- মতামত
- বেপরোয়া
বেপরোয়া
রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের তারাগঞ্জ এলাকায় রোববার রাতে দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ৯ জনের প্রাণহানি ও অর্ধশতাধিক আহত হওয়ার অঘটন ভয়াবহ- সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সার্বিক চিত্রের কাছে এই ঘটনা কারও কাছে 'সামান্য' বিবেচিত হলে দোষ দেওয়া যাবে কি? যেমন বেসরকারি সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, শুধু আগস্ট মাসেই দেশে ৫১৯ জন সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। আহত প্রায় ১ হাজার। ওই সংস্থাই জানিয়েছে, চলতি বছরের আট মাসে দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে প্রাণহানির সংখ্যা কমবেশি ৪ হাজার ৭শ। রংপুরের দুর্ঘটনার পর সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে উঠে আসা 'মানবিক প্রতিবেদন' আমাদের বেদনা জাগায় বটে; সাংবৎসরিক চিত্র দেখলে তা আসলে আতঙ্কে রূপান্তর হয়। প্রশ্ন জাগে, মহাসড়ক ধরে ক্রমে দীর্ঘ হতে থাকা মৃত্যুর মিছিল কি থামবে না? আর কত আহতের কান্না ও নিহতের স্বজনের আহাজারিতে বাতাস ভারি হতে থাকবে? বাসচালকরা পরোয়া করবে কীসে? দুর্ঘটনার শিকার একটি বাসের চালক যেভাবে গাঁজা সেবন করে স্টিয়ারিংয়ে বসে ছিল; যাত্রীর জীবন নিয়ে এর চেয়ে বেপরোয়া খেলা আর কী হতে পারে?
আমরা এই সম্পাদকীয় কলামেই বিভিন্ন সময়ে চালক ও সহকারীদের প্রশিক্ষণ, লাইসেন্সের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছি। বাস্তবতা হচ্ছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দায়ী থাকে তাদের বেপরোয়া মনোভাব কিংবা মাদক সেবন। রংপুরের দুর্ঘটনায় এর পুনরাবৃত্তিই দেখা গেল। আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, ২০১৮ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে শিক্ষার্থীদের 'দেশ কাঁপানো' আন্দোলনের পর বেপরোয়া বাসগুলোর হুঁশ ফিরবে। আমাদের মনে আছে, আন্দোলনের মুখে ওই বছর সেপ্টেম্বরে অনেকটা তড়িঘড়ি করে নতুন সড়ক পরিবহন আইন পাস করা হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের দাবিমতে মৃত্যুদণ্ডের বিধান না রাখলেও সাজার মেয়াদ ও জরিমানার পরিমাণও বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে যখন আইনটি কার্যকরের ঘোষণা আসে, তখন পরিবহন ধর্মঘটের মাধ্যমে দেশ কার্যত অচল করে দেওয়া হয়। এর কাছে নতি স্বীকারের মাধ্যমে আইনটির ২৯টি ধারা সংশোধনের সুপারিশ করে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়। সংশোধিত খসড়াটি বর্তমানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে রয়েছে বিল আকারে সংসদে উপস্থাপিত হওয়ার অপেক্ষায়।
এই আশঙ্কা অমূলক হতে পারে না- শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পাস হওয়া আইনটি কার্যকর না হওয়ার কারণেই দেশে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আসছে না। বিভিন্ন পরিবহন সংগঠনের যেসব নেতা বলেছিলেন যে, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কঠোর আইনের প্রয়োজন নেই; তাঁদের এখন জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি অমূলক হতে পারে না। আমরা মনে করি, মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের বেপরোয়া মনোবৃত্তিই চালকদের বেপরোয়া আচরণের জন্য বহুলাংশে দায়ী। দুর্ঘটনা ঘটলেই যেভাবে চালকদের পক্ষ নিয়ে তারা চাপান-উতর চালায়; তাতে নিয়ম মানার প্রবণতা তৈরি হবে কীভাবে? দুর্ঘটনার দায় সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষও এড়াতে পারে না। সমকালেই প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আমরা দেখেছিলাম- পরিবহনের ফিটনেস পরীক্ষার নামে কী হয়। আমরা চাইব, সড়কে নামার আগেই গাড়ির ফিটনেস ও চালকের স্বাভাবিকত্ব নিশ্চিত করতেই হবে। চালকের বেপরোয়া আচরণ কিংবা যানবাহনের ত্রুটির কারণে আর একটি প্রাণও যেন হারাতে না হয়।
