নির্দেশনা অমান্য করে পুলিশের পোশাক পরেই টিকটকে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও তৈরি করছে পুলিশের কতিপয় সদস্য। এসব ভিডিও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বাহিনীতে। নির্দেশনা থাকার পরও পোশাক ব্যবহার করে আপত্তিকর ও দৃষ্টিকটু ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করা সদস্যদের ওপর পুলিশের নীতিনির্ধারকরা বিরক্ত। সম্প্র্রতি বাহিনীর পোশাক পরে আপত্তিকর ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে টিকটকে আপলোড করার অভিযোগে ১৩ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলা ও ইউনিটে কর্মরত ১৩ কনস্টেবল পুলিশের ইউনিফর্ম ব্যবহার করে আপত্তিকর, দৃষ্টিকটু এবং বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়ার মতো অঙ্গভঙ্গি করে ভিডিও ধারণ করে তা টিকটকে আপলোড করেছে। এসব পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ সদরদপ্তরে সুপারিশ করেছে ডিএমপি। এই ১৩ সদস্য ডিএমপিতে কর্মরত থাকাকালীন এসব ভিডিও তৈরি করায় তাদের বিষয়ে তদন্ত করেন পুলিশের সবচেয়ে বড় এই ইউনিটের নীতিনির্ধারকরা। এর বাইরে অন্য ইউনিটে কর্মরতদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সদরদপ্তরের নির্দেশনা রয়েছে।

পুলিশের পোশাক পরে টিকটক ভিডিও তৈরি করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে দিলে বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়- এতে সন্দেহের অবকাশ নেই। পুলিশে নিয়োগ দেওয়ার পর তাদের সারদায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বাহিনীর সদস্য হিসেবে কী আচরণ করা যাবে; কী আচরণ করা যাবে না- এসব বিষয়ে প্রত্যেক সদস্যকে প্রস্তুত করা হয়। তা ছাড়া বাহিনীর পোশাক পরে কিংবা সাদা পোশাকে আপত্তিকর ভিডিও তৈরি করা যাবে না- এটি সাধারণ জ্ঞানেই বোঝার কথা। তারপরও ১৩ পুলিশ সদস্য দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। অভিযুক্ত ১৩ সদস্য সবাই পুলিশের কনস্টেবল পদমর্যাদার। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়ে নীতিনির্ধারকরা অন্যদের প্রতিও কঠোর বার্তা দিচ্ছেন বলে আমরা মনে করি।

টিকটক ভিডিও তৈরির চেয়েও বড় অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় সদস্য। ডিআইজি থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত পুলিশের অনেক সদস্য কারাগারে বন্দি আছেন এবং বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন। ব্যক্তির অপরাধের দায় বাহিনী বহন না করার দৃঢ়তার কারণেই এটা সম্ভব হচ্ছে। এর বাইরেও পুলিশের অনেক সদস্যের অপরাধের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। টিকটক-কাণ্ডে জড়ানো এসব পুলিশের পাশাপাশি অন্য অনৈতিক কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া গেলে অতীতের বদনাম ঘুচিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের কোনো কোনো সদস্য রাস্তায় গাড়ি আটকিয়ে অর্থের বিনিময়ে ছেড়ে দিলে গণপরিবহনে থাকা যাত্রীদের মধ্যে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়। টিকটক ভিডিও যেমন মানুষ হাসায়; বাহিনীর ভাবমূর্তিও প্রশ্নবিদ্ধ করে।

টিকটক করা পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো শুদ্ধি অভিযানকে স্বাগত জানাই। পাশাপাশি অদৃশ্য অপরাধে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাই। বাংলাদেশ পুলিশ আগের চেয়ে অনেক পেশাদার। প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধিতে দিন দিন সমৃদ্ধ হচ্ছে এ বাহিনী। অপরাধ বিভাগের সঙ্গে গোয়েন্দা ও বিশেষ শাখা আগে থেকেই ছিল। যুক্ত হয়েছে অ্যান্টি টেররিজম ও কাউন্টার টেররিজমের মতো বিশেষায়িত ইউনিট। এ অবস্থায় বাহিনীতে থাকা অনৈতিক কাজে জড়িতদের শনাক্তকরণের দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে। টিকটক-কাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে যে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে, পোশাক পরে বা সাদা পোশাকে থেকে অনৈতিক কাজ করে বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণকারীদের শনাক্ত করে সে অভিযানের পূর্ণতা আসুক।

মিজান শাজাহান : সমকালের সহসম্পাদক

বিষয় : টিকটক ভিডিও মিজান শাজাহান

মন্তব্য করুন