- মতামত
- মরীচিকা
মরীচিকা
গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য আরেক দফা বৃদ্ধির লক্ষ্যে যে আয়োজন সূচিত হইয়াছে, উহাতে উদ্বিগ্ন হইবার যথেষ্ট কারণ বিদ্যমান। মঙ্গলবার সমকালের এক প্রতিবেদন অনুসারে, ইতোমধ্যে সরকারি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলি বিদ্যুতের মূল্য ২০-২৩ শতাংশ বৃদ্ধির জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসি সমীপে আবেদন জানাইয়াছে। উক্ত বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবার লক্ষ্যে রীতি অনুসারে বিইআরসি আগামী ৮ জানুয়ারি রাজধানীতে এক গণশুনানির আয়োজন করিয়াছে। ভুলিয়া যাইবার অবকাশ নাই, গত ২১ নভেম্বর বিইআরসি পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করিয়াছিল। আমাদের ইহাও স্মরণে রহিয়াছে যে, তখন কর্তাব্যক্তিরা এই বলিয়া আশ্বস্ত করিয়াছিলেন- ঐ মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব গ্রাহক পর্যায়ে পড়িবে না। এক্ষণে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির আয়োজনের মধ্য দিয়া ঐ আশ্বাস মরীচিকার ন্যায় মিলাইয়া যাইতেছে।
বিতরণ কোম্পানিগুলি বলিতেছে- পাইকারি পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধির কারণে চলতি অর্থবৎসরে বিপুল পরিমাণ লোকসান গুনিতে হইবে। ইহা হইতে পরিত্রাণে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কোনো বিকল্প নাই। কিন্তু আমরা জানি, বিদ্যুৎ বিতরণে নিয়োজিত সকল কোম্পানিই ২০২০-২১ অর্থবৎসরে বৃহদাংকের মুনাফা অর্জন করিয়াছিল। গত অর্থবৎসরেও একটি ব্যতীত সকল বিতরণ কোম্পানিরই মুনাফা বৃদ্ধি পাইয়াছে। এমতাবস্থায় কোম্পানিগুলির অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম কিঞ্চিদধিক নিয়ন্ত্রণে আনিলেই পাইকারি পর্যায়ে বর্ধিত মূল্যের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি পুষাইয়া যাইবার কথা। বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়া এই সম্পাদকীয় স্তম্ভে আমরা পূর্বে বহুবার বলিয়াছি, অলস বসিয়া থাকা বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিকে প্রতিবৎসর ক্যাপাসিটি চার্জ হিসাবে যে পরিমাণ অর্থ কোষাগার হইতে দেওয়া হয় তাহা বন্ধ; তৎসহিত সিস্টেম লস নূ্যনতম পর্যায়ে আনিতে পারিলেই বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস করা সম্ভব। গত এক দশকে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ ব্যয় হইয়াছে ৭০ সহস্র কোটি টাকা এবং সিস্টেম লস বর্তমানের ১১ শতাংশ হইতে ৬ শতাংশে নামাইয়া আনিলে বৎসরে সাশ্রয় হইবে অনূ্যন ৩৫০০ কোটি টাকা। কিন্তু হতাশাজনক বিষয়, সেই পথে না হাঁটিয়া সরকার লোকসান হ্রাসকরণের 'সহজ' পন্থা গ্রহণ করিতে যাইতেছে।
গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির আয়োজন এমন সময় দৃশ্যমান, যখন অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থাপনায় সংশ্নিষ্ট সংস্থাগুলির ব্যর্থতা এবং কিছু আন্তর্জাতিক কারণে সকল নিত্যপণ্যের মূল্য সীমাহীনভাবে বৃদ্ধি পাইয়াছে। জ্বালানি তৈলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির দরুন পরিবহন ভাড়া সম্প্রতি আরেক দফা বাড়িয়াছে। সকল কিছু মিলাইয়া জীবনযাত্রার ব্যয় বিশেষ করিয়া সীমিত ও নিম্নআয়ের মানুষের নাগালের বাহিরে চলিয়া গিয়াছে। মনে রাখিতে হইবে, বিগত দুই