- মতামত
- নিমতলীর দীর্ঘ ছায়া
নিমতলীর দীর্ঘ ছায়া

আবারও রাসায়নিকের আগুনে ঝরে গেল ৪১ জনের প্রাণ। এবারের ঘটনাস্থল চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপো। সোমবার সমকালের একগুচ্ছ প্রতিবেদন অনুসারে, গত শনিবার রাতে ওই ডিপোতে আগুন লাগে। সেখানে রপ্তানির জন্য তৈরি পোশাকের চার হাজারের বেশি কনটেইনারের সঙ্গে রাখা ছিল প্রায় ৮০০ টন অতিদাহ্য রাসায়নিক হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডভর্তি ৩৩টি কনটেইনার। আগুন ও অগ্নিনির্বাপকদের ছোড়া পানির সংস্পর্শে তা পরিণত হয় ভয়াবহ বিস্ম্ফোরকে। ফলে ঘনবসতিপূর্ণ গোটা এলাকা মুহূর্তে পরিণত হয় এক নরককুণ্ডে। এতেই রোববার রাত পর্যন্ত প্রাণ হারান ওই ৪১ জন, আহত হন দুই শতাধিক, যাঁদের অনেকের অবস্থা গুরুতর। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে- এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। প্রায় একই ধরনের অগ্নিকাণ্ড আমরা ২০১০ সালে দেখেছি রাসায়নিকের হাব বলে পরিচিত ঢাকার নিমতলীতে। ওই আগুনে ১২৪ জন মানুষ, যাঁদের মাঝে অনেক শিশুও ছিল- প্রাণ হারান। এর পর ২০১৯ সালে নিমতলীরই অদূরে অবস্থিত চকবাজারের চুড়িহাট্টায় একই ধরনের আগুনে প্রাণ হারান ৭১ জন। এ ছাড়া ২০২১ সালে নারায়ণগঞ্জের হাসেম ফুডসের আগুনের কথাও বলা যায়, যেখানে অবৈধভাবে সংরক্ষিত রাসায়নিকের কারণে ৫১ শ্রমিক অঙ্গার হয়ে যান। নিমতলীর ঘটনার পর সবাই বলেছিলেন, এ হলো সংশ্নিষ্ট সবার জন্য জেগে ওঠার আহ্বান। সরকারও তখন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় রাসায়নিকের কারবার কঠোরভাবে নিষিদ্ধের কথা বলেছিল। একই সঙ্গে এটাও বলা হয়েছিল- নিরাপত্তা নির্দেশনা না মেনে কাউকেই রাসায়নিক বা কোনো দাহ্য পদার্থের মজুত বা ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ওই সবকিছুই যে ছিল বাগাড়ম্বর মাত্র- সীতাকুণ্ডের ঘটনা তা-ই প্রমাণ করল। বলা বাহুল্য, সীতাকুণ্ডের আগুনে শুধু বহু পরিবার স্বজন হারায়নি; হাজার কোটি টাকার সম্পদও ভস্ম হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের মতো রাসায়নিক উপযুক্ত সতর্কতা ছাড়া কোথাও রাখা বিপজ্জনক। এ বিষয়টা বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষের না জানার কথা নয়। তারপরও আশ্চর্যজনকভাবে, সমকালের ওই প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১১ সালে কার্যক্রম চালুর পর থেকে ওই বেসরকারি কনটেইনার ডিপোতে জাহাজীকরণের আগ পর্যন্ত, কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের মতো রাসায়নিকের কনটেইনার আর দশটা পণ্যের মতোই রাখা হতো। দুর্ভাগ্যজনক হলো, রাসায়নিক ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত নির্দেশনার এমন লঙ্ঘন বছরের পর বছর বন্দর কর্তৃপক্ষের চোখের সামনেই ঘটছিল। সংশ্নিষ্ট বিষয়ের সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থারও বিষয়টি অজানা নয়। কেউ যদি বলেন, বিএম ডিপোর মালিক রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী, তাই সংশ্নিষ্ট সব কর্তৃপক্ষই ওই ডিপোর ব্যাপারে তাদের দায়িত্ব পালনে উদাসীন থেকেছে; তাকে দোষ দেওয়া যাবে না। আবার কেউ যদি তাঁদের এ ব্যর্থতার পেছনে উভয় পক্ষের মধ্যে কোনো অশুভ আঁতাত কাজ করেছে বলে মনে করেন, তাও খুব একটা অসংগত হবে না। তবে এটা নিশ্চিত করে বলে দেওয়া যায়, বিএম ডিপোর ঘটনাটি নিমতলীসহ অতীতের প্রাণঘাতী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো থেকে সংশ্নিষ্ট সব সরকারি কর্তৃপক্ষের শিক্ষা না নেওয়ার ফল। যার জন্য আবার দায়ী হলো জননিরাপত্তার প্রতি ওইসব কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতা।
