প্রযুক্তি ও পরনির্ভরশীলতা
চারদিক

.
রহমান মৃধা
প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৪ | ২৩:৫৯
আট বিলিয়ন মানুষের বসবাস এই পৃথিবীতে। অথচ মুষ্টিমেয় মানুষ অর্থ, স্বার্থ, জ্ঞান, গুণ এবং ক্ষমতার জোরে পুরো পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করছে শাসন, শোষণ এবং গণতন্ত্রের ভাষণ দিয়ে। মেনিপুলেট করছে সারা জাহানের মানুষকে। যার ফলে আমরা দিন দিন পরনির্ভরশীল হয়ে পড়ছি।
আমরা গতি অর্জন করেছি, কিন্তু বেঁধে ফেলেছি আমাদের মন। যন্ত্র আমাদের প্রাচুর্যে ভরিয়ে দিয়েও ফেলে রেখেছে অভাবের ভেতর। আমাদের জ্ঞান করে তুলেছে হতাশাবাদী। চতুরতা করে তুলেছে কঠিন এবং রূঢ়। আমরা খুব বেশি ভাবি, অথচ অনুভব করি খুব কম। যন্ত্রের থেকেও বেশি প্রয়োজন আমাদের মানবতা। চতুরতার থেকেও বেশি দরকার আমাদের মমতা ও ভদ্রতা। এসব গুণ ছাড়া জীবন হয়ে উঠবে হিংস্র; হারিয়ে যাবে সব।
বিমান এবং রেডিও আমাদের সবাইকে খুব কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। এই আবিষ্কারগুলো চিৎকার করে বলছে মানুষের ভালোবাসা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও তাদের একতার কথা। এমনকি এ মুহূর্তেও আমার কণ্ঠ গিয়ে পৌঁছাচ্ছে পৃথিবীর লাখ লাখ মানুষের কাছে। লাখ লাখ হতাশাগ্রস্ত নারী, পুরুষ আর শিশুদের কাছে; যারা এমন এক ব্যবস্থার শিকার, যেখানে মানুষ আরেক নির্দোষ মানুষকে নির্যাতন ও বন্দি করে। যারা আমার কথা শুনতে পাচ্ছ, তাদের বলছি– ‘নিরাশ হয়ো না’।
যে দুর্ভোগ আমাদের আজ পোহাতে হচ্ছে, সেটা লোভের পরিণতি ছাড়া আর কিছুই নয়। যারা মানব জাতির উন্নতিতে ভয় পায়, তাদের তিক্ত মনের কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়।
মানুষের মনের ঘৃণা একসময় মিলিয়ে যাবে, সেই স্বৈরশাসক মারা যাবে, আর মানুষের থেকে যে ক্ষমতা সে কেড়ে নিয়েছিল, সেটা ফিরে যাবে সাধারণ মানুষের হাতে। ফলে যতদিন মানুষের মৃত্যু ঘটবে, ততদিন স্বাধীনতার কখনও বিনাশ ঘটবে না।
আমাদের প্রয়োজন এক নতুন পৃথিবী, এক সুন্দর পৃথিবী, যা মানুষকে দেবে কর্মের সুযোগ, শিশুদের দেবে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আর বয়স্কদের দেবে নিরাপত্তা। এসব দেওয়ার ওয়াদা করেই পশুরা উঠেছিল ক্ষমতার শিখরে। কিন্তু তারা মিথ্যা বলেছিল। তারা কখনোই সেই ওয়াদা পূর্ণ করেনি, কখনও করবেও না। স্বৈরাচাররা মুক্ত করেছে শুধু নিজেদেরই; ক্রীতদাস বানিয়েছে জনগণকে। এখন এসো, আমরা একত্রে লড়াই করি সেই ওয়াদা পূরণে। এসো একসঙ্গে লড়াই করি পৃথিবীটাকে মুক্ত করতে; সমস্ত জাতীয় সীমানা, সমস্ত লোভ, সমস্ত ঘৃণা এবং অসহনশীলতার ইতি টানতে। এসো একসঙ্গে লড়াই করি একই লক্ষ্যের পৃথিবী গড়তে, এমন এক পৃথিবী যেখানে বিজ্ঞান ও উন্নয়ন মানুষকে নিয়ে যাবে সুখী জীবনের দিকে।
প্রযুক্তি প্রাধান্য এবং মেনিপুলেট করছে আমাদের। আমাদের দিনকাল চলছে অনেকটা ধরো, মারো, করো, খাও নইলে মরো– এমন এক আতঙ্কের মধ্য দিয়ে! যুক্তির মধ্য দিয়েই এসেছে প্রযুক্তি। কী করে তাকে অযুক্তির মধ্য দিয়ে এত বছর পরে বলব– প্রযুক্তি আমাদের পরনির্ভরশীল করতে শুরু করেছে?
রহমান মৃধা: ফাইজার, সুইডেন
rahman.mridha@gmail.com