প্রতি বছরের মতো আজ তথ্য অধিকার দিবস পালিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে কেন্দ্র থেকে উপজেলা পর্যন্ত গৃহীত হয়েছে নানা কর্মসূচি। এবার মূল প্রতিপাদ্য- 'তথ্যপ্রযুক্তির যুগে জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত হোক'। তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ এবং এ-সংশ্নিষ্ট বিধি ও প্রবিধি প্রতিটিই তথ্যপ্রযুক্তিবান্ধব। সারাবিশ্বেই এখন তথ্যপ্রযুক্তির জয়জয়কার। উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির সোপান। বাংলাদেশেও জনগণের তথ্যে প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। আইন ও বিধিমালাও এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়ক।
আমাদের আইনটির মূল লক্ষ্যই হলো তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করা। জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা, কর্তৃপক্ষের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি বৃদ্ধি করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। এ জন্য আইনে তথ্য গোপনকে নিরুৎসাহিত করে তথ্যকে সহজলভ্য করতে নানা বিধিবিধানের অবতারণা করা হয়েছে। দুটি পদ্ধতিতে নাগরিকের তথ্য পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকবে। একটি আবেদনের ভিত্তিতে, অন্যটি কর্তৃপক্ষ স্বপ্রণোদিত হয়ে তথ্য অবারিত করবে। উভয় পদ্ধতিতেই নাগরিকের তথ্যপ্রাপ্তি সহজলভ্য করার জন্য তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা, প্রচার ও প্রকাশকে আইনে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে।
তথ্য অধিকার আইন ও বিধিমালার আওতায় জনগণের তথ্যপ্রাপ্তি ও প্রদানে ই-মেইলের ব্যবহার, সব কর্তৃপক্ষের ইন্টারনেট সংযোগ সার্বক্ষণিক সচল রাখা, এমনকি অভ্যন্তরীণ, অন্যান্য দপ্তর, সংস্থা ও জনগণের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ইন্ট্রানেট ও এক্সট্রানেট সংযোগ রাখা, ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে তথ্যের বিন্যাস, রক্ষণ ও পরিচালনা যেমন- মাইক্রোফোন বা কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনুলিপি তৈরি ও সংরক্ষণ; একই ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার ও অনুসরণ; নথি বা জনগণের তথ্যের আবেদনের গতিবিধি নিরূপণে ফাইল ট্রাকিং সিস্টেম ব্যবহার; ইলেকট্রনিক ফাইল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম; ইলেকট্রনিক নোটিং-ফাইলিং ও সিগনেচার ব্যবস্থা; কমপ্যাক্ট ডিস্ক (সিডি) তৈরি ও সরবরাহকরণ এবং ইলেকট্রনিক ব্যবস্থায় তথ্যউপাত্তসহ শ্রেণিবিন্যাসকৃত নথি ধারণ; স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রদান ও প্রকাশের কার্যকর মাধ্যম হিসেবে ওয়েবসাইটের আবশ্যিক ব্যবহার এবং হালনাগাদকরণ; তথ্যের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা ইত্যাদি বিষয়ক সুনির্দিষ্ট বিধিবিধান রয়েছে।
তথ্য কমিশন অন্য স্টেকহোল্ডারদের সহযোগিতায় তথ্য আদান-প্রদানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ও চর্চা বৃদ্ধিতে নানা কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। অনলাইনে আবেদন গ্রহণ ও তথ্য প্রদান, অভিযোগ শুনানি ও নিষ্পত্তিকরণ, অনলাইনে প্রশিক্ষণ প্রদান, ভিডিও কনফারেন্সিং ইত্যাদি ব্যাপকভাবে প্রচলন করেছে। সব কর্তৃপক্ষের জন্য ওয়েবসইট বাধ্যতামূলক করার ফলে বাংলাদেশে এখন প্রায় ৫০,০০০ ওয়েবসাইট সংবলিত সর্ববৃহৎ ওয়েব পোর্টাল রয়েছে। প্রায় প্রতিটিতেই জনগণের তথ্য অধিকার সংক্রান্ত দিকনির্দেশনামূলক একটি কর্নার রয়েছে। গত দুই বছরে করোনাকালে তথ্য কমিশনে ৪৫৭টি অভিযোগ অনলাইনে শুনানি ও নিষ্পত্তি হয়েছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ফলে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, দক্ষতা উন্নয়ন, কর্মসংস্থানসহ জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে মানুষের তথ্যপ্রাপ্তির সুযোগ প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন নীতি-সহায়তার ফলে বর্তমানে সব সরকারি দপ্তরে ই-সেবা চালু, ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনের সহজলভ্যতা নিশ্চিত হয়েছে। দেশে ৩ হাজার ৮ শতাধিক ইউনিয়নে রয়েছে উচ্চগতির (ব্রডব্যান্ড) ইন্টারনেট। ৩৩৩, ৯৯৯, ১৬২৬৩সহ বিভিন্ন কলসেন্টার সার্ভিসের মাধ্যমে নাগরিকরা ফোন করেই প্রয়োজনীয় তথ্য পাচ্ছে। ভূমিসেবা ডিজিটাইজেশন করার ফলে ই-পর্চা, ই-নামজারি, ই-ভূমি উন্নয়ন করসহ নানাবিধ ভূমি-সংক্রান্ত তথ্য জনগণ ঘরে বসেই পাচ্ছে। সরকার এক সেবা বা ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেবা চালু করেছে, যা স্বল্প সময়, স্বল্প ব্যয়ে এমনকি অফিসে না গিয়েও তথ্যসহ সেবাপ্রাপ্তির সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে উপজেলা পর্যায়ে 'তথ্য আপা' প্রকল্পের অধীন 'তথ্যসেবা কর্মকর্তা' নিয়োগদানের মাধ্যমে বাড়িতে থেকেই মহিলাদের প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রাপ্তির পথ সহজ করা হয়েছে। এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তথ্য আদান-প্রদানে ব্যবহার করা হচ্ছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম।
মরতুজা আহমদ : প্রধান তথ্য কমিশনার