
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, রাস্তা বন্ধ করে আর সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, সব সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের যৌথ সভায় তিনি এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগও রাস্তা বন্ধ করে আর সমাবেশ করবে না বলে জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের, যিনি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীও বটেন। এ জন্য ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের পূর্বঘোষিত শুক্রবারের কর্মসূচি বায়তুল মোকাররম থেকে মহানগর নাট্যমঞ্চে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সভা-সমাবেশ করার রাজনৈতিক অধিকার সংবিধান দিয়েছে। এক সময় পল্টন ময়দানে রাজনৈতিক দলের বড় সমাবেশ হতো। ছোট সমাবেশ হলে পুরানা পল্টন মোড়ের কাছাকাছি মুক্তাঙ্গনকে বেছে নেওয়া হতো। পল্টন ময়দান ঘিরে তৈরি করা হয়েছে খেলাধুলার একাধিক স্টেডিয়াম। মুক্তাঙ্গনেও তৈরি হয়েছে অবকাঠামো। ফলে এ দুটি স্থানে এখন সভা-সমাবেশ করার সুযোগ নেই। বেশ কয়েক বছর ধরে সভা-সমাবেশের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। এখানে আওয়ামী লীগসহ সমমনা দলগুলো তাদের বড় রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে আসছে। তবে আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি বরাবরই নয়পল্টনে তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে আসছে। এতে যান চলাচলে সমস্যার কারণে ওই পথে চলাচলকারী জনগণের চরম দুর্ভোগ হলেও কিছু বলার ছিল না। তাদের ভাষ্য, এখানে তারা নিরাপদ বোধ করেন; আর সরকারও এত দিন এ নিয়ে কিছু বলেনি। বলে রাখা দরকার, আওয়ামী লীগও বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বহু আগে থেকেই সমাবেশ করে আসছে। সম্ভবত এ কারণেই বিএনপিকেও সরকার এতদিন কিছু বলেনি।
তবে আওয়ামী লীগ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কিংবা বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে সমাবেশ করলে সড়ক বন্ধ হয় না- এমনটা ভাবার কারণ নেই। কারণ ভেতরে সমাবেশ হলেও আশপাশের সড়কে নেতাকর্মীর ভিড়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গত ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশের সময় বঙ্গবন্ধু ফোয়ারা থেকে নূর হোসেন চত্বর পর্যন্ত সড়কটি বন্ধ ছিল। সবশেষ গত ৬ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের সম্মেলনের সময় মৎস্য ভবন মোড় থেকে শাহবাগ পর্যন্ত সড়ক বন্ধ করে রাখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বঙ্গবন্ধু ফোয়ারা থেকে নূর হোসেন চত্বর পর্যন্ত সড়কটি বন্ধ ছিল সড়কে নেতাকর্মীর অবস্থান নেওয়ায়। আর ৬ ডিসেম্বর মৎস্য ভবন মোড় থেকে শাহবাগ পর্যন্ত সড়ক বন্ধ করে রাখা হয় নিরাপত্তাজনিত কারণে। ওই দিন শুধু এ সড়কটি নয়, আগের দিন ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ থেকে অফিসিয়ালি ঘোষণা দিয়ে বেশ কয়েকটি সড়ক বন্ধের কথা জানানো হয়। গত মাসে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানেও এমনটা করা হয়েছিল। খোলা ময়দানে সমাবেশ করেও যদি সড়ক বন্ধ থাকে, তাহলে লাভটা কোথায়? মৎস্য ভবন মোড় থেকে শাহবাগ পর্যন্ত সড়ক বন্ধ করে কাকরাইল মসজিদের সামনে দিয়ে ভিআইপি সড়কটি ব্যবহার করে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের পাশ দিয়ে যানবাহনগুলোকে চলতে হয়েছে। বিএনপি বলতে পারে, তারা নয়াপল্টন বন্ধ করে সমাবেশ করলে ফকিরাপুল মোড় থেকে দৈনিক বাংলা মোড় হয়ে পুরানা পল্টন দিয়ে চলতে পারে। তবে এসব যুক্তি-পাল্টা যুক্তির চেয়ে জরুরি যানজটের ঢাকা মহানগরীতে সড়ক বন্ধ করে সমাবেশ না করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা। এ জন্য ডিএমপির ডাইভারশন প্রথা বিলুপ্ত করতে হবে। সমাবেশে অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি উপস্থিত থাকলে নিরাপত্তা ছক দায়িত্বশীলরা আঁকবেন। সড়ক বন্ধের বিকল্প খুঁজে বের করে সেটা করা যেতে পারে।
ওবায়দুল কাদের সড়ক বন্ধ করে সমাবেশ না করার যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব তাঁদেরই নিতে হবে। কারণ ক্ষমতাসীন দল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলে বিরোধী দলের মধ্যেও পরিবর্তনের হাওয়া কাজ করবে। একই সঙ্গে সভা-সমাবেশ করার জন্য বিকল্প স্থান বের করার সময় এসেছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে হওয়ায় ভেতরে সমাবেশ করলেও আশপাশের সড়কে প্রভাব পড়ে। তা ছাড়া নেতাকর্মী মহানগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল সহকারে আসার সময় যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়। এই ব্যস্ত নগরীতে শুক্র-শনিবার কোনোদিনই সড়ক বন্ধ করা উচিত নয়। পূর্বাচলে বাণিজ্য মেলার মাঠটি সব দল ব্যবহারে সম্মত হলে মূল শহরে চাপ কমতে পারে।
আগেই বলেছি, সভা-সমাবেশ করার অধিকার সংবিধান দিয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অনুমতির দরকার হতেই পারে। লন্ডনে হাইড পার্ক রয়েছে। সেখানে সে দেশের নাগরিক তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কথা বলে। কিন্তু ঢাকাতে এ রকম কোনো স্থান না থাকায় পান থেকে চুন খসলেই কোনো কোনো সংগঠন সড়ক বন্ধ করে বিক্ষোভ করে। শুধু নয়াপল্টনে বিএনপি বা বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগ এটা করে, তা কিন্তু নয়। বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনও শাহবাগ, পুরানা পল্টন ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়ক এভাবে দখলে নিয়ে মাঝেমধ্যেই সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলে। রাজনীতিবিদরা যদি সড়ক বন্ধের প্রচলিত রীতি ভাঙতে পারেন, তাহলে অন্যরাও সংশোধিত হবে। এমনকি আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও কঠোর হওয়ার প্রেরণা পাবে।
রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ না করার সরকারি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। কিন্তু এ সিদ্ধান্তে ক্ষমতাসীন দলটি কত দিন অনড় থাকতে পারবে, তা সময় বলে দেবে।
বিষয় : সড়কে সমাবেশ জনদুর্ভোগ রাজনৈতিক কর্মসূচি
মন্তব্য করুন