- মতামত
- সংকটকালে আমাদের দিশারি
সংকটকালে আমাদের দিশারি

বঙ্গবন্ধুকন্যার এবারের জন্মদিন এমন এক সময় এসেছে যখন চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য পুরো জাতি তাঁর কল্যাণমুখী নেতৃত্বের ওপর নির্ভর করছে। সত্যি বলতে তাঁর নান্দনিক, গণমুখী নেতৃত্ব আমাদের প্রধান সামাজিক পুঁজি। মনে পড়ছে, ২০০৯ সালে তিনি যখন দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসেন তখন বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ছিল ১০২ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার। সেই অর্থনীতি ২০২১ সালে এসে দাঁড়ায় ৪১৬ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলারে। ২০০৯ সালে যখন তিনি ক্ষমতাসীন হন তখন সারাবিশ্বই খাবি খাচ্ছিল আর্থিক মন্দায়। বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ করে সেই সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দিতে পেরেছিল। নেতৃত্বের গুণেই এই অসাধ্য সাধন করা সম্ভব হয়েছিল। আজও বিশ্ব এক মহা অর্থনৈতিক সংকটে। করোনা সংকটের রেশ কাটতে না কাটতেই চেপে বসেছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ।
ইতোমধ্যে কভিড মহামারি মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্বের অধিকাংশ দেশের চেয়ে বেশি দক্ষতা দেখিয়েছে। নিক্কেই কভিড-১৯ সূচকের ফলাফল বলছে, মহামারি মোকাবিলায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো করেছে বাংলাদেশ। পুরো বিশ্বে এ বিচারে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। সেই একই রকম মুনশিয়ানার সঙ্গে আমরা এখন লড়ে যাচ্ছি ইউক্রেন যুদ্ধের কুফল থেকে দেশের মানুষকে বাঁচাতে। প্রধানমন্ত্রী আগেভাগেই কৃচ্ছ্রসাধন এবং কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর কৌশল গ্রহণ করেছেন। খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারে যা যা দরকার তাই করছেন। মূল্যস্ম্ফীতির চাপ থেকে খানিকটা হলেও রেহাই দেওয়ার জন্য সামাজিক সুরক্ষা বলয় আরও সুসংহত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কোটিখানেক পরিবারের জন্য সুলভে খাদ্য সরবরাহের কার্ড, খোলাবাজারে খাদ্য বিক্রিসহ নানামাত্রিক সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। মানতে হবে যে, সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী মহল বৃহত্তর জনচাহিদার প্রতি সময়োচিত সংবেদনশীলতা দেখিয়ে যে উদ্যোগগুলো নিচ্ছে; মাঠ পর্যায়ে সেগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু ব্যবস্থাপনাগত চ্যালেঞ্জ এখনও রয়ে গেছে। তবে বঙ্গবন্ধুকন্যা আমাদের নেতৃত্বে রয়েছেন বলে এসব চ্যালেঞ্জ আমরা পর্যায়ক্রমে অতিক্রম করতে পারব বলে বিশ্বাস রাখি। আমাদের সাধ্যমতো উন্নয়ন কর্মসূচি যাতে ঠিকমতো বাস্তবায়ন হয় তার তাগিদ দিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। অস্বীকার করার উপায় নেই, বিগত ১২ বছরে আড়াই কোটি গরিব মানুষ দারিদ্র্যরেখার নিচে থেকে ওপরে উঠে এসেছে। দারিদ্র্য নিরসনের এক রোল মডেলে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। উচ্চ প্রবৃদ্ধি এবং অন্তর্ভুক্তিকে যুগপৎ গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। বর্তমান সংকট সত্ত্বেও এডিবি বলছে, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ২০২২ সালে হবে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০২৩ সালে তা হবে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। শুধু আইএমএফ নয়; আন্তর্জাতিক রেটিং এজেন্সিগুলোও বলছে, বাংলাদেশ কোনো বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়বে না। বাংলাদেশের এমন সাফল্যের পেছনের নিয়ামকগুলো সম্পর্কে একটি বিশ্বখ্যাত সাময়িকীকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন- 'বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথেই আমরা সব সময় স্বল্প- ও