- মতামত
- ধরিত্রীর বায়ুমণ্ডলে ৮শ কোটি মানুষের প্রশ্বাস
জনসংখ্যা
ধরিত্রীর বায়ুমণ্ডলে ৮শ কোটি মানুষের প্রশ্বাস

আজ ধরিত্রী একটি বড় মাইলফলক অতিক্রম করতে যাচ্ছে। বৈশ্বিক জনসংখ্যা ৮শ কোটিতে পৌঁছবে। বাস্তবে এই সংখ্যা কখন কোন সময় পৌঁছবে, তা সঠিকভাবে জানা অসম্ভব। তবে জাতিসংঘ তার মডেলিংয়ের ভিত্তিতে এ উপলক্ষ চিহ্নিত করতে ১৫ নভেম্বর, ২০২২ তারিখটি বেছে নিয়েছে।
আবহমানকাল থেকে ধরিত্রীর বুকে জনসংখ্যা শত থেকে হাজার, হাজার থেকে লাখ, লাখ থেকে কোটি, কোটি থেকে শতকোটি, শতকোটি থেকে প্রায় সহস্র কোটি হতে চলেছে। অবশ্য জনসংখ্যা বৃদ্ধির এই হার কখনও শ্নথ, স্থবির, এমনকি ঋণাত্মকও হয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি, যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি কারণে। কিন্তু গত দুই শতকের মতো দ্রুত হারে বৃদ্ধি অতীতে কখনও ঘটেনি। যেমন প্রায় হাজার বছরের পরিক্রমায় বিশ্বের জনংখ্য ১শ কোটিতে পৌঁছেছিল ১৮০৪ সালে। কিন্তু পরবর্তী মাত্র ১শ বছরের বেশি সময় নিয়ে ১৯৩০ সালে দ্বিগুণ বা ২শ কোটি হয়ে যায়। আর গত প্রায় এক শতাব্দীতে চার গুণ হয়ে আটশ কোটিতে পৌঁছে যাচ্ছে।
বিস্ময়করভাবে, সর্বশেষ ৭শ থেকে ৮শ কোটির ঘর পূর্ণ হতে সময় লাগল মাত্র ১১ বছর! জনসংখ্যার আদি বৃদ্ধির সঙ্গে তুলনা করলে এ যেন আলোর গতিতে ছুটে যাওয়ার মতো ব্যাপার। অবশ্য প্রকৃতপক্ষে বৈশ্বিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার তুলনামূলক হ্রাস পাচ্ছে। অধিকাংশ দেশের জনসংখ্যা উর্বরতার হার প্রতিস্থাপন স্তরের নিচে চলে যাচ্ছে।
জাতিসংঘ ২০১৯ সালের পূর্বাভাস দিয়ে বলেছিল, ধরিত্রীর জনসংখ্যা বৃদ্ধি 'চূড়ায়' পৌঁছে ১১শ কোটি হতে পারে ২১০০ সাল নাগাদ। তবে সম্প্রতি তা পরিমার্জন করে আরও আগেই ঘটবে বলা হচ্ছে। অর্থাৎ ২০৮০ সালের মধ্যেই। অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জয়েন্ট রিসার্চ সেন্টার এবং ওয়াশিংটনের সিয়াটলে ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স
অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের (আইএইচএমই) দুটি পূর্বাভাস ভবিষ্যদ্বাণী করে- ২০৭০ সালের মধ্যেই তা ঘটবে। এ ধরনের পূর্বাভাস জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রজাতির গণবিলুপ্তি সীমিত করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করবে বলে আমার বিশ্বাস। আবার অনেক অঞ্চলে জনসংখ্যার ক্রমাগত হ্রাস নতুন সমস্যাও নিয়ে আসবে।
বর্তমানে বর্ধিষুষ্ণ জনসংখ্যা ধরিত্রীর জলবায়ু ও সম্পদের ওপর কতটুকু প্রভাব ফেলতে পারে তা সহজ সমীকরণের মাধ্যমে বোঝা অনেক কঠিন। তবে এর ফলে অপ্রত্যাশিত ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, তাপমাত্রা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। পৃথিবীর মোট ভূমির তিন-চতুর্থাংশ এবং সমুদ্রের দুই-তৃতীয়াংশ ইতোমধ্যে মানুষের দ্বারা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় পরিবর্তিত হয়েছে। কার্বন কনটেন্ট পরিমাপের ভিত্তিতে মানুষ এখন স্থল সব স্তন্যপায়ী প্রাণীর বায়োমাসের এক-তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী। আমাদের পশুসম্পদের ক্ষেত্রে প্রায় পুরোটাই। একইভাবে খামার করা পাখির বায়োমাস বন্য পাখির চেয়ে ৩০ গুণ। মানব সভ্যতার শুরু থেকে পৃথিবীতে জীবন্ত পদার্থের পরিমাণ অর্ধেকে নেমে এসেছে। ধরিত্রীতে জীবের পরিমাণের ওপর পরিচালিত একমাত্র শুমারি থেকে এমন বিস্ময়কর তথ্য পাওয়া গেছে।