যা হোক, নিমতলী-চকবাজার-হাসেম ফুডস-সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডির মতো ঘটনা দুর্ঘটনা বলে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যে কোনো বিচারে এগুলো কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড। আমাদের প্রত্যাশা, সীতাকুণ্ড নরককুণ্ডই আমাদের জন্য এ ধরনের শেষ ঘটনা হবে। এ জন্য অবশ্য অতীতে এ ধরনের ঘটনায় স্রেফ এক বা একাধিক তদন্ত কমিটি গঠনের পাশাপাশি কিছু ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায় এড়ানোর যে সংস্কৃতি দেখা গেছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আলোচ্য ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত সব পরিবারের উপযুক্ত পুনর্বাসন অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে গ্রহণযোগ্য তদন্তসাপেক্ষে ঘটনার জন্য দায়ীদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে। সর্বোপরি অবিলম্বে রাসায়নিক পণ্যের ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনা প্রয়োজনে গভীর পর্যালোচনা সাপেক্ষে নতুন নির্দেশনা তৈরি ও কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। তবে এ জন্য সচেতন সব মহলকে এ ইস্যুতে ধারাবাহিকভাবে সোচ্চার থাকাটাও জরুরি।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের মতো রাসায়নিক উপযুক্ত সতর্কতা ছাড়া কোথাও রাখা বিপজ্জনক। এ বিষয়টা বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষের না জানার কথা নয়। তারপরও আশ্চর্যজনকভাবে, সমকালের ওই প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১১ সালে কার্যক্রম চালুর পর থেকে ওই বেসরকারি কনটেইনার ডিপোতে জাহাজীকরণের আগ পর্যন্ত, কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের মতো রাসায়নিকের কনটেইনার আর দশটা পণ্যের মতোই রাখা হতো। দুর্ভাগ্যজনক হলো, রাসায়নিক ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত নির্দেশনার এমন লঙ্ঘন বছরের পর বছর বন্দর কর্তৃপক্ষের চোখের সামনেই ঘটছিল। সংশ্নিষ্ট বিষয়ের সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থারও বিষয়টি অজানা নয়। কেউ যদি বলেন, বিএম ডিপোর মালিক রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী, তাই সংশ্নিষ্ট সব কর্তৃপক্ষই ওই ডিপোর ব্যাপারে তাদের দায়িত্ব পালনে উদাসীন থেকেছে; তাকে দোষ দেওয়া যাবে না। আবার কেউ যদি তাঁদের এ ব্যর্থতার পেছনে উভয় পক্ষের মধ্যে কোনো অশুভ আঁতাত কাজ করেছে বলে মনে করেন, তাও খুব একটা অসংগত হবে না। তবে এটা নিশ্চিত করে বলে দেওয়া যায়, বিএম ডিপোর ঘটনাটি নিমতলীসহ অতীতের প্রাণঘাতী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো থেকে সংশ্নিষ্ট সব সরকারি কর্তৃপক্ষের শিক্ষা না নেওয়ার ফল। যার জন্য আবার দায়ী হলো জননিরাপত্তার প্রতি ওইসব কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতা।
যা হোক, নিমতলী-চকবাজার-হাসেম ফুডস-সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডির মতো ঘটনা দুর্ঘটনা বলে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যে কোনো বিচারে এগুলো কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড। আমাদের প্রত্যাশা, সীতাকুণ্ড নরককুণ্ডই আমাদের জন্য এ ধরনের শেষ ঘটনা হবে। এ জন্য অবশ্য অতীতে এ ধরনের ঘটনায় স্রেফ এক বা একাধিক তদন্ত কমিটি গঠনের পাশাপাশি কিছু ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায় এড়ানোর যে সংস্কৃতি দেখা গেছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আলোচ্য ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত সব পরিবারের উপযুক্ত পুনর্বাসন অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে গ্রহণযোগ্য তদন্তসাপেক্ষে ঘটনার জন্য দায়ীদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে। সর্বোপরি অবিলম্বে রাসায়নিক পণ্যের ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনা প্রয়োজনে গভীর পর্যালোচনা সাপেক্ষে নতুন নির্দেশনা তৈরি ও কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। তবে এ জন্য সচেতন সব মহলকে এ ইস্যুতে ধারাবাহিকভাবে সোচ্চার থাকাটাও জরুরি।
মন্তব্য করুন