মধ্যমেয়াদি উন্নয়ন লক্ষ্য নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। ...' ওই সাক্ষাৎকারে তিনি যথার্থই সাক্ষরতার হার বাড়ানো, গড় আয়ু বৃদ্ধি, খাদ্য উৎপাদন, পানি ও পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জনগুলো স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। সত্যি বলতে গত ১৩-১৪ বছর ধরে তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার মানুষের ওপর বিনিয়োগকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে বলেই এ সময়ে শুধু আমাদের দারিদ্র্যহারই কমেনি; পাশাপাশি জনগণের ক্ষমতায়নও নতুন মাত্রা পেয়েছে। ক্ষমতায়িত এই জনতাই আমাদের সামষ্টিক অর্থনৈতিক রূপান্তরের মুখ্য চালিকা শক্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে।
বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বগুণেই শত বাধা ডিঙিয়ে আমাদের আর্থসামাজিক অগ্রযাত্রা নতুন মাত্রা পেয়েছে। শুধু তাই নয়; আমাদের আগামীর সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপদান এবং সে পথে এগোতে যে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে, সে বিষয়েও তিনি একই রকম সংবেদনশীল। তাই তো 'ডিজিটাল বাংলাদেশ'-এর সফল অভিযান শেষ করেই তিনি ক্ষান্ত হচ্ছেন না; এখন হাতে নিয়েছেন 'স্মার্ট বাংলাদেশ' কর্মসূচি। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সার্বিক সহযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমে পুরো অঞ্চলের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে আরও টেকসই করার ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
এ কথা ঠিক, '৭৫-এর আগস্টে আমাদের উজ্জ্বলতম নক্ষত্রটি বিশ্বাসঘাতকদের আচমকা আঘাতে হঠাৎ খসে পড়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়লেও তিনি রয়েছেন আমাদের হৃদয়ে ও চেতনায়। তাই অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগ-তিতিক্ষার পর আরেকটি নক্ষত্র উদিত হয়। তিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। যদিও তাঁর চলার পথে পাথর বিছানো; তবুও সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের হৃদয় ঠিকই জয় করতে পেরেছেন। সামনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার সময়ও প্রধানমন্ত্রীর প্রাজ্ঞ নেতৃত্ব আমাদের প্রধান পাথেয় হয়ে থাকবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
ড. আতিউর রহমান :বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর
ইতোমধ্যে কভিড মহামারি মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্বের অধিকাংশ দেশের চেয়ে বেশি দক্ষতা দেখিয়েছে। নিক্কেই কভিড-১৯ সূচকের ফলাফল বলছে, মহামারি মোকাবিলায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো করেছে বাংলাদেশ। পুরো বিশ্বে এ বিচারে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। সেই একই রকম মুনশিয়ানার সঙ্গে আমরা এখন লড়ে যাচ্ছি ইউক্রেন যুদ্ধের কুফল থেকে দেশের মানুষকে বাঁচাতে। প্রধানমন্ত্রী আগেভাগেই কৃচ্ছ্রসাধন এবং কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর কৌশল গ্রহণ করেছেন। খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারে যা যা দরকার তাই করছেন। মূল্যস্ম্ফীতির চাপ থেকে খানিকটা হলেও রেহাই দেওয়ার জন্য সামাজিক সুরক্ষা বলয় আরও সুসংহত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কোটিখানেক পরিবারের জন্য সুলভে খাদ্য সরবরাহের কার্ড, খোলাবাজারে খাদ্য বিক্রিসহ নানামাত্রিক সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। মানতে হবে যে, সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী মহল বৃহত্তর জনচাহিদার প্রতি সময়োচিত সংবেদনশীলতা দেখিয়ে যে উদ্যোগগুলো নিচ্ছে; মাঠ পর্যায়ে সেগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু ব্যবস্থাপনাগত চ্যালেঞ্জ এখনও রয়ে গেছে। তবে বঙ্গবন্ধুকন্যা আমাদের নেতৃত্বে রয়েছেন বলে এসব চ্যালেঞ্জ আমরা পর্যায়ক্রমে অতিক্রম করতে পারব বলে বিশ্বাস রাখি। আমাদের সাধ্যমতো উন্নয়ন কর্মসূচি যাতে ঠিকমতো বাস্তবায়ন হয় তার তাগিদ দিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। অস্বীকার করার উপায় নেই, বিগত ১২ বছরে আড়াই কোটি গরিব মানুষ দারিদ্র্যরেখার নিচে থেকে ওপরে উঠে এসেছে। দারিদ্র্য নিরসনের এক রোল মডেলে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। উচ্চ প্রবৃদ্ধি এবং অন্তর্ভুক্তিকে যুগপৎ গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। বর্তমান সংকট সত্ত্বেও এডিবি বলছে, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ২০২২ সালে হবে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০২৩ সালে তা হবে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। শুধু আইএমএফ নয়; আন্তর্জাতিক রেটিং এজেন্সিগুলোও বলছে, বাংলাদেশ কোনো বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়বে না। বাংলাদেশের এমন সাফল্যের পেছনের নিয়ামকগুলো সম্পর্কে একটি বিশ্বখ্যাত সাময়িকীকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন- 'বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথেই আমরা সব সময় স্বল্প- ও মধ্যমেয়াদি উন্নয়ন লক্ষ্য নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। ...' ওই সাক্ষাৎকারে তিনি যথার্থই সাক্ষরতার হার বাড়ানো, গড় আয়ু বৃদ্ধি, খাদ্য উৎপাদন, পানি ও পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জনগুলো স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। সত্যি বলতে গত ১৩-১৪ বছর ধরে তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার মানুষের ওপর বিনিয়োগকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে বলেই এ সময়ে শুধু আমাদের দারিদ্র্যহারই কমেনি; পাশাপাশি জনগণের ক্ষমতায়নও নতুন মাত্রা পেয়েছে। ক্ষমতায়িত এই জনতাই আমাদের সামষ্টিক অর্থনৈতিক রূপান্তরের মুখ্য চালিকা শক্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে।
বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বগুণেই শত বাধা ডিঙিয়ে আমাদের আর্থসামাজিক অগ্রযাত্রা নতুন মাত্রা পেয়েছে। শুধু তাই নয়; আমাদের আগামীর সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপদান এবং সে পথে এগোতে যে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে, সে বিষয়েও তিনি একই রকম সংবেদনশীল। তাই তো 'ডিজিটাল বাংলাদেশ'-এর সফল অভিযান শেষ করেই তিনি ক্ষান্ত হচ্ছেন না; এখন হাতে নিয়েছেন 'স্মার্ট বাংলাদেশ' কর্মসূচি। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সার্বিক সহযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমে পুরো অঞ্চলের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে আরও টেকসই করার ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
এ কথা ঠিক, '৭৫-এর আগস্টে আমাদের উজ্জ্বলতম নক্ষত্রটি বিশ্বাসঘাতকদের আচমকা আঘাতে হঠাৎ খসে পড়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়লেও তিনি রয়েছেন আমাদের হৃদয়ে ও চেতনায়। তাই অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগ-তিতিক্ষার পর আরেকটি নক্ষত্র উদিত হয়। তিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। যদিও তাঁর চলার পথে পাথর বিছানো; তবুও সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের হৃদয় ঠিকই জয় করতে পেরেছেন। সামনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার সময়ও প্রধানমন্ত্রীর প্রাজ্ঞ নেতৃত্ব আমাদের প্রধান পাথেয় হয়ে থাকবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
ড. আতিউর রহমান :বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর
মন্তব্য করুন