প্রতিবারের মতো এবারও আমন মৌসুম শেষ হওয়ার পরপরই আশঙ্কাজনক হারে কেটে নেওয়া হচ্ছে কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি। এভাবে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করার প্রবণতা ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে ফসলের ওপর। ফসল উৎপাদনে আসতে পারে বড় ধরনের বিপর্যয়। ক্রমান্বয়ে কমতে থাকবে ফসল উৎপাদন। ফলে বেশি চাষাবাদেও ফলন হবে কম। দেখা দেবে খাদ্য ঘাটতি। দেশের আনাচে-কানাচে গড়ে ওঠা বৈধ-অবৈধ ইটভাটার মালিকদের প্রলোভনে পড়ে কিছু জমির মালিক না বুঝে জমির মাটি বিক্রি করে দেন। অনেক সময় জমির মালিককে না জানিয়ে রাতের আঁধারেই কেটে নেওয়া হয় ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি। এই চক্রের সদস্যরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় প্রতিবাদ করার সাহসও পান না জমির মালিকরা। দফায় দফায় প্রতি বছর প্রশাসন কর্তৃক অভিযান চালানো হলেও কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে শীত মৌসুম শুরু হওয়ার পরপরই আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে মাটিখেকো চক্রটি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের মতে, কোনো ফসলি জমির টপ সয়েল কাটার অনুমতি কারও নেই। প্রতি বছর এ বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এর পরও বন্ধ করা যাচ্ছে না অবাধে মাটি কাটা। বিজ্ঞানের ভাষায়, জমির টপ সয়েলে সবচেয়ে ঘনত্বের জৈবিক বস্তু থাকে বলে উদ্ভিদ পৃথিবীর প্রায় ৯৫ শতাংশ খাদ্য উৎপাদনে একে সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করে।
অনেক সময় নতুন নতুন ঘরবাড়ি তৈরি করার জন্য জমির মাটি কেটে ঘর-ভিটা উঁচু করা হয়। ফলে মানুষ নিজেরাও কৃষিজমির টপ সয়েল নষ্ট করে। অনেক সময় নতুন করে রাস্তাঘাট তৈরি করার জন্য জমির মাটি কেটে নেওয়া হয়। এতে জমির যেমন গুণ নষ্ট হয়, তেমনি জমি তার নিজস্ব উর্বরাশক্তি হারায়। এক সময় তা অনুর্বর জমিতে পরিণত হয়। এ কারণে কৃষক কঠোর পরিশ্রম করেও বেশি পরিমাণে ফসল উৎপাদন করতে পারেন না। ফলে বাড়তে থাকে কৃষকের উৎপাদন খরচ। এভাবে চলতে থাকলে কৃষক ফসল উৎপাদনে অনীহা প্রকাশ করবেন। এতে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেবে। তাই খাদ্য ঘাটতি পূরণ করতে কৃষিজমির গুরুত্ব অনুধাবন করে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। বাঁচাতে হবে কৃষক, কৃষি এবং দেশকে।

ঢাকা

বিষয় : মাটি কাটা গাজী আরিফ মান্নান

মন্তব্য করুন