আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনা প্রায়ই ঘটে। এসব ক্ষেত্রে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে ওয়াকিটকি সেট ও অস্ত্র বহন করেন অপরাধীরা। অথচ সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কারও কালো রঙের ওয়াকিটকি ব্যবহার করার কথা নয়। মূলত অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফার লোভে এই অপরাধী চক্রের হাতে এসব সেট তুলে দিচ্ছেন।

অবৈধ এ ব্যবসায় জড়িত দুইজনকে রোববার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৩ ও বিটিআরসির যৌথ দল। তারা হলেন, অলেফিল ট্রেড করপোরেশনের মালিক আবদুল্লাহ আল সাব্বির ও তার সহযোগী আল মামুন। অভিযানে রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও গুলিস্তান স্টেডিয়াম মার্কেট থেকে ১৬৮টি ওয়াকিটকি সেট, ৩৫টি ব্যাটারি, ৩২টি চার্জার, ৬৩টি অ্যান্টেনা, ছয়টি মাউথ স্পিকার ও ছয়টি ব্যাক ক্লিপ জব্দ করা হয়।

এ ব্যাপারে জানাতে সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, র‌্যাব-৩ গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে আইন অমান্য করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অপরাধীদের কাছে কালো রঙের ওয়াকিটকি সেট বিক্রি করছেন। এটি দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই অনুসন্ধানে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পর রোববার রাতে অভিযান চালানো হয়।

গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, অলেফিল ট্রেড করপোরেশন নামে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক পেজের মাধ্যমে তারা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ওয়াকিটকি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে আসছিলেন। তাদের হেফাজত থেকে জব্দ করা ওয়াকিটকি সেট ও যন্ত্রাংশের লাইসেন্স এবং কারিগরি গ্রহণযোগ্যতা সংক্রান্ত সনদ বা কোনো বৈধ কাগজপত্র তারা দেখাতে পারেননি।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, উদ্ধার ওয়াকিটকি সেটের ফ্রিকোয়েন্সি ২৪৫-২৪৬ মেগাহার্জ। এগুলো দিয়ে রিপিটার ছাড়া আধা কিলোমিটার পর্যন্ত যোগাযোগ করা সম্ভব। এ ছাড়া বহুতল ভবনের একাধিক তলার মধ্যেও যোগাযোগ করা যায়। এগুলোর দাম ব্যাটারির চার্জ ধারণের ক্ষমতা অনুযায়ী পাঁচ থেকে ৫০ হাজার টাকা হয়।

তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ ওয়াকিটকি বহনকারী ব্যক্তিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। এ সুযোগে অপরাধীরা ওয়াকিটকি ব্যবহার করে ভুয়া ডিবি, র‌্যাব, ডিজিএফআই, এনএসআই বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কোনো বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ করে আসছেন। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। সেইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালনের সময় জনসাধারণের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া অপরাধীরা ওয়াকিটকির মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে অপরাধ সংঘটন করলে পরবর্তীকালে তাদের শনাক্ত করার ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হবে, যা সার্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তার আবদুল্লাহ আল সাব্বির পাঁচ বছর ধরে অবৈধভাবে ওয়াকিটকি সামগ্রী বিক্রি করে আসছিলেন। আল মামুন দুই বছর ধরে তার সহযোগী হিসেবে কাজ করছিলেন। এ পর্যন্ত তারা দুই শতাধিক ওয়াকিটকি অবৈধভাবে বিক্রি করেছেন।