এশিয়া কাপ ভাগ্য বাংলাদেশের বরাবরই খারাপ- এ কথা বললে বোধ হয় অত্যুক্তি হবে না। এর আগে তিনবার ফাইনালে উঠেও কাপ নিতে পারেনি বাংলাদেশ দল। ভারত এবং পাকিস্তানের সঙ্গে দু'বার ফাইনালে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও জিততে পারেনি। আর চলমান এশিয়া কাপে তো সুপার ফোরেই উঠতে পারিনি আমরা। এবার গ্রুপ পর্যায়ে দুটি খেলার কোনোটাই জিততে পারেনি বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে ৩০ আগস্ট আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ যেভাবে হেরেছে, তা নিয়ে আলোচনা কিংবা সমালোচনা কম হয়নি। সংবাদমাধ্যমে খবর ও নানামুখী বিশ্নেষণ প্রকাশিত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও মানুষ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। প্রতিটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ জিতুক- এটাই আমাদের সমর্থকগোষ্ঠীর প্রত্যাশা। প্রতিপক্ষ যখন আফগানিস্তান তখন এ প্রত্যাশা আরও চওড়া হয়। কিন্তু টি-টোয়েন্টির সামর্থ্যের বিচারে আফগানিস্তানের জেতা কোনো বিস্ময়কর ব্যাপার ছিল না। কারণ, দলটি টি-টোয়েন্টিতে ধারাবাহিক সাফল্য দেখিয়ে আসছে। এমনকি ২৮ আগস্ট এশিয়া কাপের সূচনা দিনে আফগানিস্তান যেভাবে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে জয়লাভ করে, তাতে অনেকেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন- বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও হয়তো অন্য কোনো ফল নয়।

টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের খেলার রেকর্ড ভালো নয়। এমনকি সবশেষ গত মাসে টি-টোয়েন্টি র‌্যাঙ্কিংয়ে ১১ নম্বরে থাকা জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সিরিজ হেরে আসে বাংলাদেশ। এর আগের মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে দুটি টি-টোয়েন্টির মধ্যে একটিতেও বাংলাদেশ জিততে পারেনি। এরপরও চলমান এশিয়া কাপে জয়লাভের একটা আশা তৈরি হয়। বিশেষত, সাকিব আল হাসান অধিনায়ক হওয়ার কারণে। সাকিব এখনও ওয়ানডে ফরম্যাটে বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অলরাউন্ডার হিসেবে তাঁর অবস্থান দুইয়ে। বাংলাদেশের পোস্টার বয়খ্যাত সাকিবের কারণে দলের অন্যান্য খেলোয়াড়ও উজ্জীবিত হতে পারেন। পুরো টিম ভালোভাবে খেললে স্বাভাবিকভাবেই জয় আসে। এ ছাড়া দলে মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহর মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড় ছিলেন। ছিলেন 'কাটার মাস্টার'খ্যাত মোস্তাফিজুর রহমানের মতো বোলারও। সব মিলিয়ে আফগানিস্তানের সঙ্গে জয়ের প্রত্যাশা জোরালো ছিল।

সেদিন টসে জিতলেও ম্যাচে হারে বাংলাদেশ। শুরুতেই ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিসংগত ছিল- তা নিয়ে প্রশ্ন করাই যায়। এবারের এশিয়া কাপে যে ধারা আমরা দেখছি, তাতে টসে জিতে প্রায় সবাই ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। যাহোক, সেটাও বড় সমস্যা ছিল না- যদি বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে বেশি রান করতে পারতো। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ৭ উইকেট হারিয়ে ১২৭ রান করে। এটি আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে কত অল্প রান সেটা তাদের ব্যাটিংয়ের সময়ই টের পাওয়া যায়। ওপেনাররা দুইয়ের ডিজিটে পৌঁছতে পারেননি। সাকিব আল হাসান ১১ রান করলেও মুশফিক করেছেন ১ রান। মাহমুদউল্লাহ ২৭ বলে ২৫ রান করলেও মোসাদ্দেকের রান উল্লেখযোগ্য। ৩১ বলে ৪৮ রান। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে হারার পেছনে ব্যটাররাই মূল ভূমিকা রাখেন।

বৃহস্পতিবার এশিয়া কাপের দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ের শুরুটা খুব খারাপ করেনি। আফগানিস্তানের ম্যাচে বাংলাদেশ যে ওপেনার সংকটে ভুগেছে, সেজন্য শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সাব্বির রহমান আর মেহেদি হাসান মিরাজকে নামানো হয়। মিরাজ ২৬ বলে ৩৮ করলেও সাব্বির আউট হয়ে যান ৫ রান করেই। এরপর মুশফিকও ভালো করতে পারেননি। তবে সাকিব আল হাসানসহ অনেকেই ভালো খেলেছেন। শেষ পর্যন্ত ফাইট করার মতো ১৮৩ রান পুঁজি হলেও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধেও জিততে পারেনি বাংলাদেশ।

টি-টোয়েন্টি র‌্যাঙ্কিংয়ে আফগানিস্তান থেকে এক ধাপ এগিয়ে ৯-এ বাংলাদেশ। যদিও র‌্যাঙ্কিং বিচার করে খেলার বাস্তবতা বোঝা কঠিন, এরপরও এর মাধ্যমে দলগুলোর শক্তিমত্তা আঁচ করা যায়। শ্রীলঙ্কার অবস্থান ৮-এ থাকলেও দেশটির সাম্প্রতিক টি-টোয়েন্টির রেকর্ড ভালো নয়। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কা খেলেছে একঝাঁক নতুন বোলার নিয়ে। এরপরও বাংলাদেশ পারেনি। কারণ, বাংলাদেশের দুঃখ 'এশিয়া কাপ'।

এবার আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জেতা কঠিন ছিল বটে কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে জিততে না পারার আক্ষেপ থাকবে নিশ্চয়ই। অনেকে সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বের সমালোচনা করেছেন। আমার মনে হয়, একা অধিনায়কের দায় নয়; পুরো টিমকেই ভালো খেলতে হবে। আগামী মাসে অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আমরা অন্তত সেটাই দেখতে চাই।