
ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত দেশের আবাসিক ও শিল্প খাত। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও এলএনজির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় খরচ সাশ্রয়ের জন্য পরিকল্পিতভাবেই এ লোডশেডিং করতে হচ্ছে। সরকার সবাইকে গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সেই সঙ্গে ৭ জুলাই থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সারাদেশে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টার, শপিংমল, দোকানপাট, অফিস ও বাসাবাড়িতে আলোকসজ্জার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। পরিহাসের বিষয়, গত মার্চ মাসে দেশব্যাপী শতভাগ বিদ্যুতায়ন উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন দপ্তর, সংস্থা, কোম্পানি বা স্থাপনাগুলোয় আলোকসজ্জা করার জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল!
বস্তুত বর্তমান সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি যে খাতে উন্নয়নের প্রচারণা চালানো হয়েছে, সেটি হলো বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা যে প্রক্রিয়ায় বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং তার জন্য প্রাথমিক জ্বালানি সরবরাহের যে পরিকল্পনা করা হয়েছে, তার কারণেই আজকে লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত হতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াট হলেও প্রাথমিক জ্বালানির অভাবে সব বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো যাচ্ছে না। ফলে ১২ বা ১৩ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। অথচ বসিয়ে রাখা উৎপাদন ক্ষমতার জন্য দেশি-বিদেশি বেসরকারি মালিকদের ক্যাপাসিটি চার্জ বা ভাড়া ঠিকই দিতে হচ্ছে।
স্থানীয় উৎসের প্রাথমিক জ্বালানির ওপর গুরুত্ব না দিয়ে এলএনজি, তেল ও কয়লার মতো আমদানিনির্ভর প্রাথমিক জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। এখন যেহেতু বিশ্ববাজারে সেসব প্রাথমিক জ্বালানির দাম বেড়ে গেছে, তাই সেসব জ্বালানি আর আগের মতো আমদানি করা যাচ্ছে না। ফলে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
এলএনজি আমদানির কথাই ধরা যাক। সরকারের পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যানেই তো এলএনজি আমদানি দিনে দিনে বাড়ানোর কথা বলা হয়েছিল। তাহলে এখন কেন এলএনজির বেশি দাম বলে আমদানি বন্ধ রাখা হচ্ছে? এলএনজির দাম সব সময় কম থাকবে- এ রকম নিশ্চয়তা সরকার কোথায় পেয়েছিল? সরকারের পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান ২০১৬-তে বলা হয়েছিল, ২০১৯ সালে এলএনজির মাধ্যমে গ্যাসের চাহিদার ১৭ শতাংশ পূরণ করা হবে। এর পর এলএনজি আমদানি বাড়িয়ে ২০২৩ সাল নাগাদ গ্যাসের চাহিদার ৪০ শতাংশ, ২০২৮ সাল নাগাদ ৫০ শতাংশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ গ্যাসের চাহিদার ৭০ শতাংশ বিদেশ থেকে আমদানি করা এলএনজি দিয়ে পূরণ করা হবে। জ্বালানি পরিকল্পনা করা হবে এলএনজি আমদানিকে কেন্দ্র করে। তারপর যখন এলএনজির দাম বাড়বে তখন হুট করে এলএনজি আমদানি বন্ধ করে দেওয়া হবে- এটা তো কোনো সুষ্ঠু পরিকল্পনার নমুনা হতে পারে না। উচিত ছিল এলএনজি আমদানি আর তেল ও কয়লানির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রের পেছনে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচের বদলে সেই টাকা দেশীয় গ্যাস উত্তোলনে সক্ষমতা বৃদ্ধির পেছনে ব্যয় করা; দেশীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সকে ভারতের ওএনজিসির মতো দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্র অধিগ্রহণ করে সস্তায় গ্যাস আহরণে সক্ষম করা।
