
ভারতের বিহার রাজ্যের রাজনীতি এখন তুঙ্গে। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার। ৭১ বছর বয়সী এ রাজনীতিবিদ নিঃসন্দেহে এটা বিশ্বাস করতে স্বস্তিবোধ করছেন- তিনি নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিক হিসেবে অধিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। যদিও তাঁর দল নিয়মিতভাবেই জোট বদল করছে। এখন তিনি বিজেপির পক্ষ ত্যাগ করে পুরোনো তেজস্বী যাদবের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছেন। এটা সত্যি সিরিয়াস ঘটনা; মজা করার বিষয় নয়। পাঁচ বছরের মধ্যে বিজেপিকে দ্বিতীয়বারের মতো ছুড়ে ফেলে নীতিশ কুমার দেখাতে চান, তিনি তাঁর জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ) এবং বিহারকে এমন এক কঠিন হস্তে শাসন করেন, যেখানে ক্ষমতার অন্য কোনো দাবিদার নেই। ২০১৫ থেকে '১৭ সাল পর্যন্ত তিনি কংগ্রেস ও তেজস্বী যাদবের দল রাষ্ট্রীয় জনতা দল- আরজেডির শরিক ছিলেন। ২০১৫ সালে আরজেডির নেতা তেজস্বী যাদব যখন দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হন এর পর; তাঁদের সঙ্গ ছাড়েন নীতিশ কুমার।
কয়েক দশক ধরে নীতিশ কুমার বিজেপির জাতীয় দলে ছিলেন। কিন্তু তিনি গত এক দশক ধরে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর আসন পোক্ত করতে তিনি অনেক দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হন। তেজস্বী যাদবের সঙ্গে তিক্ত অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও নীতিশ কুমার আবারও তরুণ রাজনীতিকের সঙ্গে এ আশায় সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে সক্ষম হন- তিনি ২২ বছরের মধ্যে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে অষ্টমবারের মতো শপথ নেবেন। বলা বাহুল্য, দল বদলের জন্য নীতিশ কুমার 'পাল্টু চাচা' হিসেবে পরিচিত। অথচ বিজেপি (৭৪) কিংবা তেজস্বী যাদব (৮০) থেকেও নীতিশ কুমারের আসন সংখ্যা কম।
নীতিশ কুমারকে তেজস্বী যাদব এ কারণে নিয়েছেন; এর মাধ্যমে তেজস্বীর ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। বিহারে আরজেডির ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ যাদব-ভোট আর ১৭ শতাংশ রয়েছে মুসলিম ভোট। নীতিশ কুমারের সেখানে অতি পিছিয়ে পড়াদের ভোট রয়েছে। নীতিশ কুমার এসেছেন কুর্মী জাত থেকে, যাদের রয়েছে ৪ শতাংশ ভোট। যদিও ভোটের ময়দানে তা তেমন তাৎপর্যপূর্ণ নয়।
তেজস্বী যাদব সম্প্রতি আসাদুদ্দীন ওয়াইসির অল ইন্ডিয়া মজলিস ই ইত্তেহাদে মুসলিমিনের ৫টি সংসদীয় আসন থেকে ৪ জনকে নিতে পেরেছেন। দীর্ঘদিন ধরে ওয়াইসির বিরুদ্ধে এ অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি বিজেপির 'বি-টিম' হিসেবে ভূমিকা রাখছেন এবং বিহারের সব আঞ্চলিক দল ওয়াইসিকে বিহারে থাকতে না দেওয়ার ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।
নীতিশ কুমারের বিজেপির প্রতি ক্রোধের বিষয়ও সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে। নতুন অগ্নিপথ প্রকল্পে সেনাসদস্য নিয়োগ নিয়ে তিনি প্রকাশ্যে বিরোধিতা করে বক্তব্য দিয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপি নেতা অমিত শাহ তারপরও শান্ত ছিলেন। এর পর নীতিশ কুমার এই সপ্তাহে নীতি আয়োগ বৈঠকে যোগ দিতে অস্বীকার করেন; একই সঙ্গে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সৌজন্যে প্রধানমন্ত্রীর আয়োজন করা ডিনার বয়কট করেন। নীতিশ কুমারের সঙ্গে প্রাক্তন মন্ত্রী আরসিপি সিংয়ের প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ছিল। আরসিপি সিংকে রাজ্যসভার নির্বাচনে টিকিট দেয়নি বিজেপি। তাঁর সাংসদ পদের মেয়াদ শেষ হওয়ার এক দিন আগেই বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি। তাতে নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহর সঙ্গে তাঁর দূরত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