ঠিক কত জনসংখ্যার জন্য এই পৃথিবী বসবাসযোগ্য- এমন প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক। এর সরাসরি উত্তর দেওয়া কঠিন। ২০২০ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ধরিত্রীর বর্তমান সহজাত খাদ্য ব্যবস্থা মাত্র ৩শ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারে। আশাতীতভাবে খাদ্য ব্যবস্থা যদি বৃদ্ধি বা পরিবর্তন করা হয়, তবে তা প্রায় ৮শ কোটি বিলিয়ন মানুষকে খাওয়াতে পারে। মাংসের ব্যবহার এবং খাদ্যের অপচয় কমিয়ে তা ১ হাজার কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারে। ২০৫০ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা ১ হাজার কোটিতে পৌঁছে যেতে পারে। ফলে ২০৫০ সালের পরে খাদ্যে অনিশ্চয়তা বাড়তে থাকবে।
ওদিকে জনমিতি গবেষকদের মতে, ২০৫০ সালের পর বিশ্বে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারও কমতে থাকবে। ইতোমধ্যে বিশ্ব জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ এমন এলাকায় বাস করে, যেখানে জনসংখ্যার উর্বরতার হার (নারীপ্রতি শিশুর গড় সংখ্যা) জাতিসংঘের মতে প্রতিস্থাপন স্তরের নিচে নেমে গেছে। জাপান, ইতালি, গ্রিস, পর্তুগালসহ জনসংখ্যার নিম্ন উর্বরতার বেশ কয়েকটি দেশে জনসংখ্যা ইতোমধ্যে হ্রাস পাচ্ছে। এই শতাব্দীর শেষে সব দেশের জনসংখ্যাই কমতে থাকবে। যেমন ভারতের জনসংখ্যা ২০৪৯ সালে সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন হতে পারে। এর পর কমতে কমতে ২১০০ সালের মধ্যে ১ দশমিক ১ বিলিয়নে নেমে আসতে পারে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটতে পারে।
জাতিসংঘের পূর্বাভাস অনুসারে, ২০৫০ পর্যন্ত সর্বাধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি শুধু আটটি দেশে ঘটবে- কঙ্গো, মিসর, ইথিওপিয়া, ভারত, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন ও তানজানিয়া।
জনসংখ্যা কমলে পরিবেশগত দৃষ্টিকোণ থেকে ভালো মনে হতে পারে। কিন্তু অর্থনীতির জন্য এটি একটি বড় সংকট হিসেবে দেখা দিতে পারে। যে কারণে অভিবাসনের মাধ্যমে অনেক দেশ, বিশেষ করে ধনী দেশগুলো জনসংখ্যা কমতে দেয় না। কিন্তু ভবিষ্যতে বিশ্বজুড়ে জনসংখ্যা কমতে থাকলে জনসংখ্যা হ্রাস রোধে অভিবাসনের কার্যকারিতা থাকবে না। কিছু দেশ ইতোমধ্যে জনসংখ্যা বাড়াতে ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছে। চীন 'এক সন্তান নীতি' পরিহার করেছে অনেক আগেই। এখন নানা সুবিধা দিয়ে জনসংখ্যা বাড়াতে চাচ্ছে। এর পরও সফল হচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে, ২১০০ সাল নাগাদ চীনের জনসংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসতে পারে।
যা হোক, যদি জনসংখ্যার আকার কমানোর চলমান প্রচেষ্টা কার্যকরী না হয় এবং ২১০০ সালের আগে বিশ্বে জনসংখ্যার চূড়ান্ত বৃদ্ধি ঘটে; তবে সম্পদ ও জলবায়ু রক্ষায় নয়া কৌশল গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়বে। দেখা যাচ্ছে, সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশ মানুষ কার্বন নির্গমনের প্রায় অর্ধেকের জন্য দায়ী। মানুষ সম্পদশালী বা ধনী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাংস খাওয়ার হারও বাড়ছে। যদি অন্য কিছু না পরিবর্তিত হয়, তাহলে মানুষের এই আচরণ বিশ্ব জনসংখ্যা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছার পরেও আবাসস্থল ধ্বংস এবং বন উজাড়ের দিকে পরিচালিত করবে। ফলে ধরিত্রী বৈশিষ্ট্য রক্ষায় জনসংখ্যার চেয়ে মানবসৃষ্ট সমস্যা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি কোনো জনসংখ্যার পূর্বাভাসই জলবায়ু পরিবর্তনকে বিবেচনায় না নেয়, তবে এর প্রভাব শতাব্দী ধরে আরও জটিল আকার ধারণ করবে।
