
দেয়াল লিখনে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের শহীদদের স্মরণ। খুলনা-যশোর মহাসড়কের পাশ থেকে শনিবার তোলা-সমকাল
শোকের কালো রঙে ছেয়ে আছে দেয়ালগুলো। মাঝেমধ্যে আছে আবেগ সৃষ্টিকারী পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের শহীদদের ছবি ও পরিচয়। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী ইতিহাস এবং ঐতিহাসিক মুহূর্ত নিয়ে বিভিন্ন চিত্র শোভা পাচ্ছে সড়কের পাশের দেয়ালগুলোতে। যাতায়াতের সময় পথচারীরা থমকে দাঁড়াচ্ছেন। দেখছেন, কেউ কেউ ছবিও তুলছেন। এভাবে খুলনা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো যেন এক একেকটি শোকগাথায় পরিণত হয়েছে।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দেয়ালচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে ১৫ আগস্টের শহীদদের জীবনী। ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগ নিয়েছে মহানগর যুবলীগ, সদর থানা আওয়ামী লীগ, ওজোপাডিকোসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান।
আয়োজকরা জানান, নতুন প্রজন্মের মধ্যে ১৫ আগস্টের ইতিহাস ও শহীদদের পরিচয় ভালোভাবে তুলে ধরতে এবং তাঁদের জীবন সম্পর্কে জানতে উদ্বুদ্ধ করতেই এই আয়োজন।
নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, শিববাড়ী মোড় থেকে রেলস্টেশন পর্যন্ত খুলনা-যশোর মহাসড়কের পূর্ব পাশে রেলওয়ের দেয়ালে প্রায় পৌনে এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শহীদদের জীবনী লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে আরেকটি দেয়ালে। মহানগর যুবলীগের উদ্যোগে এই দেয়ালচিত্র লাগানো হয়েছে। নগরীর বাংলাদেশ ব্যাংক, বিটিসিএল কার্যালয় ও জেলা স্টেডিয়ামের দেয়ালেও একই আয়োজন করেছেন সদর থানা আওয়ামী লীগ ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম। তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগেই দেয়ালে শহীদদের জীবনী ও পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। নগরীর বয়রা সড়কে নিজেদের দেয়ালে একইভাবে শহীদদের পরিচয় দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)।
স্থানীয়রা জানান, ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন খুলনা মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক শফিকুর রহমান পলাশ। ২০২০ ও ২০২১ সালে নগরীর শিববাড়ী মোড় থেকে রেলস্টেশন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ও শহীদদের জীবনীভিত্তিক দেয়ালচিত্র আঁকা হয়। ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছিলেন সুধীজন। এবার নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে এই উদ্যোগ।
খুলনা মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক শফিকুর রহমান পলাশ বলেন, আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল এসব ছবি দেখে বর্তমান প্রজন্ম শহীদদের চিনুক, তাঁদের সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে তাঁদের আদর্শে নিজেদের গড়ে তুলুক। এ ছাড়া আমাদের দ্বিতীয় উদ্দেশ্য ছিল, শোক দিবসে আত্মকেন্দ্রিক প্রচার থেকে বের হয়ে আসা। শহীদদের ছবি ছোট করে দিয়ে নিজের হাসিমুখের ছবি বড় করে প্রচার করার যে অপসংস্কৃতি শুরু হয়েছিল, এটা বন্ধ করা।
সদর থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা। ফজলুল হক মনি ছিলেন মুজিব বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা। একইভাবে দেশের জন্য শহীদ শেখ আবু নাসের, শেখ জামাল, সুলতানা কামাল, রোজী জামাল, কর্নেল শাফায়াত জামিল, বেগম আরজু মনির অবদান কখনও ভুলবার নয়। অথচ তাঁদের নাম নতুন প্রজন্মের অনেকেই জানে না। দেয়ালচিত্রের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম তাঁদের সম্পর্কে জানতে উদ্বুদ্ধ হবে।
মন্তব্য করুন