পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ঢাকা-বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, কুয়াকাটা রুটে চলাচলকারী সব বাস বরিশালের ওপর দিয়ে যায়। কিন্তু এ সড়ক অপ্রশস্ত। মাত্র ২৪ ফুট সড়কের পক্ষে বাড়তি যানবাহনের চাপ নেওয়া সহজ হবে না। বেশ কিছুটা বিলম্ব হলেও ভাঙ্গা-কুয়াকাটা সড়ক ছয় লেন করার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। কিন্তু অতি সাদামাটা বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও রুপাতলি বাস টার্মিনাল আধুনিকায়নের কোনো প্রস্তুতি দৃশ্যমান নয়।
বরিশালে একটি আন্তর্জাতিক মানসম্মত বাস টার্মিনাল এখন সময়ের দাবি। থাকবে সিসি ক্যামেরাসহ আধুনিক ব্যবস্থাপনা, রেলস্টেশন, বিমানবন্দরের মতো সব সুযোগ-সুবিধা। অদূর ভবিষ্যতে ভাঙ্গা-বরিশাল-কুয়াকাটা রেললাইন স্থাপন হয়ে যাবে। একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করে সরকারের কাছে জরুরি ভিত্তিতে পাঠানো সব নাগরিকের প্রাণের দাবি। আইকনিক বাস টার্মিনাল দেশি-বিদেশি পর্যটক আকৃষ্ট করতে সহায়তা করবে। আধুনিক বাস টার্মিনাল নির্মাণের ক্ষেত্রে একটি উন্নত দেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় চলাচলকারী বাস ধারণক্ষমতার আলোকে পার্কিং জোন, প্রয়োজনীয় কাউন্টার, যাত্রী বিশ্রামাগার, ফিডিং কর্নার, মানসম্মত ওয়াশরুম, নামাজের স্থান, চালক-সহকারীদের বিশ্রামকক্ষ, প্রশিক্ষণকেন্দ্র, যাত্রীদের জন্য আলাদা মানসম্মত রেস্টুরেন্ট, চিকিৎসাকেন্দ্র, নিয়ন্ত্রণকক্ষ, প্রশাসনিক ভবন, নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ইউনিট, গাড়ি পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যবস্থা, উন্নত সিকিউরিটি গুরুত্বপূর্ণ। প্রবেশ এবং বহির্গমন পথ হবে ভিন্ন। লোকাল বাসের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রাখলে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা সহজ হবে। কার পার্কিং ব্যবস্থা নিয়েও ভাবতে হবে।
এর বাইরে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, স্থাপনার নান্দনিকতা। টার্মিনালে বাগান, নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিবেশকে ভিন্ন আবহ দেবে। যশোর পৌরসভার নিজস্ব আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইউনিট আছে। পাশাপাশি সিলেট আধুনিক টার্মিনাল নির্মাণে এগিয়ে থাকায় তাদের সঙ্গে তথ্য এবং অভিজ্ঞতা বিনিময় আমাদের জন্য সহায়ক হবে। বরিশাল নগরী ক্রমেই জনবহুল হয়ে পড়ছে। ৫৮ কিলোমিটারের বর্তমান নগরীর প্রস্তাবিত আয়তন নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০০ কিলোমিটারের কিছু বেশি। ২০ বছর পর নগরীর সম্ভাব্য জনসংখ্যা হবে প্রায় ৩০ লাখ। এই বিপুল নাগরিকের জন্য প্রয়োজনীয় বিনোদন ও ফাঁকা স্থানের অভাব খুবই প্রকট হবে। অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে ক্রমেই তা সংকুচিত হয়ে আসছে। গড়িয়ারপাড় এলাকায় আধুনিক বাস টার্মিনাল নির্মাণ শেষে বর্তমান স্থান উদ্যান, পার্ক বা খেলার মাঠে রূপান্তর করা হলে এটা হবে নগরীর ফুসফুস; নগরবাসীর উন্নত রুচিবোধের পরিচায়ক।
বরিশাল