
ফেসবুকে একটা লেখা পেলাম- তুমি ভাবছ, তোমার দুঃখী মুখটা দেখে কেউ খুব কষ্ট পাবে? তোমার আর্তনাদে কারও বুকটা ভারি হয়ে উঠবে?
না রে বোকা! এ পৃথিবীর মানুষের এত সময় নেই তোমার দুঃখ দেখে নিজের বুকটা ভারি করার। এ পৃথিবীতে কেউ কারও দুঃখের বোঝা নিয়ে নিজের বুকটা ভারি করতে চায় না। নিজের দুঃখের বোঝাটুকু কেবল নিজেরই বহন করে যেতে হয়।
কথাগুলো খুব সত্য। বরং উল্টো সবাই আসলে এসবে মজা নিতে ভালোবাসে। তোমার দুঃখকে পুঁজি করে হয়তো তোমাকে বোকা ভাবতে ভাবতে একটা নির্দয় আত্মতৃপ্তিতে ভোগে। আবার কখনও কখনও তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেখানোর চেষ্টা করে- তাদের চেয়ে এত পরম হিতৈষী পৃথিবীতে আর কেউ নেই। সবটাই তাদের কাছে একটা খেলা; একটা স্বার্থের রাজনীতি। সময় যত যাচ্ছে, মানুষ তত কমছে; অভিনেতা তত বাড়ছে। এখন মানুষের চেয়ে যে অভিনেতার সংখ্যা অনেক বেশি।
মানুষ এখন মানুষের আবেগ নিয়ে খেলে, দুঃখ নিয়ে খেলে, ভালোবাসা নিয়ে খেলে, বিশ্বাস নিয়ে খেলে। খেলা শেষ হলে অসহায় মানুষটাকে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলে।
মানুষ নিজে নায়ক সেজে অসহায় মানুষটাকে জোকার বানায়। তার পর তাকে একটা সার্কাসের খেলা বানিয়ে ভেতরে ভেতরে হাসে। অথচ তাদের বাইরের বিশ্বাসঘাতক চোখ দিয়ে কান্নার অভিনয় করে।
খুব স্বার্থপর এই পৃথিবী। বাণিজ্যিক পৃথিবীর মানুষ ইট-পাথরের মূল্য বোঝে; মানুষের ভেতরের আর্তনাদ, কষ্ট, দহন, জ্বালা বোঝে না। মানুষ কাগজের টাকার মূল্য বোঝে, মানুষের ভেতরের প্রতিদিন অভাবের বিরুদ্ধে লড়াইকে বোঝে না। মানুষ নিজেরটাই বেশি বোঝে; অন্যেরটা তার কাছে মূল্যহীন, যুক্তিহীন, অবাস্তব। কিংবা মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের বস্তাপচা ইমোশনের মতো।
আপনি ততক্ষণ মানুষের প্রিয়জন, যতক্ষণ কারও না কারও প্রয়োজন। তারপর আপনার স্থান ডাস্টবিনে। কারণ মানুষের আরও প্রয়োজন আছে যেগুলা মেটাতে আরও নতুন নতুন প্রিয়জন প্রয়োজন। আপনাকে প্রিয়জনের জায়গায় রেখে শুধু শুধু কেউ জায়গা নষ্ট করতে চাইবে না। ঠিক কম্পিউটারের হার্ডডিস্কের মতো। হার্ডডিস্ক পূর্ণ হয়ে গেলে যেমন মানুষ অপ্রয়োজনীয় ফাইল মুছে ফেলে; তেমনি আপনিও মুছে যাবেন সবার মনের হার্ডডিস্ক থেকে, যখন তাদের প্রয়োজন শেষ হবে।
