ঢাকা বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

প্রবাসীদের আক্ষেপ

চারদিক

প্রবাসীদের আক্ষেপ

.

তাসনিম পারভীন

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ০২:১০

বাংলাদেশের অর্থনীতি সচল রাখতে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ভূমিকা অপরিসীম বললে ভুল হবে না। বিশেষ করে বিদ্যমান টালমাটাল বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রভাব সামলাতে এই প্রবাসী আয় দারুণ ভূমিকা পালন করছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে রেমিট্যান্স প্রাপ্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিগত পাঁচটি অর্থবছরে দেশে আসা মোট রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১০২.০৩ বিলিয়ন ডলার; যা জিডিপিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। কিন্তু যারা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এত অবদান রাখছেন, তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে রাষ্ট্র কতটা ভাবছে?

প্রবাসীরা তাদের পরিবারকে ভালো রাখতে নিজের চেষ্টায়ই বিদেশে যান নানা কাঠখড় পুড়িয়ে। সেখানে গিয়েও তাদের বাস করতে হয় এক প্রকার বন্দি জীবন। কর্মক্ষেত্রে হাড়ভাঙা খাটুনি, বাসায় ফিরে রান্না, নিজের টুকিটাকি কাজ এভাবেই বেশির ভাগ প্রবাসীর দিন চলে যায়। পারতপক্ষে নিজের জন্য বাড়তি একটা পয়সা খরচ করেন না তারা, সব টাকা পাঠিয়ে দেন দেশে বসবাসরত পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটাতে। তা থেকেই রাষ্ট্রও লাভবান হয় বিপুলভাবে। তাদের ভাবনা থাকে এক সময়ে পরিবারের দায়িত্ব পালন শেষে দেশে ফিরবেন। এখানে কিছু একটা করে জীবনের বাকি সময়টা কাটিয়ে দেবেন। সে সুযোগ কি আদৌ আসবে তাদের জীবনে?

এ বিষয়ে ফ্রান্সপ্রবাসী মো. আবদুস সালামের অভিজ্ঞতা তুলে ধরা যায়। ৫৫ বছর বয়সেও ফ্রান্সের রাস্তায় ফুড ডেলিভারি কিংবা রাইড শেয়ার করছেন তিনি। সেখানে তিনি যান ১৯৯৬ সালে; ২০১৮ সালে মাতৃভূমির টানে দেশে চলে আসেন। উদ্দেশ্য ছিল জীবনের বাকি সময় পরিবারের সঙ্গে কাটাবেন। হলো তার বিপরীত। এক ঠকবাজের পাল্লায় পড়ে এতদিন প্রবাসের কষ্টার্জিত পুঁজি খোয়া গেল। একেবারে সর্বস্বান্ত হয়ে তিনি আবারও ছুটলেন প্রবাসে। এ রকম হাজারো আবদুস সালাম প্রতিনিয়ত সর্বস্বান্ত হচ্ছেন নির্ভরযোগ্য খাতে এবং নিরাপদ বিনিয়োগের সুযোগের অভাবে।

বাংলাদেশ সরকার অবশ্য রেমিট্যান্স-যোদ্ধাদের জন্য জাতীয় পেনশন স্কিমে একটা বিশেষ কর্মসূচি চালু করেছে; তবে তাঁকে কীভাবে আরও আকর্ষণীয় করা যায়, সেটিও ভাবা দরকার। আর প্রবাসীদের কর্মস্থলে অর্জিত দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা দেশে কাজে লাগানোর পাশাপাশি নিরাপদ বিনিয়োগের সুযোগ দিলে ভবিষ্যৎ ভাবনা নিয়ে তাদের বুকফাটা আর্তনাদ ও আহাজারি বহুলাংশেই লাঘব হবে।
এ ছাড়া প্রবাসীরা যাতে পাসপোর্ট, আইডি কার্ড, জন্মনিবন্ধনসহ যাবতীয় কাগজপত্র ও মেডিকেল সার্ভিসে কোনো ধরনের জটিলতার সম্মুখীন না হয়, সে জন্য প্রতিটি জেলায় বিশেষভাবে প্রবাসী সেবাকেন্দ্র নির্মাণ করা এখন সময়ের দাবি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায়– দেশের জন্য, পরিবারের জন্য আর্থিক সচ্ছলতা খুঁজতে গিয়ে এক সময় এই যোদ্ধারা তাদের শেষ নিঃশ্বাসটুকুও বিদেশেই ত্যাগ করেন। সবচেয়ে বড় সমস্যাটা তখনই তৈরি হয়। বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আকুল আবেদন, অন্তত মৃত্যুর পর একজন প্রবাসীর দেহ যাতে সম্মানের সঙ্গে দেশে আসতে পারে এবং দেশের মাটিতে শায়িত হতে পারেন সে ব্যবস্থাটা করা প্রয়োজন। বিমানবন্দরে হয়রানিমুক্ত গমনাগমন নিশ্চিত করাও তাদের অন্যতম দাবি। সবশেষে বলতে চাই, ‘প্রবাসীদের বাঁচাও, বাঁচবে দেশ।’

তাসনিম পারভীন: শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন

×