জোটের শরিক বাড়ানোর মাধ্যমে বিজেপির শক্তি বাড়তে পারে- এ ভয়ে ভীত হয়ে জুন মাসে উদ্ধভ ঠাকরে সরকারের পতনের পর নীতিশ কুমার কংগ্রেস নেতা সোনিয়া গান্ধীকে ফোন করেন। সূত্রগুলো বলছে, সোনিয়া গান্ধী নীতিশ কুমারের উদ্বেগ ভালোভাবে গ্রহণ করেন এবং যাদব পরিবারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক পুনঃউন্নয়নের বিষয়টিও ইতিবাচকভাবে নেন। সোনিয়া গান্ধী এমনকি লালু যাদবের সঙ্গেও কথা বলেন, যিনি তাঁর ছেলে তেজস্বী যাদবকে অতীতের ঘটনা ভুলে গিয়ে নীতিশ কুমারকে গ্রহণের পরামর্শ দেন। তেজস্বী যাদব সিদ্ধান্ত নিয়ে নীতিশকে গ্রহণ করেন। আগের মতো উভয় দল সমান ক্ষমতা ভাগ করে নেওয়ার ব্যাপারে তাঁরা একমত হন। নীতিশ কুমার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর দায়িত্ব পালন করে যাবেন।
নীতিশ কুমার ছিলেন সম্মুখসারির আন্দোলনের এমন এক গুরুত্বপূর্ণ নেতা যিনি তাঁর কণ্ঠ ও প্রজ্ঞার কারণে বিশেষ পরিচিত ছিলেন। তিনি এখন উপহাসের শিকার। তাঁকে বলা হচ্ছে, কুরসি কুমার বা চেয়ারলোভী কুমার। কিন্তু এখনও নীতিশ কুমার দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন শক্তভাবে ধারণ করে আছেন- কয়েক দশকের পুরোনো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছা তিনি লালন করছেন। বিরোধী দলে তাঁর ফিরে আসা; একই সঙ্গে পার্থ চক্রবর্তীর দুর্নীতির কারণে সম্প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তি যখন প্রশ্নবিদ্ধ তখন নীতিশ কুমার এ সুযোগটি ব্যবহারের চেষ্টা করছেন।
নীতিশ কুমারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এক নেতার সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তাঁর মতে, নীতিশ কুমার উত্তর ভারতের সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নেতা। শারদ পাওয়ার এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও তাঁর মেনে নেওয়া উচিত। ফলে নীতিশ কুমার সম্পর্কে এটাই সংক্ষেপে কথা- তিনি নতুন শরিকদের নিয়ে যখন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন তখন তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নটাও ভাসমান থাকল।
স্বাতী চতুর্বেদী: ভারতীয় লেখক ও সাংবাদিক; এনডিটিভি থেকে ভাষান্তর মাহফুজুর রহমান মানিক
কয়েক দশক ধরে নীতিশ কুমার বিজেপির জাতীয় দলে ছিলেন। কিন্তু তিনি গত এক দশক ধরে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর আসন পোক্ত করতে তিনি অনেক দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হন। তেজস্বী যাদবের সঙ্গে তিক্ত অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও নীতিশ কুমার আবারও তরুণ রাজনীতিকের সঙ্গে এ আশায় সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে সক্ষম হন- তিনি ২২ বছরের মধ্যে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে অষ্টমবারের মতো শপথ নেবেন। বলা বাহুল্য, দল বদলের জন্য নীতিশ কুমার 'পাল্টু চাচা' হিসেবে পরিচিত। অথচ বিজেপি (৭৪) কিংবা তেজস্বী যাদব (৮০) থেকেও নীতিশ কুমারের আসন সংখ্যা কম।
নীতিশ কুমারকে তেজস্বী যাদব এ কারণে নিয়েছেন; এর মাধ্যমে তেজস্বীর ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। বিহারে আরজেডির ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ যাদব-ভোট আর ১৭ শতাংশ রয়েছে মুসলিম ভোট। নীতিশ কুমারের সেখানে অতি পিছিয়ে পড়াদের ভোট রয়েছে। নীতিশ কুমার এসেছেন কুর্মী জাত থেকে, যাদের রয়েছে ৪ শতাংশ ভোট। যদিও ভোটের ময়দানে তা তেমন তাৎপর্যপূর্ণ নয়।