প্রতিদিন অস্তগামী সূর্যকে দেখি। কষ্ট হয় সূর্যের জন্য। যতক্ষণ সূর্যটা আলো দেয়, উত্তাপ দেয়; ততক্ষণ এর মূল্য থাকে। সূর্য পশ্চিমে ডুবে গেলে মানুষ সূর্যকে ভুলে যায়। তখন মানুষ চন্দ্রকে আমন্ত্রণ জানিয়ে উপভোগ করে চন্দ্রের সৌন্দর্য; স্বপ্নের বীজ বোনে। এই চন্দ্র যে সূর্যের আলোয় আলোকিত- সেটা পর্যন্ত অনেকে অস্বীকার করে। এমনকি সূর্য ছাড়া যে চন্দ্রের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই- সেটাও তারা মানতে চায় না। আবার অনেকে বলে, সূর্যের চেয়ে চন্দ্রের গুরুত্বই বেশি। কারণ দিনের বেলায় তো এমনিতেই আলো থাকে; সূর্যের দরকার কী? বরং রাতের অন্ধকারে চন্দ্র আলো দিয়ে পৃথিবীকে আলোকিত করে। অথচ সূর্য ছাড়া যে দিনের কোনো অস্তিত্ব নেই; এমনকি পৃথিবীও অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে- সেটা আমাদের কল্পনায়ও নেই। অস্তগামী সূর্য কখনও মানুষের ওপর অভিমান করে না বরং রাত শেষে সহাস্যে স্বাগত জানায় নতুন প্রভাতকে নিজের আলোয় আলোকিত করে। সূর্যও আশায় বুক বেঁধে থাকে- হয়তো কখনও স্বার্থপর মানুষ তার আলোয় আলোকিত হয়ে অমানুষ থেকে মানুষ হবে। আলিঙ্গন করবে সত্যের সঙ্গে এবং স্বীকার করে নেবে সত্যের অস্তিত্ব ও স্বার্থপর মানুষদের পচে যাওয়া বিবেকে যদি আবার সত্যের ধারাবাহিক প্রবাহে স্বার্থহীন বিবেক জন্ম নেয় কখনও- সেই ভরসার চাদর পরে সূর্য আলো দিয়ে যায় জন্ম থেকে জন্মান্তরে। ঠিক যেন গোবরে পদ্মফুল ফোটার মতো। স্বপ্ন একটাই, যদি স্বার্থপর মানুষ বদলে গিয়ে স্বার্থহীন হয়; যদি প্রিয়জন সব সময় প্রিয়জন থাকে; প্রয়োজনের জন্য প্রিয়জন না হয়।
ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী :অধ্যাপক, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর
না রে বোকা! এ পৃথিবীর মানুষের এত সময় নেই তোমার দুঃখ দেখে নিজের বুকটা ভারি করার। এ পৃথিবীতে কেউ কারও দুঃখের বোঝা নিয়ে নিজের বুকটা ভারি করতে চায় না। নিজের দুঃখের বোঝাটুকু কেবল নিজেরই বহন করে যেতে হয়।
কথাগুলো খুব সত্য। বরং উল্টো সবাই আসলে এসবে মজা নিতে ভালোবাসে। তোমার দুঃখকে পুঁজি করে হয়তো তোমাকে বোকা ভাবতে ভাবতে একটা নির্দয় আত্মতৃপ্তিতে ভোগে। আবার কখনও কখনও তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেখানোর চেষ্টা করে- তাদের চেয়ে এত পরম হিতৈষী পৃথিবীতে আর কেউ নেই। সবটাই তাদের কাছে একটা খেলা; একটা স্বার্থের রাজনীতি। সময় যত যাচ্ছে, মানুষ তত কমছে; অভিনেতা তত বাড়ছে। এখন মানুষের চেয়ে যে অভিনেতার সংখ্যা অনেক বেশি।
মানুষ এখন মানুষের আবেগ নিয়ে খেলে, দুঃখ নিয়ে খেলে, ভালোবাসা নিয়ে খেলে, বিশ্বাস নিয়ে খেলে। খেলা শেষ হলে অসহায় মানুষটাকে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলে।
মানুষ নিজে নায়ক সেজে অসহায় মানুষটাকে জোকার বানায়। তার পর তাকে একটা সার্কাসের খেলা বানিয়ে ভেতরে ভেতরে হাসে। অথচ তাদের বাইরের বিশ্বাসঘাতক চোখ দিয়ে কান্নার অভিনয় করে।