এও মনে রাখা জরুরি, সড়কে নিয়ম রক্ষার বিষয়টিও বহুপক্ষীয়। পরিবহন চালক ও শ্রমিকের পাশাপাশি যাত্রীদেরও সতর্ক হতে হবে। পথে বেপরোয়া গতি দেখলেই প্রতিবাদ জানানো এবং প্রয়োজনে বাস থামিয়ে দেওয়া। এ ক্ষেত্রে মহাসড়কে টহল পুলিশ সক্রিয় ও আন্তরিক হলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। ইতোমধ্যে নাগরিকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ৯৯৯ ফোন নম্বর কীভাবে মহাসড়কে বেপরোয়া যানবাহন নিয়ন্ত্রণে কাজে লাগানো যায়, সংশ্নিষ্টরা ভেবে দেখতে পারেন। সবচেয়ে বড় কথা, আইনের প্রয়োগ সর্বাত্মক হতে হবে। আমরা দেখি, ট্রাফিক সপ্তাহ এলেই অভিযান চালানো হয়। অথচ অভিযান সাংবৎসরিক হওয়া উচিত। আর পরিবহন খাতে বহুল আলোচিত বখরা, চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক প্রভাবের মতো 'বেপরোয়া' অনিয়মগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা না গেলে সকলই গরল ভেল- তা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই।
আমরা এই সম্পাদকীয় কলামেই বিভিন্ন সময়ে চালক ও সহকারীদের প্রশিক্ষণ, লাইসেন্সের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছি। বাস্তবতা হচ্ছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দায়ী থাকে তাদের বেপরোয়া মনোভাব কিংবা মাদক সেবন। রংপুরের দুর্ঘটনায় এর পুনরাবৃত্তিই দেখা গেল। আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, ২০১৮ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে শিক্ষার্থীদের 'দেশ কাঁপানো' আন্দোলনের পর বেপরোয়া বাসগুলোর হুঁশ ফিরবে। আমাদের মনে আছে, আন্দোলনের মুখে ওই বছর সেপ্টেম্বরে অনেকটা তড়িঘড়ি করে নতুন সড়ক পরিবহন আইন পাস করা হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের দাবিমতে মৃত্যুদণ্ডের বিধান না রাখলেও সাজার মেয়াদ ও জরিমানার পরিমাণও বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে যখন আইনটি কার্যকরের ঘোষণা আসে, তখন পরিবহন ধর্মঘটের মাধ্যমে দেশ কার্যত অচল করে দেওয়া হয়। এর কাছে নতি স্বীকারের মাধ্যমে আইনটির ২৯টি ধারা সংশোধনের সুপারিশ করে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়। সংশোধিত খসড়াটি বর্তমানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে রয়েছে বিল আকারে সংসদে উপস্থাপিত হওয়ার অপেক্ষায়।
এই আশঙ্কা অমূলক হতে পারে না- শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পাস হওয়া আইনটি কার্যকর না হওয়ার কারণেই দেশে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আসছে না। বিভিন্ন পরিবহন সংগঠনের যেসব নেতা বলেছিলেন যে, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কঠোর আইনের প্রয়োজন নেই; তাঁদের এখন জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি অমূলক হতে পারে না। আমরা মনে করি, মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের বেপরোয়া মনোবৃত্তিই চালকদের বেপরোয়া আচরণের জন্য বহুলাংশে দায়ী। দুর্ঘটনা ঘটলেই যেভাবে চালকদের পক্ষ নিয়ে তারা চাপান-উতর চালায়; তাতে নিয়ম মানার প্রবণতা তৈরি হবে কীভাবে? দুর্ঘটনার দায় সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষও এড়াতে পারে না। সমকালেই প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আমরা দেখেছিলাম- পরিবহনের ফিটনেস পরীক্ষার নামে কী হয়। আমরা চাইব, সড়কে নামার আগেই গাড়ির ফিটনেস ও চালকের স্বাভাবিকত্ব নিশ্চিত করতেই হবে। চালকের বেপরোয়া আচরণ কিংবা যানবাহনের ত্রুটির কারণে আর একটি প্রাণও যেন হারাতে না হয়।
এও মনে রাখা জরুরি, সড়কে নিয়ম রক্ষার বিষয়টিও বহুপক্ষীয়। পরিবহন চালক ও শ্রমিকের পাশাপাশি যাত্রীদেরও সতর্ক হতে হবে। পথে বেপরোয়া গতি দেখলেই প্রতিবাদ জানানো এবং প্রয়োজনে বাস থামিয়ে দেওয়া। এ ক্ষেত্রে মহাসড়কে টহল পুলিশ সক্রিয় ও আন্তরিক হলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। ইতোমধ্যে নাগরিকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ৯৯৯ ফোন নম্বর কীভাবে মহাসড়কে বেপরোয়া যানবাহন নিয়ন্ত্রণে কাজে লাগানো যায়, সংশ্নিষ্টরা ভেবে দেখতে পারেন। সবচেয়ে বড় কথা, আইনের প্রয়োগ সর্বাত্মক হতে হবে। আমরা দেখি, ট্রাফিক সপ্তাহ এলেই অভিযান চালানো হয়। অথচ অভিযান সাংবৎসরিক হওয়া উচিত। আর পরিবহন খাতে বহুল আলোচিত বখরা, চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক প্রভাবের মতো 'বেপরোয়া' অনিয়মগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা না গেলে সকলই গরল ভেল- তা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই।
মন্তব্য করুন