ড. মো. হাসিনুর রহমান খান: অধ্যাপক, ফলিত পরিসংখ্যান, পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আবহমানকাল থেকে ধরিত্রীর বুকে জনসংখ্যা শত থেকে হাজার, হাজার থেকে লাখ, লাখ থেকে কোটি, কোটি থেকে শতকোটি, শতকোটি থেকে প্রায় সহস্র কোটি হতে চলেছে। অবশ্য জনসংখ্যা বৃদ্ধির এই হার কখনও শ্নথ, স্থবির, এমনকি ঋণাত্মকও হয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি, যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি কারণে। কিন্তু গত দুই শতকের মতো দ্রুত হারে বৃদ্ধি অতীতে কখনও ঘটেনি। যেমন প্রায় হাজার বছরের পরিক্রমায় বিশ্বের জনংখ্য ১শ কোটিতে পৌঁছেছিল ১৮০৪ সালে। কিন্তু পরবর্তী মাত্র ১শ বছরের বেশি সময় নিয়ে ১৯৩০ সালে দ্বিগুণ বা ২শ কোটি হয়ে যায়। আর গত প্রায় এক শতাব্দীতে চার গুণ হয়ে আটশ কোটিতে পৌঁছে যাচ্ছে।
বিস্ময়করভাবে, সর্বশেষ ৭শ থেকে ৮শ কোটির ঘর পূর্ণ হতে সময় লাগল মাত্র ১১ বছর! জনসংখ্যার আদি বৃদ্ধির সঙ্গে তুলনা করলে এ যেন আলোর গতিতে ছুটে যাওয়ার মতো ব্যাপার। অবশ্য প্রকৃতপক্ষে বৈশ্বিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার তুলনামূলক হ্রাস পাচ্ছে। অধিকাংশ দেশের জনসংখ্যা উর্বরতার হার প্রতিস্থাপন স্তরের নিচে চলে যাচ্ছে।
জাতিসংঘ ২০১৯ সালের পূর্বাভাস দিয়ে বলেছিল, ধরিত্রীর জনসংখ্যা বৃদ্ধি 'চূড়ায়' পৌঁছে ১১শ কোটি হতে পারে ২১০০ সাল নাগাদ। তবে সম্প্রতি তা পরিমার্জন করে আরও আগেই ঘটবে বলা হচ্ছে। অর্থাৎ ২০৮০ সালের মধ্যেই। অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জয়েন্ট রিসার্চ সেন্টার এবং ওয়াশিংটনের সিয়াটলে ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স
অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের (আইএইচএমই) দুটি পূর্বাভাস ভবিষ্যদ্বাণী করে- ২০৭০ সালের মধ্যেই তা ঘটবে। এ ধরনের পূর্বাভাস জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রজাতির গণবিলুপ্তি সীমিত করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করবে বলে আমার বিশ্বাস। আবার অনেক অঞ্চলে জনসংখ্যার ক্রমাগত হ্রাস নতুন সমস্যাও নিয়ে আসবে।
বর্তমানে বর্ধিষুষ্ণ জনসংখ্যা ধরিত্রীর জলবায়ু ও সম্পদের ওপর কতটুকু প্রভাব ফেলতে পারে তা সহজ সমীকরণের মাধ্যমে বোঝা অনেক কঠিন। তবে এর ফলে অপ্রত্যাশিত ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, তাপমাত্রা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। পৃথিবীর মোট ভূমির তিন-চতুর্থাংশ এবং সমুদ্রের দুই-তৃতীয়াংশ ইতোমধ্যে মানুষের দ্বারা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় পরিবর্তিত হয়েছে। কার্বন কনটেন্ট পরিমাপের ভিত্তিতে মানুষ এখন স্থল সব স্তন্যপায়ী প্রাণীর বায়োমাসের এক-তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী। আমাদের পশুসম্পদের ক্ষেত্রে প্রায় পুরোটাই। একইভাবে খামার করা পাখির বায়োমাস বন্য পাখির চেয়ে ৩০ গুণ। মানব সভ্যতার শুরু থেকে পৃথিবীতে জীবন্ত পদার্থের পরিমাণ অর্ধেকে নেমে এসেছে। ধরিত্রীতে জীবের পরিমাণের ওপর পরিচালিত একমাত্র শুমারি থেকে এমন বিস্ময়কর তথ্য পাওয়া গেছে।