লক্ষণীয়, বাপেক্সকে ভারতের ওএনজিসির মতো সক্ষম করার কথা কিন্তু জাইকার তৈরি পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যানেও বলা হয়েছিল- 'প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত একদিন শেষ হয়ে যাবে। বাপেক্সের ভূমিকা পরিবর্তন করে একে দেশের বাইরের জ্বালানিসম্পদ অধিগ্রহণের অনুমোদন দিতে হবে যেন ভারতের ওএনজিসির মতো বাপেক্স ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় অবদান রাখতে পারে।'
খেয়াল করার বিষয়, মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী এলএনজি ও কয়লা আমদানিনির্ভরতা বাড়ানো হয়েছে। এলএনজি ও কয়লা আমদানির টার্মিনাল তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু মাস্টারপ্ল্যানেরই আরেকটি অংশে যেখানে বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছিল, সেটা বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি! সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০৭-০৮ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত ১৩ বছরে বেসরকারি খাত থেকে বিদ্যুৎ কিনতে গিয়ে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ বা ভাড়া বাবদই পরিশোধ করা হয়েছে ৬৪ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এই ক্যাপাসিটি চার্জ প্রতি বছর বেড়েই চলেছে। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ ১ হাজার ২৮০ কোটি টাকা খরচ হলেও ২০১৯-২০ অর্থবছরে খরচ হয়েছে ১০ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। এভাবে বেসরকারি মালিকদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনতে গিয়ে ভাড়া বাবদ হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করা হলেও গ্যাস উত্তোলন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য তার ভগ্নাংশও বিনিয়োগ করা হয়নি।
তেল-গ্যাস কমিটিসহ দেশের স্বাধীন বিশেষজ্ঞরা বারবার বলেছেন, জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো, জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি। আর তার জন্য চাই দেশীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের স্থলভাগ ও সাগরের গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধি এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিকাশ। বিদেশ থেকে আমদানি করা কয়লা ও এলএনজির ওপর নির্ভর করে সস্তায় নির্ভরযোগ্য জ্বালানি পাওয়া যাবে না। ফলে জ্বালানি নিরাপত্তাও অর্জন করা যাবে না। তেল, কয়লা বা এলএনজির দামে কোনো স্থিতিশীলতা থাকে না; এগুলো সরবরাহেরও কোনো নিশ্চয়তা থাকে না; পারমাণবিক বিদ্যুতের জ্বালানি ইউরেনিয়ামের জন্যও বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভর করতে হয়। কাজেই আমদানি করা তেল-কয়লা-এলএনজি-ইউরেনিয়ামভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে হাজার হাজার মেগাওয়াট ক্যাপাসিটি হয়তো বাড়ানো যায়; কিন্তু এর মাধ্যমে সস্তায় নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের নিশ্চয়তা পাওয়া যায় না।
দেশের টাকায় দেশীয় কর্তৃত্বে পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা আমরা সবাই জানি। দেশের স্থলভাগ ও সাগরের গ্যাস উত্তোলনের জন্যও কিন্তু একই মডেলের কথা বলা হচ্ছে বহু বছর ধরে। সাগরের তেল-গ্যাস উত্তোলনে বাংলাদেশের নিজস্ব দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা নেই; স্থলভাগে আছে। কিন্তু যাদের সাগরে গ্যাস উত্তোলনে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা আছে, তাদের ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ করে সাগরের গ্যাস উত্তোলনের উদ্যোগ নেওয়া যেত। তাতে বিদেশি কোম্পানিকে ঠিকাদারির জন্য অর্থ দিতে হলেও গ্যাসের মালিকানা বা গ্যাসক্ষেত্রের কর্তৃত্ব দিতে হতো না; বিদেশ থেকে ব্যয়বহুল এলএনজিও আমদানি করতে হতো না। বস্তুত যেসব বড় বিদেশি কোম্পানি সাগরের গ্যাস উত্তোলন করে, তারাও নিজেরা কাজ করে না। ঠিকাদারদের মাধ্যমেই কাজ করায়। এমন অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে।
