- মতামত
- বিশ্বাসঘাতক
বিশ্বাসঘাতক

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিবের এই আক্ষেপে যেন দেশবাসীর হতাশাও প্রতিফলিত- 'কাকে বিশ্বাস করব?' দেশব্যাপী চলমান এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার মধ্যে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে যেখানে খোদ পরীক্ষা কেন্দ্র সচিব প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছেন, সেখানে কাকে বিশ্বাস করা যায়? পরীক্ষা-সংক্রান্ত যে কোনো অনিয়ম রোধ করার দায়িত্ব যে শিক্ষকের; তিনিই এমন অপকর্মে জড়িত! বিশ্বাস করাও কঠিন বটে। নেহাল উদ্দিন বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব লুৎফর রহমান যেভাবে প্রথম দিনই থানায় সংরক্ষিত একটি বিষয়ের প্রশ্নপত্র আনতে গিয়ে আরও পাঁচটি বিষয়ের প্রশ্নপত্র নিয়ে এসেছেন এবং অর্থের বিনিময়ে পরীক্ষার্থীদের কাছে ছড়িয়ে দিয়েছেন, তাতে ত্ার অপরাধী মনোবৃত্তিই স্পষ্ট। আমরা আশঙ্কা করি, শিক্ষক নামের ওই কলঙ্ক এবং তাঁর সহযোগীরা অতীতে একই ধরনের দুস্কর্ম করেছেন। অপরাধের বিচারের প্রশ্নে নয়; শিক্ষকের ওপর সমাজের বিশ্বাসভঙ্গের জন্যও এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া জরুরি। আমরা এও আশা করি- আটকদের শাস্তি এবং সংশ্নিষ্ট কয়েকজনের বরখাস্ত ও বদলির মধ্য দিয়েই দেশবাসীকে হতবাক করে দেওয়া এই কাণ্ডের সমাপ্তি ঘোষণা হবে না। যারা নানা মাত্রায় জড়িত ছিল এবং যাদের অবহেলায় প্রশ্ন ফাঁসের সুযোগ তৈরি হয়েছে; প্রত্যেককে জবাবদিহি করতে হবে।
স্বীকার করতে হবে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্প্রসারণের পর প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভূতপূর্ব সব পদ্ধতি উন্মোচিত হওয়ার পর সরকারও অভিনব সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। সর্বশেষ কয়েক বছর আগে নেওয়া মাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষার সাত দিন আগে থেকে দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার উদ্যোগও বাস্তবায়িত হয়েছিল। আমাদের মনে আছে, ছাপাখানা থেকে প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার যে মহামারি কিছুদিন দেখা গিয়েছিল; তাও বন্ধ করা গেছে গোয়েন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায়। পরীক্ষার কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক মিনিট আগে বিশেষত অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়াও বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে। কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের কেউ যাতে প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে ফাঁস না করেন, সে জন্য পরীক্ষার আধাঘণ্টা আগে কেন্দ্রে সবার উপস্থিতি এবং কেন্দ্র সচিবের কাছে ক্যামেরাবিহীন একটি মোবাইল ফোন ছাড়া আর সবার জন্য সব ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ভূরুঙ্গামারীর এই অঘটনে দেখা গেল, সেই কেন্দ্র সচিবই প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছেন আরও অভিনব উপায়ে।
আমরা জানি- অনেক দিনের অভিজ্ঞতা ও অনেক পক্ষের সুপারিশের ভিত্তিতে বর্তমানে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, মডারেশন থেকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যথাক্রমে ট্রেজারি ও থানার লকার পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রতিটি ধাপে প্রায় অবিশ্বাস্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। প্রশ্নপত্রগুলো যেভাবে ফয়েল কাগজে মোড়া থাকে, তাতে আগে থেকে খোলা হলে ধরা পড়া অনিবার্য। এ ছাড়া একাধিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সামষ্টিক দায়িত্বে একাধিক সেট প্রশ্নপত্র কেন্দ্রে নিয়ে পরীক্ষা শুরুর আধাঘণ্টা আগে সেট নির্ধারণী নির্দেশনার ব্যবস্থা রয়েছে; যাতে কেউ একা ফাঁস করতে না পারে। এখন দেখা যাচ্ছে, বেহুলার বাসরঘরের ছিদ্র দিয়ে সুতানালি সাপ প্রবেশের মতো করে এই নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থাতেও ঢুকে পড়েছে ফাঁসচক্র। এখন উচিত হবে পরীক্ষা ব্যবস্থার আন্তর্জাতিক পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা। আমরা দেখি, এই দেশের ইংরেজি মাধ্যমের 'ও লেভেল' কিংবা 'এ লেভেল' পরীক্ষার মাত্র কয়েক মিনিট আগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে একযোগে সরাসরি কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র পাঠানো হয়। এই ব্যবস্থা দেশীয় পাবলিক পরীক্ষাগুলোতেও অনুসরণ করা যায় না? এতে নানা ধাপের 'সংকর' নিরাপত্তার ঝুঁকি এড়ানো সহজ হবে।
