- মতামত
- তেঁতুলতলা মাঠ ও জনস্বার্থে সরকারের সিদ্ধান্ত
মতামত
তেঁতুলতলা মাঠ ও জনস্বার্থে সরকারের সিদ্ধান্ত

শিশু-কিশোরদের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য খেলার মাঠ জরুরি
রাজধানী ঢাকার কলাবাগানে তেঁতুলতলা মাঠ নিয়ে আলোচনার পর থেকেই খেলার মাঠের বিষয়টি নতুন করে সামনে আসছে। তেঁতুলতলা মাঠটি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই স্থানীয় লোকজন নানা কাজে ব্যবহার করে আসছেন। বিগত পঞ্চাশ বছর ধরে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে এই মাঠ ব্যবহূত হয়ে আসছে। সকাল-বিকাল অনেকে এখানে হাঁটতে আসেন। সুস্থ শরীরের জন্য, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হাঁটার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু উচ্চ দালানকোঠার এই ঢাকা শহরে কোথায় সেই হাঁটার উন্মুক্ত মাঠ? উত্তর ধানমন্ডির, কলাবাগানের বাসিন্দাদের উন্মুক্ত ময়দানে বুক ভরে মুক্ত বায়ু গ্রহণের, শ্বাস নেওয়ার একটি স্থান এই তেঁতুলতলার মাঠ। এখানে থানা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিলো। মানুষের আন্দোলনের মুখে সরকার জনস্বার্থে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সাম্প্রতিক ঘটনা আমরা জানি। গত ২৪ এপ্রিল থানা নির্মাণের কাজ শুরু হলে এই আন্দোলনের একজন সংগঠক, উদীচীর কর্মী সৈয়দা রত্না ভিডিও লাইভে ঘটনাটি সবাইকে জানান। এতে তাকে এবং তার ১৭ বছর বয়সের ছেলে প্রিয়াংশুকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে থানা হাজতে নিয়ে যায়। পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক কর্মী ও সাধারণ জনগণের দাবির মুখে ১৩ ঘণ্টা আটকে রাখার পরে মধ্যরাতে সৈয়দা রত্নার কাছ থেকে 'এই মাঠ রক্ষা আন্দোলনে থাকব না' এই মর্মে মুচলেকা লিখে নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনি অনভিপ্রেত ঘটনা। এর আগেও এই মাঠে খেলতে আসার কারণে পুলিশ বাচ্চাদের কান ধরে উঠবস করিয়েছিল। অভিযোগ করায় তাদের থানা থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এটা অনস্বীকার্য যে, দেশে অপরাধ বেড়ে গেছে। মানুষ ক্রমেই অপরাধপ্রবণ হয়ে যাচ্ছে। অসহিষ্ণু হয়ে ওঠছে। কিন্তু দেশে অন্যায়-অনাচার, অপরাধ দমনে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে যেমন আরও থানা স্থাপনের প্রয়োজন আছে, তেমনি এ দেশের শিশু-কিশোরদের সুস্থ মনমানসিকতাসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে খেলার মাঠের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
বর্তমান রাজধানী ঢাকা শহরে কতসংখ্যক শিশু ও কিশোরের বাস? সরকারি ও বেসরকারি কোনো পরিসংখ্যান আছে কি? তাদের খেলাধুলার জন্য পর্যাপ্ত মাঠ আছে কি? এর উত্তর সবাই জানেন- না, নেই। কোনো কোনো স্কুলেও ছাত্র-ছাত্রীদের খেলার মাঠ নেই। অথচ একটি এলাকায় আড়াই/তিন হাজার বাসিন্দা থাকলেই একটি বড় খেলার মাঠ বা হাঁটাচলার জন্য উন্মুক্ত খোলা স্থান থাকা দরকার এলাকাবাসীর শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য। আমরা বাংলাদেশের নাগরিকরা নগর পরিকল্পনার সেই আদর্শিক দিকে অগ্রসর হতে পারছি না। খেলার মাঠ না থাকার কারণে অনেক শিশু-কিশোর বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতায় এমনিতেই ভুগছে। তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সঠিকভাবে হচ্ছে না। আমি এখানে পথশিশুদের কথা বলছি না। শিশু অপরাধীদের কথাও বলছি না। যদিও তাদের কথাও বলা উচিত। কারণ তারা এই দেশের নাগরিক। নাগরিক সব সুবিধা ভোগ করার অধিকার তাদের আছে। কিন্তু পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার বৈষম্যের, অসমতার কারণে এবং নষ্ট রাজনীতির জন্য তারা এই স্বদেশে সুনাগরিক হয়ে বেড়ে ওঠার অধিকার বঞ্চিত শিশু-কিশোর।
গৃহবন্দি জীবনের কারণে অনেক শিশু-কিশোর মানসিক রোগে ভুগছে- এই তথ্য মনোচিকিৎসকরা প্রতিনিয়ত জানাচ্ছেন। সুস্থ শরীর সুস্থ মন গঠনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা নতুন করে বারবার স্মরণ করিয়ে দিতে হবে কেন? একইসঙ্গে বাংলাদেশে সব খেলার মাঠ শিশু-কিশোরদের জন্য সংরক্ষণ করা হোক। মেয়েদের খেলাধুলা, ব্যায়াম ও সাইকেল চালানো শেখার জন্য প্রতি জেলা, প্রতি উপজেলায় খোলা জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হোক উন্নত, সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বার্থে। জনগণের স্বার্থে। সরকার এ ব্যাপারে ইতিবাচক বলেই আমরা মনেকরি। অন্তত তেঁতুলতলা মাঠটি নিয়ে জনস্বার্থের সিদ্ধান্ত তাই-প্রমাণ করে। একইসঙ্গে অন্যান্য দখল হওয়া মাঠ উদ্ধারে সরকার ভূমিকা রাখবেন বলে প্রত্যাশা করি।
মন্তব্য করুন