খুব স্বার্থপর এই পৃথিবী। বাণিজ্যিক পৃথিবীর মানুষ ইট-পাথরের মূল্য বোঝে; মানুষের ভেতরের আর্তনাদ, কষ্ট, দহন, জ্বালা বোঝে না। মানুষ কাগজের টাকার মূল্য বোঝে, মানুষের ভেতরের প্রতিদিন অভাবের বিরুদ্ধে লড়াইকে বোঝে না। মানুষ নিজেরটাই বেশি বোঝে; অন্যেরটা তার কাছে মূল্যহীন, যুক্তিহীন, অবাস্তব। কিংবা মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের বস্তাপচা ইমোশনের মতো।
আপনি ততক্ষণ মানুষের প্রিয়জন, যতক্ষণ কারও না কারও প্রয়োজন। তারপর আপনার স্থান ডাস্টবিনে। কারণ মানুষের আরও প্রয়োজন আছে যেগুলা মেটাতে আরও নতুন নতুন প্রিয়জন প্রয়োজন। আপনাকে প্রিয়জনের জায়গায় রেখে শুধু শুধু কেউ জায়গা নষ্ট করতে চাইবে না। ঠিক কম্পিউটারের হার্ডডিস্কের মতো। হার্ডডিস্ক পূর্ণ হয়ে গেলে যেমন মানুষ অপ্রয়োজনীয় ফাইল মুছে ফেলে; তেমনি আপনিও মুছে যাবেন সবার মনের হার্ডডিস্ক থেকে, যখন তাদের প্রয়োজন শেষ হবে।
প্রতিদিন অস্তগামী সূর্যকে দেখি। কষ্ট হয় সূর্যের জন্য। যতক্ষণ সূর্যটা আলো দেয়, উত্তাপ দেয়; ততক্ষণ এর মূল্য থাকে। সূর্য পশ্চিমে ডুবে গেলে মানুষ সূর্যকে ভুলে যায়। তখন মানুষ চন্দ্রকে আমন্ত্রণ জানিয়ে উপভোগ করে চন্দ্রের সৌন্দর্য; স্বপ্নের বীজ বোনে। এই চন্দ্র যে সূর্যের আলোয় আলোকিত- সেটা পর্যন্ত অনেকে অস্বীকার করে। এমনকি সূর্য ছাড়া যে চন্দ্রের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই- সেটাও তারা মানতে চায় না। আবার অনেকে বলে, সূর্যের চেয়ে চন্দ্রের গুরুত্বই বেশি। কারণ দিনের বেলায় তো এমনিতেই আলো থাকে; সূর্যের দরকার কী? বরং রাতের অন্ধকারে চন্দ্র আলো দিয়ে পৃথিবীকে আলোকিত করে। অথচ সূর্য ছাড়া যে দিনের কোনো অস্তিত্ব নেই; এমনকি পৃথিবীও অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে- সেটা আমাদের কল্পনায়ও নেই। অস্তগামী সূর্য কখনও মানুষের ওপর অভিমান করে না বরং রাত শেষে সহাস্যে স্বাগত জানায় নতুন প্রভাতকে নিজের আলোয় আলোকিত করে। সূর্যও আশায় বুক বেঁধে থাকে- হয়তো কখনও স্বার্থপর মানুষ তার আলোয় আলোকিত হয়ে অমানুষ থেকে মানুষ হবে। আলিঙ্গন করবে সত্যের সঙ্গে এবং স্বীকার করে নেবে সত্যের অস্তিত্ব ও স্বার্থপর মানুষদের পচে যাওয়া বিবেকে যদি আবার সত্যের ধারাবাহিক প্রবাহে স্বার্থহীন বিবেক জন্ম নেয় কখনও- সেই ভরসার চাদর পরে সূর্য আলো দিয়ে যায় জন্ম থেকে জন্মান্তরে। ঠিক যেন গোবরে পদ্মফুল ফোটার মতো। স্বপ্ন একটাই, যদি স্বার্থপর মানুষ বদলে গিয়ে স্বার্থহীন হয়; যদি প্রিয়জন সব সময় প্রিয়জন থাকে; প্রয়োজনের জন্য প্রিয়জন না হয়।
ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী :অধ্যাপক, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর
মন্তব্য করুন