ঠিক কত জনসংখ্যার জন্য এই পৃথিবী বসবাসযোগ্য- এমন প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক। এর সরাসরি উত্তর দেওয়া কঠিন। ২০২০ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ধরিত্রীর বর্তমান সহজাত খাদ্য ব্যবস্থা মাত্র ৩শ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারে। আশাতীতভাবে খাদ্য ব্যবস্থা যদি বৃদ্ধি বা পরিবর্তন করা হয়, তবে তা প্রায় ৮শ কোটি বিলিয়ন মানুষকে খাওয়াতে পারে। মাংসের ব্যবহার এবং খাদ্যের অপচয় কমিয়ে তা ১ হাজার কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারে। ২০৫০ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা ১ হাজার কোটিতে পৌঁছে যেতে পারে। ফলে ২০৫০ সালের পরে খাদ্যে অনিশ্চয়তা বাড়তে থাকবে।
ওদিকে জনমিতি গবেষকদের মতে, ২০৫০ সালের পর বিশ্বে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারও কমতে থাকবে। ইতোমধ্যে বিশ্ব জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ এমন এলাকায় বাস করে, যেখানে জনসংখ্যার উর্বরতার হার (নারীপ্রতি শিশুর গড় সংখ্যা) জাতিসংঘের মতে প্রতিস্থাপন স্তরের নিচে নেমে গেছে। জাপান, ইতালি, গ্রিস, পর্তুগালসহ জনসংখ্যার নিম্ন উর্বরতার বেশ কয়েকটি দেশে জনসংখ্যা ইতোমধ্যে হ্রাস পাচ্ছে। এই শতাব্দীর শেষে সব দেশের জনসংখ্যাই কমতে থাকবে। যেমন ভারতের জনসংখ্যা ২০৪৯ সালে সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন হতে পারে। এর পর কমতে কমতে ২১০০ সালের মধ্যে ১ দশমিক ১ বিলিয়নে নেমে আসতে পারে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটতে পারে।
জাতিসংঘের পূর্বাভাস অনুসারে, ২০৫০ পর্যন্ত সর্বাধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি শুধু আটটি দেশে ঘটবে- কঙ্গো, মিসর, ইথিওপিয়া, ভারত, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন ও তানজানিয়া।
জনসংখ্যা কমলে পরিবেশগত দৃষ্টিকোণ থেকে ভালো মনে হতে পারে। কিন্তু অর্থনীতির জন্য এটি একটি বড় সংকট হিসেবে দেখা দিতে পারে। যে কারণে অভিবাসনের মাধ্যমে অনেক দেশ, বিশেষ করে ধনী দেশগুলো জনসংখ্যা কমতে দেয় না। কিন্তু ভবিষ্যতে বিশ্বজুড়ে জনসংখ্যা কমতে থাকলে জনসংখ্যা হ্রাস রোধে অভিবাসনের কার্যকারিতা থাকবে না। কিছু দেশ ইতোমধ্যে জনসংখ্যা বাড়াতে ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছে। চীন 'এক সন্তান নীতি' পরিহার করেছে অনেক আগেই। এখন নানা সুবিধা দিয়ে জনসংখ্যা বাড়াতে চাচ্ছে। এর পরও সফল হচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে, ২১০০ সাল নাগাদ চীনের জনসংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসতে পারে।
যা হোক, যদি জনসংখ্যার আকার কমানোর চলমান প্রচেষ্টা কার্যকরী না হয় এবং ২১০০ সালের আগে বিশ্বে জনসংখ্যার চূড়ান্ত বৃদ্ধি ঘটে; তবে সম্পদ ও জলবায়ু রক্ষায় নয়া কৌশল গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়বে। দেখা যাচ্ছে, সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশ মানুষ কার্বন নির্গমনের প্রায় অর্ধেকের জন্য দায়ী। মানুষ সম্পদশালী বা ধনী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাংস খাওয়ার হারও বাড়ছে। যদি অন্য কিছু না পরিবর্তিত হয়, তাহলে মানুষের এই আচরণ বিশ্ব জনসংখ্যা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছার পরেও আবাসস্থল ধ্বংস এবং বন উজাড়ের দিকে পরিচালিত করবে। ফলে ধরিত্রী বৈশিষ্ট্য রক্ষায় জনসংখ্যার চেয়ে মানবসৃষ্ট সমস্যা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি কোনো জনসংখ্যার পূর্বাভাসই জলবায়ু পরিবর্তনকে বিবেচনায় না নেয়, তবে এর প্রভাব শতাব্দী ধরে আরও জটিল আকার ধারণ করবে।
ড. মো. হাসিনুর রহমান খান: অধ্যাপক, ফলিত পরিসংখ্যান, পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মন্তব্য করুন