেচনায় রায় ঘোষণা করতে গিয়ে আদালত যথার্থই মন্তব্য করেছেন- শুধু ভিন্নমত প্রকাশ এবং ভিন্ন মতাবলম্বী হওয়ায় এ দেশে হত্যার শিকার ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ানোর কারণে জাফর ইকবালের ওপর এমন হামলা 'কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়'। আমরা এও মনে করি যে, আদালতের পরামর্শ মেনে 'উগ্রবাদী ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে উৎসাহ প্রদানকারী বিভিন্ন সাইট ও গ্রুপকে চিহ্নিত করে' তাদের বিরুদ্ধে 'জোরালো ও কার্যকর' ব্যবস্থা গ্রহণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত তৎপর হওয়া উচিত।
মন্তব্য করুন