'মন্ত্রীর স্ত্রীর ফোনে চলন্ত ট্রেনে টিটিই বরখাস্ত'- ৮ মে সমকালের প্রথম পাতায় প্রকাশিত সংবাদটি পড়ে পাঠক ক্ষুব্ধ হয়েছেন, কষ্ট পেয়েছেন। একজন সরকারি কর্মচারী তার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এভাবে হেনস্তা হবেন কেন? কিন্তু বাংলাদেশে এই ন্যক্কারজনক ঘটনার সাক্ষী হতো হলো আমাদের। রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনকে আমরা একজন সজ্জন রাজনীতিবিদ বলেই বলে জানি। পঞ্চগড়ে তার যথেষ্ট জনপ্রিয়তাও আছে। কিন্তু এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সাময়িকভাবে হলেও তার ইমেজ সংকট তৈরি করেছে।
নূরুল ইসলাম সুজন তার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর নিঃসঙ্গতা কাটাতে ৯ মাস আগে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। মন্ত্রীর কথাতেই উঠে এসেছে- নতুন স্ত্রী তাকে এখনও বুঝে উঠতে পারেননি। টিটিইকে বরখাস্ত করতে ফোনটি মন্ত্রীর ছিল না। ফোন দিয়েছেন তার স্ত্রী। স্ত্রী তো সরকারের কেউ নন। তার ফোনে কেন টিটিইকে বরখাস্ত করা হলো, তার কারণ দর্শাতে সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, মন্ত্রীর স্ত্রীর ফোনে বরখাস্ত করা ঠিক হয়নি। সবাই বলছেন, এটি অন্যায়। কিন্তু মন্ত্রীর স্ত্রী কি বুঝতে পেরেছেন- তিনি অন্যায় করেছেন? তার বক্তব্য পরিস্কার হওয়া দরকার ছিল।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এখানে রাজা-রানীর শাসন চলে না। তাই মন্ত্রীর স্ত্রী রাজার স্ত্রীর মতো প্রটোকল পাবেন না- এই সত্যটা কি মন্ত্রী-এমপি কিংবা প্রশাসনের কর্মকর্তার কোনো কোনো স্ত্রী ভুলে যান? রেলমন্ত্রী ঘটনার পরপর বিনা টিকিটে ভ্রমণকারীরা তার আত্মীয় নন বলে সংবাদমাধ্যমে বক্তব্য দিলেও পরে তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন, তারা তার স্ত্রীর দিক দিয়ে আত্মীয়। একই সঙ্গে বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করে টিটিইকে কাজে যোগদানের ব্যবস্থা করেছেন। পাশাপাশি মন্ত্রীর দপ্তরের কারও রেফারেন্সে বা আত্মীয় পরিচয়ে ট্রেন ভ্রমণের বিষয়ে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। এসবই ভালো উদ্যোগ। কিন্তু আর কোনো সরকারি কর্মচারীকে যেন এভাবে হেনস্তার শিকার হতে না হয়- এর নিশ্চয়তা সরকারকে দিতে হবে। একই সঙ্গে ওই টিটিই যেন পরে কোনো হয়রানির শিকার না হন, তাও নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি রাজনীতিবিদ ও প্রশাসনের দায়িত্বশীলদের পরিবারের সদস্যরা ক্ষমতার অপব্যবহার বিষয়ে সজাগ হবেন বলেও আশা করি। মন্ত্রীর স্ত্রীর 'ক্ষমতা' সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে।
রুহিয়া, ঠাকুরগাঁও

বিষয় : মাসুদ হাসান

মন্তব্য করুন