
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরটি ফলপ্রসূ হয়েছে। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব বর্তমানে খাদ্য ও জ্বালানি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সেখানে ভারত এ সংকট মোকাবিলায় বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে। জ্বালানি আমদানি করাসহ বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে ও দুই দেশের বাণিজ্য প্রসারে সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি নিয়ে বোঝাপড়া শুরু হয়েছে। আরেকটি খুবই ইতিবাচক বিষয় সামনে এসেছে সেটি হচ্ছে, ভারতের ভূমি ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে বিনামূল্যে পণ্য রপ্তানি করা। নেপাল, ভুটান বা অন্য দেশে পণ্য ট্রানজিটে ভারত সম্মতি দিয়েছে। ফলে বলা যায়, এ সময়ে সফরটি দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন মাত্রা নেবে।
এ বৈঠকে বড় কোনো চুক্তি হওয়ার আভাস ছিল না। এটি মূলত কূটনৈতিক ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার সফর। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে ঝালিয়ে নেওয়ার বিষয় ছিল সফরের মধ্য দিয়ে। সম্পর্কে আরও আস্থা ও গতি সঞ্চারই ছিল প্রধান বিষয়। সেই চেষ্টাই করা হয়েছে। দুই দেশ সাতটি সমঝোতা সই করেছে। আর গঙ্গার পর প্রথমবারের মতো কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে সমঝোতা সই হয়েছে। এটি খুবই ইতিবাচক বিষয়।
দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী খোলামেলা অনেক বেশি আলোচনা করার সুযোগ পেয়েছেন। যেখানে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের সব বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ বৈঠকের ওপর ভিত্তি করে আরও অগ্রগতি দেখব। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে ডজনখানেকের বেশি সাক্ষাৎ হয়েছে। ফলে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে যে যোগাযোগের মাত্রা, যে কোনো পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জন্য একটি মাইলফলক।
এখন বিষয় হচ্ছে সম্পর্কে যে গতি সঞ্চার করেছে, তা এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ কতটুকু অর্জন করতে পারে সেটি একটি বিষয়।
ভূরাজনৈতিক যে বিষয়গুলো রয়েছে, রোহিঙ্গাসহ জঙ্গিবাদের সমস্যা এগুলো একযোগে মোকাবিলা করার বিষয়ে দুই দেশ ঐকমত্য হয়েছে। সব মিলিয়ে নতুন বিশ্ব পরিস্থিতিতে নতুনভাবে এগিয়ে চলার গতি সঞ্চার করেছে।
দুই দেশের নিরাপত্তার দিক থেকে এক প্রকার সামরিক সহযোগিতা রয়েছে। তা মূলত কৌশলগত দিক থেকে। বাণিজ্যের দিক থেকে বিষয়টি মাত্র শুরু হলো। ভারত নিজেই এখনও এক্ষেত্রে অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল। ফলে এটি মাত্র শুরু হয়েছে। সামনের দিনে এ খাতে বাণিজ্য সম্পর্ক কতটা বাড়বে তা সময় বলে দেবে। এর মাধ্যমে দুই দেশের একটি বোঝাপড়া তৈরি হয়েছে। দু'পক্ষই আরও পদক্ষেপ নিয়ে বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নিয়ে যেতে পারে।
যে ধরনের নীতি অবলম্বন করে চলে- 'সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, বৈরিতা কারও সঙ্গে নয়' এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রেখে চলে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের কোনো পদক্ষেপের কারণে কোনো প্রতিবেশী রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। যেখানে মিয়ানমারের মতো রাষ্ট্র ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে ঠেলে দিয়েছে। তার পরও বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণভাবে সবকিছু সমাধানের চেষ্টা করছে। দুই দেশের মধ্যে ইতোমধ্যে নিরাপত্তার দিক থেকে একটি সহযোগিতা রয়েছে। পারস্পরিক স্বার্থে ও নিরাপত্তা উন্নয়নের জন্য আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক যে নতুন হুমকি তৈরি হচ্ছে, এগুলো একসঙ্গে মোকাবিলা করার একটি দৃঢ় প্রত্যয় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আমরা লক্ষ্য করেছি।
লেখক :অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মন্তব্য করুন