ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

‘আয়নাবাজি’র বার্তা ভয়ংকর

অন্যদৃষ্টি

‘আয়নাবাজি’র বার্তা ভয়ংকর

.

এস এম সাব্বির খান

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ২৩:৪৯ | আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১৫:১০

সম্প্রতি মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি, রাজধানীর যুবলীগ নেতা নাজমুল হাসানের পরিবর্তে মিরাজুল নামে এক ব্যক্তির সাজাভোগের তথ্য সামনে এসেছে। অর্থের বিনিময়ে মূল আসামির পরিবর্তে নিরপরাধ ব্যক্তির সাজাভোগের এই ঘটনা যেন জনপ্রিয় বাংলা চলচ্চিত্র আয়নাবাজির বাস্তব রূপায়ণ।

দেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০২০ সালে উত্তরার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এ ঘটনায় উত্তরা-পশ্চিম থানায় করা মামলার মূল আসামি রাজধানীর উত্তরা ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা নাজমুল হাসান। অপরাধ প্রমাণ হওয়ায় নাজমুলসহ ওই মামলার দুই আসামিকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। ২০২৩ সালে অর্থের বিনিময়ে নাজমুল পরিচয় নিয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করে সাজাভোগের জন্য কারাগারে যায় গাজীপুরের মিরাজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। ১১ দিন জেল খাটার পর ওই বছরের ২০ আগস্ট সে জামিনে বেরিয়ে আসে। তবে চুক্তিমতো সব টাকা পায়নি মিরাজুল। টাকা চাইতে গেলে সাজানো মাদক মামলায় পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় তাকে।

বিষয়টি জানাজানির পর গণমাধ্যমের সামনে অর্থের বিনিময়ে মূল আসামি নাজমুলের প্রক্সি হিসেবে আদালতে আত্মসমর্পণ ও সাজাভোগের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে মিরাজুল নিজেই। বিষয়টি উচ্চ আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। পরে হাইকোর্টের বিচারপতি আতাউর রহমানের একক বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে সাজার বিরুদ্ধে করা আপিলের ওপর রায়ের দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়।

সাজাভোগে মূল অপরাধীদের এমন প্রহসনের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। ১৯৮৮ সালে দুর্নীতি মামলার আসামি আনিসুজ্জামানের পরিবর্তে অর্থের বিনিময়ে ২০১৬ সালে আদালতে আত্মসমর্পণ করে সাজাভোগ শুরু করে কামাল নামে এক ব্যক্তি। চার মাসের মাথায় এ তথ্য ফাঁস হয়। ২০০৯ সালে সিলেটে একটি হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি ইকবালের পরিচয় নিয়ে প্রায় ১৪ মাস সাজাভোগ করে রিপন নামে এক ব্যক্তি। ২০১৭ সালে কারা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানতে পারে। ২০১০ সালে রাজধানীর একটি হত্যা মামলার মূল আসামি সোহাগের পরিবর্তে কারাগারে যায় হোসেন নামে এক ব্যক্তি। ২০২২ সালে সোহাগ র‍্যাবের হাতে ধরা পড়লে এ তথ্য সামনে আসে। চট্টগ্রামের একটি হত্যা মামলার আসামি কুলসুম আক্তারের হয়ে দুই বছরের বেশি সময় জেল খাটে মিনু নামে একজন। ২০২১ সালে ওই ঘটনার ওপর হাইকোর্টে শুনানিকালে পূর্ববর্তী দুই বছরে এমন ২৬টি ঘটনার উল্লেখ করেন মিনুর আইনজীবী। এমন আরও বহু উদাহরণ রয়েছে।

গত এক যুগে অপরাধ দমনে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি ক্ষেত্রকে ঢেলে সাজিয়েছে সরকার। অপরাধ তদন্ত ও অপরাধী শনাক্তে আধুনিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে উন্নত প্রযুক্তি। এর পরও কীভাবে কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে মূল আসামির পরিবর্তে অন্য ব্যক্তি কারাগারে যায়– এমন প্রশ্নের বিপরীতে একটি বিষয় সহজেই অনুমেয়, এসব ঘটনায় অপরাধীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় প্রতিটি ধাপে কারও না কারও সচেতন সম্পৃক্ততা রয়েছে। বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে প্রতারণার এমন ধৃষ্টতা দেশের আইন ও বিচারিক প্রক্রিয়ার পাশাপাশি প্রশাসনিক ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের প্রবল অনাস্থা সৃষ্টির ভয়াল বার্তা দেয়।

এস এম সাব্বির খান: সহ-সম্পাদক, সমকাল

আরও পড়ুন

×