বস্তুত জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন স্থানীয়ভাবে প্রাপ্য জ্বালানি (আমাদের ক্ষেত্রে গ্যাস) এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি। এর কোনো ব্যতিক্রম করে আর যাই হোক সস্তায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদনের নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে না।
কল্লোল মোস্তফা: লেখক, প্রকৌশলী; নির্বাহী সম্পাদক, সর্বজনকথা
বস্তুত বর্তমান সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি যে খাতে উন্নয়নের প্রচারণা চালানো হয়েছে, সেটি হলো বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা যে প্রক্রিয়ায় বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং তার জন্য প্রাথমিক জ্বালানি সরবরাহের যে পরিকল্পনা করা হয়েছে, তার কারণেই আজকে লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত হতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াট হলেও প্রাথমিক জ্বালানির অভাবে সব বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো যাচ্ছে না। ফলে ১২ বা ১৩ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। অথচ বসিয়ে রাখা উৎপাদন ক্ষমতার জন্য দেশি-বিদেশি বেসরকারি মালিকদের ক্যাপাসিটি চার্জ বা ভাড়া ঠিকই দিতে হচ্ছে।
স্থানীয় উৎসের প্রাথমিক জ্বালানির ওপর গুরুত্ব না দিয়ে এলএনজি, তেল ও কয়লার মতো আমদানিনির্ভর প্রাথমিক জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। এখন যেহেতু বিশ্ববাজারে সেসব প্রাথমিক জ্বালানির দাম বেড়ে গেছে, তাই সেসব জ্বালানি আর আগের মতো আমদানি করা যাচ্ছে না। ফলে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
এলএনজি আমদানির কথাই ধরা যাক। সরকারের পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যানেই তো এলএনজি আমদানি দিনে দিনে বাড়ানোর কথা বলা হয়েছিল। তাহলে এখন কেন এলএনজির বেশি দাম বলে আমদানি বন্ধ রাখা হচ্ছে? এলএনজির দাম সব সময় কম থাকবে- এ রকম নিশ্চয়তা সরকার কোথায় পেয়েছিল? সরকারের পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান ২০১৬-তে বলা হয়েছিল, ২০১৯ সালে এলএনজির মাধ্যমে গ্যাসের চাহিদার ১৭ শতাংশ পূরণ করা হবে। এর পর এলএনজি আমদানি বাড়িয়ে ২০২৩ সাল নাগাদ গ্যাসের চাহিদার ৪০ শতাংশ, ২০২৮ সাল নাগাদ ৫০ শতাংশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ গ্যাসের চাহিদার ৭০ শতাংশ বিদেশ থেকে আমদানি করা এলএনজি দিয়ে পূরণ করা হবে। জ্বালানি পরিকল্পনা করা হবে এলএনজি আমদানিকে কেন্দ্র করে। তারপর যখন এলএনজির দাম বাড়বে তখন হুট করে এলএনজি আমদানি বন্ধ করে দেওয়া হবে- এটা তো কোনো সুষ্ঠু পরিকল্পনার নমুনা হতে পারে না। উচিত ছিল এলএনজি আমদানি আর তেল ও কয়লানির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রের পেছনে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচের বদলে সেই টাকা দেশীয় গ্যাস উত্তোলনে সক্ষমতা বৃদ্ধির পেছনে ব্যয় করা; দেশীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সকে ভারতের ওএনজিসির মতো দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্র অধিগ্রহণ করে সস্তায় গ্যাস আহরণে সক্ষম করা।
লক্ষণীয়, বাপেক্সকে ভারতের ওএনজিসির মতো সক্ষম করার কথা কিন্তু জাইকার তৈরি পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যানেও বলা হয়েছিল- 'প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত একদিন শেষ হয়ে যাবে। বাপেক্সের ভূমিকা পরিবর্তন করে একে দেশের বাইরের জ্বালানিসম্পদ অধিগ্রহণের অনুমোদন দিতে হবে যেন ভারতের ওএনজিসির মতো বাপেক্স ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় অবদান রাখতে পারে।'