অবশ্য প্রযুক্তিগত নিরাপত্তার মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করা গেলেও ভূরুঙ্গামারীর প্রধান শিক্ষকের মতো যাঁরা রাষ্ট্র ও সমাজের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন, তাঁদের নিয়ন্ত্রণের সহজ উপায় নেই। শিক্ষক নিয়োগে কাগুজে যোগ্যতার পাশপাশি নৈতিকতার মান যাচাই না করলে এবং তারপরও দায়িত্ব পালনকালীন নজরদারি অব্যাহত না রাখলে যাকেই বিশ্বাস করা হোক, বিশ্বাসভঙ্গের ঝুঁকি থেকেই যাবে।
স্বীকার করতে হবে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্প্রসারণের পর প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভূতপূর্ব সব পদ্ধতি উন্মোচিত হওয়ার পর সরকারও অভিনব সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। সর্বশেষ কয়েক বছর আগে নেওয়া মাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষার সাত দিন আগে থেকে দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার উদ্যোগও বাস্তবায়িত হয়েছিল। আমাদের মনে আছে, ছাপাখানা থেকে প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার যে মহামারি কিছুদিন দেখা গিয়েছিল; তাও বন্ধ করা গেছে গোয়েন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায়। পরীক্ষার কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক মিনিট আগে বিশেষত অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়াও বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে। কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের কেউ যাতে প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে ফাঁস না করেন, সে জন্য পরীক্ষার আধাঘণ্টা আগে কেন্দ্রে সবার উপস্থিতি এবং কেন্দ্র সচিবের কাছে ক্যামেরাবিহীন একটি মোবাইল ফোন ছাড়া আর সবার জন্য সব ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ভূরুঙ্গামারীর এই অঘটনে দেখা গেল, সেই কেন্দ্র সচিবই প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছেন আরও অভিনব উপায়ে।
আমরা জানি- অনেক দিনের অভিজ্ঞতা ও অনেক পক্ষের সুপারিশের ভিত্তিতে বর্তমানে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, মডারেশন থেকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যথাক্রমে ট্রেজারি ও থানার লকার পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রতিটি ধাপে প্রায় অবিশ্বাস্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। প্রশ্নপত্রগুলো যেভাবে ফয়েল কাগজে মোড়া থাকে, তাতে আগে থেকে খোলা হলে ধরা পড়া অনিবার্য। এ ছাড়া একাধিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সামষ্টিক দায়িত্বে একাধিক সেট প্রশ্নপত্র কেন্দ্রে নিয়ে পরীক্ষা শুরুর আধাঘণ্টা আগে সেট নির্ধারণী নির্দেশনার ব্যবস্থা রয়েছে; যাতে কেউ একা ফাঁস করতে না পারে। এখন দেখা যাচ্ছে, বেহুলার বাসরঘরের ছিদ্র দিয়ে সুতানালি সাপ প্রবেশের মতো করে এই নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থাতেও ঢুকে পড়েছে ফাঁসচক্র। এখন উচিত হবে পরীক্ষা ব্যবস্থার আন্তর্জাতিক পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা। আমরা দেখি, এই দেশের ইংরেজি মাধ্যমের 'ও লেভেল' কিংবা 'এ লেভেল' পরীক্ষার মাত্র কয়েক মিনিট আগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে একযোগে সরাসরি কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র পাঠানো হয়। এই ব্যবস্থা দেশীয় পাবলিক পরীক্ষাগুলোতেও অনুসরণ করা যায় না? এতে নানা ধাপের 'সংকর' নিরাপত্তার ঝুঁকি এড়ানো সহজ হবে।
অবশ্য প্রযুক্তিগত নিরাপত্তার মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করা গেলেও ভূরুঙ্গামারীর প্রধান শিক্ষকের মতো যাঁরা রাষ্ট্র ও সমাজের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন, তাঁদের নিয়ন্ত্রণের সহজ উপায় নেই। শিক্ষক নিয়োগে কাগুজে যোগ্যতার পাশপাশি নৈতিকতার মান যাচাই না করলে এবং তারপরও দায়িত্ব পালনকালীন নজরদারি অব্যাহত না রাখলে যাকেই বিশ্বাস করা হোক, বিশ্বাসভঙ্গের ঝুঁকি থেকেই যাবে।
বিষয় : সম্পাদকীয় বিশ্বাসঘাতক
মন্তব্য করুন