তেজস্বী যাদব সম্প্রতি আসাদুদ্দীন ওয়াইসির অল ইন্ডিয়া মজলিস ই ইত্তেহাদে মুসলিমিনের ৫টি সংসদীয় আসন থেকে ৪ জনকে নিতে পেরেছেন। দীর্ঘদিন ধরে ওয়াইসির বিরুদ্ধে এ অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি বিজেপির 'বি-টিম' হিসেবে ভূমিকা রাখছেন এবং বিহারের সব আঞ্চলিক দল ওয়াইসিকে বিহারে থাকতে না দেওয়ার ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।
নীতিশ কুমারের বিজেপির প্রতি ক্রোধের বিষয়ও সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে। নতুন অগ্নিপথ প্রকল্পে সেনাসদস্য নিয়োগ নিয়ে তিনি প্রকাশ্যে বিরোধিতা করে বক্তব্য দিয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপি নেতা অমিত শাহ তারপরও শান্ত ছিলেন। এর পর নীতিশ কুমার এই সপ্তাহে নীতি আয়োগ বৈঠকে যোগ দিতে অস্বীকার করেন; একই সঙ্গে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সৌজন্যে প্রধানমন্ত্রীর আয়োজন করা ডিনার বয়কট করেন। নীতিশ কুমারের সঙ্গে প্রাক্তন মন্ত্রী আরসিপি সিংয়ের প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ছিল। আরসিপি সিংকে রাজ্যসভার নির্বাচনে টিকিট দেয়নি বিজেপি। তাঁর সাংসদ পদের মেয়াদ শেষ হওয়ার এক দিন আগেই বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি। তাতে নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহর সঙ্গে তাঁর দূরত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
জোটের শরিক বাড়ানোর মাধ্যমে বিজেপির শক্তি বাড়তে পারে- এ ভয়ে ভীত হয়ে জুন মাসে উদ্ধভ ঠাকরে সরকারের পতনের পর নীতিশ কুমার কংগ্রেস নেতা সোনিয়া গান্ধীকে ফোন করেন। সূত্রগুলো বলছে, সোনিয়া গান্ধী নীতিশ কুমারের উদ্বেগ ভালোভাবে গ্রহণ করেন এবং যাদব পরিবারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক পুনঃউন্নয়নের বিষয়টিও ইতিবাচকভাবে নেন। সোনিয়া গান্ধী এমনকি লালু যাদবের সঙ্গেও কথা বলেন, যিনি তাঁর ছেলে তেজস্বী যাদবকে অতীতের ঘটনা ভুলে গিয়ে নীতিশ কুমারকে গ্রহণের পরামর্শ দেন। তেজস্বী যাদব সিদ্ধান্ত নিয়ে নীতিশকে গ্রহণ করেন। আগের মতো উভয় দল সমান ক্ষমতা ভাগ করে নেওয়ার ব্যাপারে তাঁরা একমত হন। নীতিশ কুমার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর দায়িত্ব পালন করে যাবেন।
নীতিশ কুমার ছিলেন সম্মুখসারির আন্দোলনের এমন এক গুরুত্বপূর্ণ নেতা যিনি তাঁর কণ্ঠ ও প্রজ্ঞার কারণে বিশেষ পরিচিত ছিলেন। তিনি এখন উপহাসের শিকার। তাঁকে বলা হচ্ছে, কুরসি কুমার বা চেয়ারলোভী কুমার। কিন্তু এখনও নীতিশ কুমার দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন শক্তভাবে ধারণ করে আছেন- কয়েক দশকের পুরোনো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছা তিনি লালন করছেন। বিরোধী দলে তাঁর ফিরে আসা; একই সঙ্গে পার্থ চক্রবর্তীর দুর্নীতির কারণে সম্প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তি যখন প্রশ্নবিদ্ধ তখন নীতিশ কুমার এ সুযোগটি ব্যবহারের চেষ্টা করছেন।
নীতিশ কুমারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এক নেতার সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তাঁর মতে, নীতিশ কুমার উত্তর ভারতের সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নেতা। শারদ পাওয়ার এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও তাঁর মেনে নেওয়া উচিত। ফলে নীতিশ কুমার সম্পর্কে এটাই সংক্ষেপে কথা- তিনি নতুন শরিকদের নিয়ে যখন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন তখন তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নটাও ভাসমান থাকল।
স্বাতী চতুর্বেদী: ভারতীয় লেখক ও সাংবাদিক; এনডিটিভি থেকে ভাষান্তর মাহফুজুর রহমান মানিক
মন্তব্য করুন