ঢাকা মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫

পুড়ে যাওয়া মুখগুলো

চারদিক

পুড়ে যাওয়া মুখগুলো

.

আনিসুল হোসেন তারেক

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৪ | ০০:১৮ | আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২৪ | ১৮:৪৬

বেইলি রোড ট্র্যাজেডির পেছনে গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে একাধিক রেস্টুরেন্টের বিষয়টি আমরা জানি। এবারের ফেব্রুয়ারি মাস লিপইয়ারের কারণে ছিল ২৯ দিন। চার বছর পরপর আসে এ দিনটি। ভবনটিতে কাচ্চি বিরিয়ানির জন্য প্রসিদ্ধ রেস্টুরেন্টটি ২০ শতাংশ ছাড় দিয়েছে। সপ্তাহান্তে এমনিতেই এখানে জায়গা পাওয়া যায় না, তার ওপর ২০ শতাংশ ছাড়। দল বেঁধে আসছে মানুষ। পুরো রেস্টুরেন্টে তিল ধারণের জায়গা নেই। ভবনজুড়ে রেস্টুরেন্ট, শপিংমল। কেউ এসেছেন ছেলেমেয়ে নিয়ে, কেউ তাঁর প্রিয়তমাকে নিয়ে। চার বছর পর বেঁচে থাকলে হয়তো আবার ফেব্রুয়ারির ২৯ আসবে জীবনে। মধ্যবিত্তের জীবনে ২০ শতাংশ ছাড়ে এই উপলক্ষ কি হাতছাড়া করা যায়!

হঠাৎ ঘটে গেল বীভৎস ঘটনা। আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়েছে। কাচ্চির সুবাসের সঙ্গে ধোঁয়ার গন্ধ। মুখের গ্রাস থাকল মুখে; অত্যন্ত ক্ষিপ্র গতিতে আগুন গ্রাস করে নিল ভবন। চারদিকে ছোটাছুটি। জীবন বাঁচাতে কী করণীয়, বুঝে উঠতে পারছে না কেউ। কারণ বহির্গমনের একটিই পথ; সেখানে আগুন। সিঁড়িতে রাখা গ্যাস সিলিন্ডারগুলো ততক্ষণে অগ্নিকুণ্ড। ঝরে গেল ৪৬টি প্রাণ। তাদের জীবনে আর লিপইয়ার আসবে না। কেন এই দুর্ঘটনা? দায়বদ্ধতা কার? তদন্ত কমিটি, আলোচনা-সমালোচনা হবে। এখন প্রশ্ন, ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কি সঠিক ছিল? যাদের এসব বিষয় দেখার দায়িত্ব, তারা কি তা দেখেছিলেন? না দেখে থাকলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তাদের বিরুদ্ধে? যদি অনুমোদিত ভবন হয়, যারা এর অনুমোদন দিয়েছেন অথবা তাদের অনুমোদন উপেক্ষা করে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই এ ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে দিয়েছেন, তাদের কী হবে? হয়নি আগে কখনও; তাই বলা যায়, এবারও হবে না। কিছুদিন সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে নড়াচড়া হবে। জরিমানা করা হবে ভবন মালিকদের। এই ভবনে অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডের রেস্টুরেন্ট ও দোকান ছিল। তারাই বা ক্রেতাদের নিরাপত্তা নিয়ে কী ভেবেছিল? অথবা সংশ্লিষ্ট ভবনের যিনি মালিক! সবকিছু বাদ দিলেও নৈতিকতা তো থাকা উচিত একজন সাধারণ নাগরিকের অথবা একজন ব্যবসায়ীর। 

হয়তো বলবেন, এটা তো নিছক দুর্ঘটনা। এ ধরনের দুর্ঘটনা হয়তো সবসময় হয় না। কিন্তু যখন হয় তখন একটি নয়; অনেক প্রাণ চলে যায়, যার মূল্য কখনোই পরিমাপ করা 
সম্ভব নয়, আপনি যত টাকাই ক্ষতিপূরণ দিন।

আসলে আমাদের কিছুই করার নেই। অন্য দেশে হলে হয়তো আর কিছু না হলেও সেই ব্র্যান্ডের ব্যবসায় ধস নেমে যেত। আমাদের এখানে এর কিছুই হবে না। কাচ্চির সুবাসে আমরা হয়তো ঢুকে পড়ব আরেকটি রেস্টুরেন্টে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বেরিয়ে আসব, নইলে পুড়ে যাওয়া লাশ হবো। এভাবেই 
কি চলবে?

আনিসুল হোসেন তারেক: সম্পাদক, শহীদ বাকী স্মৃতি পাঠাগার, খিলগাঁও
anisul2004@gmail.com

আরও পড়ুন

×