বৎসরের করোনা মহামারির আঘাত এই শ্রেণিসমূহের মানুষদিগের উপরেই বেশি পড়িয়াছে। কারণ এই সময়ে উহাদের অনেকে হয় জীবিকা হারাইয়াছেন নতুবা বেতন কর্তনের শিকার হইয়াছেন। যাঁহারা ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের ব্যবসায় নিয়োজিত ছিলেন, তাঁহাদেরও অনেকে মহামারির কারণে সৃষ্ট ক্ষতি অদ্যাবধি কাটাইয়া উঠিতে পারেন নাই। এই মুহূর্তে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি পাইলে শুধু যে গ্রাহকদের বাড়তি বিদ্যুৎ বিল দিতে হইবে, তাহাই নহে; জীবনযাত্রার ব্যয়েও আরেক দফা উল্লম্ম্ফন ঘটিবে। কারণ একদিকে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি সকল প্রকার শিল্প ও কৃষিপণ্যের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি করিবে; আরেকদিকে এই পরিস্থিতিকে ছুতা হিসাবে ব্যবহার করিয়া শহরাঞ্চলের বাড়ির মালিকরা বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি করিবে। আমরা মনে করি, জনগণের প্রতি নূ্যনতম দরদ পোষণকারী কোনো সরকার এহেন দুঃসহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করিতে পারে না।
ইহা অনস্বীকার্য, বিভিন্ন খাতে গত কয়েক বৎসরে যে হারে রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি বৃদ্ধি পাইয়াছে, উহার ভার বহন আমাদের জাতীয় অর্থনীতির পক্ষে বেশ কঠিন। কিন্তু ভর্তুকি কোনো দিক হইতেই খয়রাততুল্য নহে। ইহা বরং সংশ্নিষ্ট পণ্য বা সেবা জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখিবার নিমিত্তে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগবিশেষ। একান্তই ভর্তুকি হ্রাস করিতে হইলে জনস্বার্থসংশ্নিষ্টতার ভিত্তিতে ভর্তুকির জন্য অগ্রাধিকার খাতসমূহ চিহ্নিত করিতে হইবে। আর সেই অগ্রাধিকার তালিকায় বিদ্যুতের স্থান শীর্ষেই থাকিবার কথা। আমাদের প্রত্যাশা, বিইআরসি আয়োজিত আসন্ন গণশুনানিতে বরাবরের মতো অন্তত ভোক্তা অধিকারের পক্ষে ক্রিয়াশীল সংস্থা ও ব্যক্তিবর্গ এই সকল বিষয় উত্থাপন করিবেন। একটা স্বাধীন সংস্থা হিসাবে বিইআরসিও বিতরণ সংস্থাগুলির ন্যায্য যুক্তিবর্জিত বক্তব্যে প্রভাবিত না হইয়া উহার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পূর্বে ভোক্তা প্রতিনিধিদের বক্তব্য বিবেচনা করিবে।
বিতরণ কোম্পানিগুলি বলিতেছে- পাইকারি পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধির কারণে চলতি অর্থবৎসরে বিপুল পরিমাণ লোকসান গুনিতে হইবে। ইহা হইতে পরিত্রাণে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কোনো বিকল্প নাই। কিন্তু আমরা জানি, বিদ্যুৎ বিতরণে নিয়োজিত সকল কোম্পানিই ২০২০-২১ অর্থবৎসরে বৃহদাংকের মুনাফা অর্জন করিয়াছিল। গত অর্থবৎসরেও একটি ব্যতীত সকল বিতরণ কোম্পানিরই মুনাফা বৃদ্ধি পাইয়াছে। এমতাবস্থায় কোম্পানিগুলির অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম কিঞ্চিদধিক নিয়ন্ত্রণে আনিলেই পাইকারি পর্যায়ে বর্ধিত মূল্যের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি পুষাইয়া যাইবার কথা। বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়া এই সম্পাদকীয় স্তম্ভে আমরা পূর্বে বহুবার বলিয়াছি, অলস বসিয়া থাকা বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিকে প্রতিবৎসর ক্যাপাসিটি চার্জ হিসাবে যে পরিমাণ অর্থ কোষাগার হইতে দেওয়া হয় তাহা বন্ধ; তৎসহিত সিস্টেম লস নূ্যনতম পর্যায়ে আনিতে পারিলেই বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস করা সম্ভব। গত এক দশকে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ ব্যয় হইয়াছে ৭০ সহস্র কোটি টাকা এবং সিস্টেম লস বর্তমানের ১১ শতাংশ হইতে ৬ শতাংশে নামাইয়া আনিলে বৎসরে সাশ্রয় হইবে অনূ্যন ৩৫০০ কোটি টাকা। কিন্তু হতাশাজনক বিষয়, সেই পথে না হাঁটিয়া সরকার লোকসান হ্রাসকরণের 'সহজ' পন্থা গ্রহণ করিতে যাইতেছে।
গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির আয়োজন এমন সময় দৃশ্যমান, যখন অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থাপনায় সংশ্নিষ্ট সংস্থাগুলির ব্যর্থতা এবং কিছু আন্তর্জাতিক কারণে সকল নিত্যপণ্যের মূল্য সীমাহীনভাবে বৃদ্ধি পাইয়াছে। জ্বালানি তৈলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির দরুন পরিবহন ভাড়া সম্প্রতি আরেক দফা বাড়িয়াছে। সকল কিছু মিলাইয়া জীবনযাত্রার ব্যয় বিশেষ করিয়া সীমিত ও নিম্নআয়ের মানুষের নাগালের বাহিরে চলিয়া গিয়াছে। মনে রাখিতে হইবে, বিগত দুই বৎসরের করোনা মহামারির আঘাত এই শ্রেণিসমূহের মানুষদিগের উপরেই বেশি পড়িয়াছে। কারণ এই সময়ে উহাদের অনেকে হয় জীবিকা হারাইয়াছেন নতুবা বেতন কর্তনের শিকার হইয়াছেন। যাঁহারা ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের ব্যবসায় নিয়োজিত ছিলেন, তাঁহাদেরও অনেকে মহামারির কারণে সৃষ্ট ক্ষতি অদ্যাবধি কাটাইয়া উঠিতে পারেন নাই। এই মুহূর্তে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি পাইলে শুধু যে গ্রাহকদের বাড়তি বিদ্যুৎ বিল দিতে হইবে, তাহাই নহে; জীবনযাত্রার ব্যয়েও আরেক দফা উল্লম্ম্ফন ঘটিবে। কারণ একদিকে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি সকল প্রকার শিল্প ও কৃষিপণ্যের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি করিবে; আরেকদিকে এই পরিস্থিতিকে ছুতা হিসাবে ব্যবহার করিয়া শহরাঞ্চলের বাড়ির মালিকরা বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি করিবে। আমরা মনে করি, জনগণের প্রতি নূ্যনতম দরদ পোষণকারী কোনো সরকার এহেন দুঃসহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করিতে পারে না।
ইহা অনস্বীকার্য, বিভিন্ন খাতে গত কয়েক বৎসরে যে হারে রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি বৃদ্ধি পাইয়াছে, উহার ভার বহন আমাদের জাতীয় অর্থনীতির পক্ষে বেশ কঠিন। কিন্তু ভর্তুকি কোনো দিক হইতেই খয়রাততুল্য নহে। ইহা বরং সংশ্নিষ্ট পণ্য বা সেবা জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখিবার নিমিত্তে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগবিশেষ। একান্তই ভর্তুকি হ্রাস করিতে হইলে জনস্বার্থসংশ্নিষ্টতার ভিত্তিতে ভর্তুকির জন্য অগ্রাধিকার খাতসমূহ চিহ্নিত করিতে হইবে। আর সেই অগ্রাধিকার তালিকায় বিদ্যুতের স্থান শীর্ষেই থাকিবার কথা। আমাদের প্রত্যাশা, বিইআরসি আয়োজিত আসন্ন গণশুনানিতে বরাবরের মতো অন্তত ভোক্তা অধিকারের পক্ষে ক্রিয়াশীল সংস্থা ও ব্যক্তিবর্গ এই সকল বিষয় উত্থাপন করিবেন। একটা স্বাধীন সংস্থা হিসাবে বিইআরসিও বিতরণ সংস্থাগুলির ন্যায্য যুক্তিবর্জিত বক্তব্যে প্রভাবিত না হইয়া উহার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পূর্বে ভোক্তা প্রতিনিধিদের বক্তব্য বিবেচনা করিবে।
মন্তব্য করুন