খেয়াল করার বিষয়, মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী এলএনজি ও কয়লা আমদানিনির্ভরতা বাড়ানো হয়েছে। এলএনজি ও কয়লা আমদানির টার্মিনাল তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু মাস্টারপ্ল্যানেরই আরেকটি অংশে যেখানে বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছিল, সেটা বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি! সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০৭-০৮ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত ১৩ বছরে বেসরকারি খাত থেকে বিদ্যুৎ কিনতে গিয়ে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ বা ভাড়া বাবদই পরিশোধ করা হয়েছে ৬৪ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এই ক্যাপাসিটি চার্জ প্রতি বছর বেড়েই চলেছে। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ ১ হাজার ২৮০ কোটি টাকা খরচ হলেও ২০১৯-২০ অর্থবছরে খরচ হয়েছে ১০ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। এভাবে বেসরকারি মালিকদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনতে গিয়ে ভাড়া বাবদ হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করা হলেও গ্যাস উত্তোলন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য তার ভগ্নাংশও বিনিয়োগ করা হয়নি।
তেল-গ্যাস কমিটিসহ দেশের স্বাধীন বিশেষজ্ঞরা বারবার বলেছেন, জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো, জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি। আর তার জন্য চাই দেশীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের স্থলভাগ ও সাগরের গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধি এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিকাশ। বিদেশ থেকে আমদানি করা কয়লা ও এলএনজির ওপর নির্ভর করে সস্তায় নির্ভরযোগ্য জ্বালানি পাওয়া যাবে না। ফলে জ্বালানি নিরাপত্তাও অর্জন করা যাবে না। তেল, কয়লা বা এলএনজির দামে কোনো স্থিতিশীলতা থাকে না; এগুলো সরবরাহেরও কোনো নিশ্চয়তা থাকে না; পারমাণবিক বিদ্যুতের জ্বালানি ইউরেনিয়ামের জন্যও বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভর করতে হয়। কাজেই আমদানি করা তেল-কয়লা-এলএনজি-ইউরেনিয়ামভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে হাজার হাজার মেগাওয়াট ক্যাপাসিটি হয়তো বাড়ানো যায়; কিন্তু এর মাধ্যমে সস্তায় নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের নিশ্চয়তা পাওয়া যায় না।
দেশের টাকায় দেশীয় কর্তৃত্বে পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা আমরা সবাই জানি। দেশের স্থলভাগ ও সাগরের গ্যাস উত্তোলনের জন্যও কিন্তু একই মডেলের কথা বলা হচ্ছে বহু বছর ধরে। সাগরের তেল-গ্যাস উত্তোলনে বাংলাদেশের নিজস্ব দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা নেই; স্থলভাগে আছে। কিন্তু যাদের সাগরে গ্যাস উত্তোলনে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা আছে, তাদের ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ করে সাগরের গ্যাস উত্তোলনের উদ্যোগ নেওয়া যেত। তাতে বিদেশি কোম্পানিকে ঠিকাদারির জন্য অর্থ দিতে হলেও গ্যাসের মালিকানা বা গ্যাসক্ষেত্রের কর্তৃত্ব দিতে হতো না; বিদেশ থেকে ব্যয়বহুল এলএনজিও আমদানি করতে হতো না। বস্তুত যেসব বড় বিদেশি কোম্পানি সাগরের গ্যাস উত্তোলন করে, তারাও নিজেরা কাজ করে না। ঠিকাদারদের মাধ্যমেই কাজ করায়। এমন অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে।
বস্তুত জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন স্থানীয়ভাবে প্রাপ্য জ্বালানি (আমাদের ক্ষেত্রে গ্যাস) এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি। এর কোনো ব্যতিক্রম করে আর যাই হোক সস্তায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদনের নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে না।
কল্লোল মোস্তফা: লেখক, প্রকৌশলী; নির্বাহী সম্পাদক, সর্বজনকথা
মন্তব্য করুন