- মতামত
- সময় গেলে
সময় গেলে
এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে শাসক দল আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং তা থেকে এমনকি প্রাণঘাতী সংঘর্ষের ঘটনা মাঝেমধ্যেই সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়। এসব বিষয়ে এ সম্পাদকীয় স্তম্ভে আমরা বহুবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। অপরাধীদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দলীয় নেতৃত্বের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত লোকদের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু আমাদের সেসব উদ্বেগ ও আহ্বান যে অনেকাংশে অরণ্যে রোদন- তারই ইঙ্গিত দেয় মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের চরাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে বিরাজমান শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের মধ্যকার সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা।
মঙ্গলবার সমকালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের প্রার্থিতা নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই নেতার মধ্যে; যাঁদের একজন বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান, আরেকজন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান; যে বিরোধ তৈরি হয় তার জের এখনও চলছে। তারই অংশ হিসেবে সাবেক চেয়ারম্যানের আশীর্বাদপুষ্ট মিল্টন বাহিনী প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এলাকায় মহড়া দিচ্ছে এবং প্রতিপক্ষের লোকজনের বাড়িতে হামলা করছে। এর ফলে এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীষণ উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলো, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ এসব দেখেও দেখছে না বলে প্রতীয়মান। যেমন প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের উত্তরে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার 'খুব শিগগির দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে' বলে আশ্বস্ত করে বলেছেন, জেলা গোয়েন্দা সংস্থা ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে এবং অভিযুক্তদের নাম-ঠিকানা পেয়েছে। যখনই কোনো এলাকায় এ ধরনের অপরাধমূলক ঘটনা ঘটে, তখনই সংশ্নিষ্ট পুলিশ কর্তাদের মুখে এ ধরনের আশ্বাসবাণী শুনে থাকি, যেগুলোর বেশিরভাগ কার্যক্ষেত্রে ফাঁপা বলে প্রমাণিত। মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের ওই আশ্বাসবাণীও যে এ রকম কিছু নয়- তা কে নিশ্চিত করবে?
আমাদের এমন শঙ্কা প্রকাশের কারণ হলো, মোল্লাকান্দির বর্তমান সংঘাতময় পরিস্থিতি অতিসাম্প্রতিক কোনো ঘটনা নয়; দীর্ঘদিন ধরেই তা চলছে। পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে যে মিল্টন মল্লিক নিজের নামে বাহিনী বানিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর তাণ্ডব চালাচ্ছে, তা এক দিনের কোনো ঘটনা নয়। প্রতিবেদনমতে, বর্তমান চেয়ারম্যানের পক্ষে কাজ করার কারণে এ বাহিনী গোটা গ্রামের পুরুষদের বহুদিন যাবৎ বাড়িছাড়া করে রেখেছে। শুধু তাই নয়; মিল্টন নিজেও থানার পরোয়ানাভুক্ত আসামি। এত কিছুর পরও স্থানীয় পুলিশ যথাসময়ে তৎপর হয়নি কেন? হতে পারে, মিল্টনকে যারা পৃষ্ঠপোষকতা দেয় তারা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। তবে পুলিশ ও এসব অপরাধীর মধ্যে কোনো অশুভ আঁতাত যে এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে না- তা হলফ করে বলা যায় না। পুলিশ প্রশাসনকে মনে রাখতে হবে, সব নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব পালনের জন্যই জনগণের কষ্টার্জিত অর্থে তাদেরকে নিয়োগ করা হয়েছে। ফলে এ দায়িত্ব পালনে তাদের তরফ থেকে বিন্দুমাত্র অবহেলার সুযোগ নেই। তা ছাড়া তাদের এহেন উদাসীনতার কারণে মিল্টন বাহিনীর দৌরাত্ম্য চলতে থাকলে ভুক্তভোগীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যেতে পারে। এর ফলে সাধারণ মানুষও এক সময় নিজেদের হাতে আইন তুলে নিতে পারে। যার পরিণতিতে গোটা সমাজ এক ধরনের অরাজকতার মধ্যে পড়তে পারে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার নিয়ে ক্ষমতায় আসা বর্তমান সরকারের পক্ষে এমন পরিস্থিতি কখনোই কাম্য হতে পারে না।
এ প্রেক্ষাপটে মোল্লাকান্দি শুধু নয়; দেশের আর যেসব এলাকায় এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি চলছে, সবখানে অনতিবিলম্বে সরকারের হস্তক্ষেপ করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। শুধু যাদের অপরাধমূলক তৎপরতার কারণে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে, তাদের গ্রেপ্তার ও বিচারের মুখোমুখি করাই নয়; আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যেসব সদস্যের কর্তব্যে উদাসীনতার কারণে অপরাধীরা তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে, তাদেরও তদন্তপূর্বক শাস্তির আওতায় আনা জরুরি। একই সঙ্গে শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্বেরও উচিত গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে লিপ্ত দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তাদেরকে বুঝতে হবে, এসব অপরাধীর কারণে যেভাবে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে; সময় গেলে তা কোনোভাবেই পুনরুদ্ধার করা যাবে না।
মন্তব্য করুন